1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রথম আলো সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা: চাই সুবিচার

২০ জানুয়ারি ২০২০

আদালতের কাছে সব সময়ই আমরা সুবিচার প্রত্যাশা করি৷ সরকারের কাছে চাই নিরপেক্ষ অবস্থান৷ প্রথম আলোর মতো সংবাদ মাধ্যমের কাছে সবাই সব সময়ই আশা করে সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতা৷ কোনো জায়গায় বড় প্রশ্ন উঠলে আমরা হতাশ হই, শঙ্কিত হই৷

https://p.dw.com/p/3WTZB
Matiur Rahman Journalist in Bangladesh
ছবি: GNU/Faizul Latif Chowdhury

সুবিচার, নিরপেক্ষতা এবং দায়িত্বশীলতা বাস্তবতার নিরিখে পর্যালোচনা করলে অনেক ক্ষেত্রে নিতান্তই কয়েকটি বর্ণে আবদ্ধ শব্দ হয়ে থাকে৷ ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করি বলে আমরা জানি, আদালত ছিল, আছে, থাকবে; আবার এই সত্যও বাংলাদেশের ইতিহাসেই লেখা থাকবে যে, যুদ্ধাপরাধের বিচারের অপেক্ষায় আমাদের দিন, মাস নয়, দশকের পর দশক অপেক্ষায় কেটেছে৷

মামলা হয়েছে, কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর সেই মামলা আর এগোয়নি৷

বঙ্গবন্ধু হত্যাসহ আরো অনেক মামলার ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য৷

সরকারের সক্রিয় এবং দৃশ্যমান সদিচ্ছায় অনেক মামলাই গতি পেয়েছে, নিষ্পত্তিও হয়েছে৷

প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানসহ  পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলার প্রসঙ্গে এভাবে অতীত টেনে আনার উদ্দেশ্য শুধু বাস্তব পরিস্থিতি মনে করিয়ে দেয়া এবং এমন বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে সবার প্রতি স্বাভাবিক সুবিচার প্রত্যাশা করা৷

প্রভাবমুক্ত বিচারিক প্রক্রিয়া এবং তার মাধ্যমে সুবিচারই একান্ত কাম্য৷

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ এবং সর্বশেষ পরিস্থিতি আমরা প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকেই তুলে ধরছি৷ দেশের জনপ্রিয় দৈনিকটি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ‘‘ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র নাইমুল আবরারের মৃত্যুর ঘটনায় অবহেলার অভিযোগে করা মামলায় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানকে চার সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট৷ এরপর মতিউর রহমানকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে৷ জামিনের আবেদন করলে তা বিচারিক আদালতকে বিবেচনা করতে বলা হয়েছে৷''

মূল ঘটনা এবং মামলার প্রেক্ষাপটটাও মনে রাখা দরকার৷

ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর প্রতিবেদনে এর উল্লেখ রয়েছে৷ তারা লিখেছে, ‘‘মোহাম্মদপুরে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে ক্যাম্পাসে এক অনুষ্ঠানে গত ১ নভেম্বর বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় নবম শ্রেণির ছাত্র আবরার রাহাত৷ মহাখালীর ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা৷ ওই অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল প্রথম আলোর কিশোর সাময়িকী কিশোর আলো৷ প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান কিশোর আলোরও প্রকাশক; আর কিশোর আলোর সম্পাদক হলেন আনিসুল হক৷''

একই প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়েছে, ‘‘সেদিন থানায় অপমৃত্যুর মামলার পর ময়নাতদন্ত ছাড়াই রাহাতের বাবা মুজিবুর ছেলের লাশ নিয়ে যান বলে মোহাম্মদপুর থানার তখনকার ওসি জি জি বিশ্বাস জানিয়েছিলেন৷ পরে নোয়াখালীতে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করা হয় রাহাতকে৷এদিকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার জন্য কিশোর আলো কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করার পাশাপাশি কাছের এত হাসপাতাল থাকতে দূরের হাসপাতালে রাহাতকে নেওয়া এবং মৃত্যুর পরও অনুষ্ঠান চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা ওঠে৷ ''

সমালোচনা যে এক পর্যায়ে বিক্ষোভে রূপ নেয় সেই তথ্য জানিয়ে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অনলাইন নিউজ পোর্টালটি লিখেছে, ‘‘সমালোচনার মুখে কিশোর আলো কর্তৃপক্ষ জানায়, ওই অনুষ্ঠানের অংশীদার ছিল ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, অনুষ্ঠানে তাদের একটি মেডিকেল ক্যাম্প ছিল, ওই ক্যাম্পের চিকিৎসকের পরামর্শেই রাহাতকে ইউনিভার্সেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল৷ আর রাহাতের মৃত্যুর খবর পাওয়ার আগেই অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গিয়েছিল৷ তবে এরপরও সমালোচনার পাশাপাশি ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলতে থাকে, প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন হয়, বিষয়টি আলোচনায় ওঠে মন্ত্রিসভার বৈঠকেও৷ তার মধ্যেই আবরারের বাবা মো. মুজিবুর রহমান গত ৬ নভেম্বর প্রথম আলো সম্পাদকসহ অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনের বিরুদ্ধে আদালতে এ মামলা করেন৷ সেখানে দণ্ডবিধির ৩০৪ (ক) ধারায় অবহেলার কারণে মৃত্যুর অভিযোগ আনা হয়৷''

মামলাটি বিচারাধীন৷ সুতরাং এ বিষয়ে আদালত ছাড়া বিশেষ কিছু বলার এখতিয়ার কারোই নেই৷

Ashish Chakraborty
আশীষ চক্রবর্ত্তী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/T. Mehedi

তবে ছাত্রলীগের নির্যাতনে নিহত বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে জোরদার আন্দোলন আমরা দেখেছি৷সংবাদমাধ্যম এ সংক্রান্ত সব খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেছে৷ পরবর্তীতে অভিযুক্তরা গ্রেপ্তার হয়েছেন৷ বুয়েট থেকে তাদের বহিস্কার করা হয়েছে৷ সবই আমরা জানি এবং সুবিচার প্রতিষ্ঠায় সবার সব উদ্যোগের আমরা প্রশংসা করি৷

নাইমুল আবরারের মৃত্যুর জন্য যে ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষ যতটা দায়ী সেই অনুপাতে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও সকলের কাম্য৷

 নাইমুল আবরারের বাবা প্রথম আলো সম্পাদকসহ অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা কয়েকদিন পরে করতেই পারেন৷ আইনে কোনো বাধা নেই৷

বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনাও হতেই পারে৷ আইনের দৃষ্টিতে তা-ও অন্যায় নয়৷

আমরা শুধু একটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই৷ ‘প্রথম আলো সম্পাদকসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তারের আদেশ' শিরোনামে গত ১৬ জানুয়ারি নাঈমুল আবরার হত্যা মামলার অগ্রগতির খবর প্রকাশ করেছিল ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগ৷

পরের দিন ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগেরই আরেকটি খবরের শিরোনাম ছিল, ‘‘সগিরা মোর্শেদের জন্য ৩০, সাগর-রুনি, তনু, মিতুর জন্য কত বছর?''

আমাদের খুব ছোট্ট চাওয়া৷

নাইমুল আবরারের বাবা এবং প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানসহ মামলার সব বিবাদী যেন সুবিচার পান৷

আমরা চাই, ডয়চে ভেলেতে কাজ করে যাওয়া সাংবাদিক সাগর ও তার সাংবাদিক স্ত্রী মেহেরুন রুনির হত্যামামলা নিয়েও মন্ত্রিসভায় আন্তরিক আলোচনা হোক৷

সাগর-রুনি এবং তনু, মিতুসহ অনেকদিন ধরে ঝুলে থাকা অন্য মামলাগুলোও স্বাভাবিক গতি পাক, নিষ্পত্তির দিকে এগিয়ে যাক৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য