1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে সহিংসতা: পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘুরা উদ্বিগ্ন

পায়েল সামন্ত
২১ অক্টোবর ২০২১

মিলেমিশে থাকাটাই বাঙালির পরম্পরা৷ সম্প্রতি বাংলাদেশের সহিংসতায় আহত সেই পরম্পরা৷ তাতেই উদ্বিগ্ন পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘুরা৷ 

https://p.dw.com/p/41xsv
মুর্শিদাবাদের কান্দির প্রাক্তন বিধায়ক সফিউল আলম খান ওরফে বনু খান তিনি প্রতি বছর দুর্গামূর্তি গড়েন৷ ছবি: Payel Samanta/DW

বাংলাদেশের একের পর এক ঘটনা বিচলিত করেছে পশ্চিমবঙ্গের প্রগতিশীল মহলকে৷ এই মহলের একটা উল্লখযোগ্য অংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা৷ তারা দ্বিধাহীন কন্ঠে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের নিন্দা করেছেন৷ বাংলাদেশ সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, অপরাধীদের পাকড়াও করে শাস্তি দেওয়া হোক৷ ‘বেঙ্গল ইমাম অ্যাসোসিয়েশন' এক বিবৃতিতে এই হামলাকে ‘ইসলামবিরোধী’ তকমা দিয়ে বলেছে, ‘‘ভারতের সংখ্যালঘু হিসেবে আমরা বুঝতে পারছি আমাদের হিন্দু ভাই-বোনেরা কী অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন৷’’

বাংলার যৌথ জীবনের পরম্পরায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে কয়েকটি নাম৷ এর মধ্যে অন্যতম মুর্শিদাবাদের কান্দির প্রাক্তন বিধায়ক সফিউল আলম খান ওরফে বনু খান৷ তিনি প্রতি বছর দুর্গামূর্তি গড়েন৷ বাংলাদেশের কুমিল্লা, চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন জেলায় সেই প্রতিমাকে আক্রান্ত হতে দেখে কংগ্রেস নেতার হৃদয় রক্তাক্ত৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে যা হয়েছে তা জঘন্যতম কাজ৷ মৌলবাদীদের কোনো জাত, ধর্ম নেই৷ মানুষের মধ্যে বিভেদ করার জন্যই এই ঘটনা৷ উগ্রবাদীরা ধর্মগ্রন্থ রেখে গিয়ে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে৷ বাংলাদেশ সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে৷ এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া যাতে এখানে না হয়, আমরা চেষ্টা করছি৷’’

আমি সেই ছোটবেলা থেকেই ঠাকুর গড়ি: সফিউল আলম খান

সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় ছবি আঁকার পাশাপাশি মূর্তি গড়ায় হাতেখড়ি বনু খানের৷ ক্রমশ হাত পাকান মৃৎশিল্পে৷ এ বারও দুর্গাপ্রতিমা গড়েছেন তিনি৷ তাঁদের পারিবারিক জমি দান করেছেন দুর্গাপুজোর জন্য৷ প্রতি বছর এ বঙ্গের সবচেয়ে বড় উৎসবের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকেন৷ শুধু কি তাই, নিজে গান লেখেন, সুর দেন এবং মঞ্চে তা পরিবেশন করেন৷ সে গানেও থাকে ধর্ম কারার প্রাচীরে বজ্র হানার প্রতিজ্ঞা৷ সফিউলের ভাষায়, ‘‘আমি তো শিল্পী৷ শিল্পীর কোনো ধর্ম নেই৷ আমি বিধায়ক হওয়ার পর বিষয়টা সামনে এসেছে৷ কিন্তু আমি সেই ছোটবেলা থেকেই ঠাকুর গড়ি৷’’

মুর্শিদাবাদের সফিউলের মতো চমকে দেওয়ার কাহিনি রিষড়া পুরপ্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য শাকির আলির৷ প্রতি বছর দুর্গাপুজোর সময় আরামবাগের শ্বশুরবাড়িতে চলে আসেন তিনি৷ এই বাড়ির মেয়ে, আরামবাগের সাংসদ অপরূপা পোদ্দার তাঁর স্ত্রী৷ পারিবারিক পুজোয় তিনি শুধু অংশই নেন না, ষষ্ঠীর দিন উপবাস করে ব্রত পালন করেন৷ বাংলাদেশে মন্দির ও মণ্ডপে হামলা প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতার ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া, ‘‘এরা কি মানুষ? কোনো মানুষ এ কাজ করতে পারে না৷ এই বাংলায় সংখ্যালঘুদের উৎসবের আগে সরকার যেমন সতর্ক থাকে, বাংলাদেশ সরকারেরও সেটা করা উচিত৷’’ বিভিন্ন হিন্দু ধর্মস্থানে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন৷ দুর্গাপুজোর পর লক্ষ্মীপুজোতেও অংশ নিয়েছেন শাকির৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার ধর্ম আছে আমার মনে৷ ধর্ম আছে মন্দির, মসজিদ, গির্জায়৷ তার বাইরে আছে মানবধর্ম৷ বাংলাদেশ সেটা পালন করা হয়নি৷’’

‘ধর্ম আছে মন্দির, মসজিদ, গির্জায়৷ তার বাইরে আছে মানবধর্ম’

কলকাতার সংখ্যালঘু অধ্যুষিত আলিমুদ্দিন স্ট্রিট এলাকায় নয় বছর পর একটি দুর্গাপুজো ফের শুরু হয়েছে৷ এর উদ্যোক্তাদের মধ্যে অন্যতম ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী মহম্মদ তৌসিফ রহমান বাংলাদেশের ঘটনায় স্তম্ভিত৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাকে ঘন ঘন বাংলাদেশ যেতে হয়৷ সংখ্যালঘুরা সেখানে সমাজের সর্বস্তরে সম্পৃক্ত রয়েছেন৷ সেই দেশে এ ধরনের তাণ্ডবের খবর শুনে খুবই খারাপ লাগছে৷’’

ধর্মনিরপেক্ষ দেশ ভারতে এমন একাধিক ভ্রাতৃঘাতী হিংসার সাক্ষী থেকেছে৷ বাবরি মসজিদ থেকে সাম্প্রতিককালে দিল্লির হিংসা বুঝিয়ে দেয়, সংখ্যালঘুদের বিপন্নতা একইরকম৷ এর সঙ্গে সরাসরি রাজনীতির যোগ রয়েছে, এমনই দাবি প্রবীণ শিক্ষিকা মীরাতুন নাহারের৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সাম্প্রদায়িক বিভাজনকে এই বাংলাতেও আমরা লালন করি না, এ কথা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি? কেন্দ্র বা রাজ্যে যে শাসক দল আছে, তারা এই বিভাজনের সুযোগ নেন না, একথা জোর দিয়ে বলা যায়? সাধারণ মানুষের সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি থাকে না, অপরাজনীতি তাদের একে অপরের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করে৷ গোটা উপমহাদেশেই এটা ঘটছে৷’’

এইসব সংঘাত, স্বার্থবুদ্ধির মধ্যে শান্তিকামী মানুষের ভরসা আসানসোলের নুরানি মসজিদের ইমাম ইমদাদুল্লা রশিদির মতো ব্যক্তিত্ব৷ ২০১৮ সালে হিংসার কবলে পুত্রকে হারাবার পর যিনি বলেছিলেন, ‘‘প্রতিহিংসা নয়৷ ইসলাম কখনো হিংসার শিক্ষা দেয় না৷ আর কাউকে যেন এভাবে মরতে না হয়৷’’

গত বছর প্রকাশিত ছবিঘরটি দেখুন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান