কিয়েভ থেকে ফিরে গেছে রাশিয়ার সেনা। কিন্তু পূর্ব ইউক্রেনের বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে সেনা সাজাতে শুরু করেছে রাশিয়া। ইউক্রেন সংকট নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসে আলোচনা করার সময় মার্কিন সেনা অফিসার জেনারেল মার্ক মিলে বলেছেন, আপাতত ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। অন্তত এক বছর এই যুদ্ধ চলবে। তার মতে, যে সমস্ত দেশ ইউক্রেনের পাশে আছে, তাদের এই লড়াইয়ে আরো দীর্ঘদিন যুক্ত থাকতে হবে।
এর পরেই পূর্ব ইউরোপে স্থায়ী সেনাঘাঁটি তৈরির পক্ষে সওয়াল করেন মিলে। তার বক্তব্য, সেখানে স্থায়ী সেনাঘাঁটি তৈরি করে রোটেশনের মাধ্যমে সৈন্যদের মোতায়েন করা হবে। কারণ, ওই অঞ্চল এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একমাত্র পূর্ব ইউরোপের সেনাঘাঁটিই রাশিয়ার আগ্রাসনের জবাব দিতে পারবে। মিলের বক্তব্য, পোল্যান্ড, রোমানিয়া এবং বাল্টিক রাষ্ট্রগুলি মার্কিন বেস বানানোর আদর্শ জায়গা। ওই রাষ্ট্রগুলিও অ্যামেরিকাকে বেস বানাতে সাহায্য করবে বলে তিনি মনে করেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন জানিয়েছেন, পূর্ব ইউরোপে সেনাঘাঁটি তৈরি এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা। এবিষয়ে আগেই ভাবনাচিন্তা হয়েছে। আগামী জুনে ন্যাটোর বৈঠকে চূড়ান্ত প্রস্তাব দেওয়া হবে। তারপরেই ঘাঁটি তৈরির কাজ শুরু হবে।
জেলেনস্কির বক্তব্য
এদিকে জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ইউক্রেনের রাজধানী থেকে রাশিয়ার সেনাকে পরাস্ত করেছে ইউক্রেনের সেনা। সে কারণেই কিয়েভ থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে ক্রেমলিন। তবে একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, দীর্ঘ যুদ্ধে রসদ এবং সেনা দুই-ই কমে এসেছে। তাদের সাহায্য প্রয়োজন। এর আগে জাতিসংঘে নিরাপত্তা পরিষদের বক্তৃতায় ইউক্রেনের সাধারণ মানুষের উপর রাশিয়ার অত্যাচার নিয়ে সরব হয়েছিলেন জেলেনস্কি। বাকি বিশ্বকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরো কড়া মনোভাব নেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন তিনি।
কিয়েভে নিখোঁজ ৪০০
৩৫ দিন ধরে যুদ্ধ চলার পরে কিয়েভে বহু মানুষ নিখোঁজ। কিয়েভের হস্টোমেল অঞ্চলের সেনা কম্যান্ডার জানিয়েছেন, প্রতিটি বাড়ির বেসমেন্ট পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। বহু নিহতের দেহও এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। নিখোঁজ অন্তত ৪০০। যুদ্ধের সময় যারা পালিয়ে যাননি। বস্তুত, কিয়েভের বেশ কিছু মানুষের মৃতদেহ মিলেছে বুচায়। কম্যান্ডারের বক্তব্য, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে বহু মানুষ পালিয়ে গেছেন। কিন্তু যারা পালাতে পারেননি, তাদেরও খোঁজ মিলছে না।
-
ইউক্রেন যুদ্ধে যেসব অস্ত্রের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে
কিনজাল মিসাইল
মিগ-৩১ বিমানের গায়ে সাদা কিনজাল মিসাইল দেখতে পাচ্ছেন৷ শব্দের গতির চেয়ে এর গতি প্রায় পাঁচগুণ বেশি৷ তাই একে হাইপারসনিক মিসাইল বলা হয়৷ ১৯ মার্চ রাশিয়া জানায়, ইউক্রেনের পশ্চিমের একটি বিশাল অস্ত্রভাণ্ডার ধ্বংস করতে এই মিসাইল ব্যবহার করা হয়েছে৷ আর ২৯ মার্চ এক ঊর্ধ্বতন মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা জানান, রাশিয়া নিয়মিত এমন মিসাইল ব্যবহার করছে৷ ছবিটি ২০১৮ সালে তোলা৷
-
ইউক্রেন যুদ্ধে যেসব অস্ত্রের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে
ভ্যাকুয়াম বোমা
এই বোমা থার্মোব্যারিক বোমা বা অ্যারোসল বোমা নামেও পরিচিত৷ ছবিতে রাশিয়ার টিওএস-১এ থার্মোব্যারিক রকেট লঞ্চার দেখা যাচ্ছে, যেটা থেকে ভ্যাকুয়াম বোমা ছো়ড়া হয়৷ ইউক্রেন যুদ্ধে এই সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে বলে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে৷ ভ্যাকুয়াম বোমার আঘাতে অনেক বড় আগুনের গোলা সৃষ্টি হয়৷ এটি সুরক্ষিত ভবন, যন্ত্রপাতি ধ্বংস করতে পারে৷ মানুষকে মেরে ফেলতে কিংবা আহত করতে পারে৷
-
ইউক্রেন যুদ্ধে যেসব অস্ত্রের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে
ক্লাস্টার বা গুচ্ছ বোমা
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান মিশেল বাচেলেট বুধবার জানান, রাশিয়া জনবহুল এলাকায় অন্তত ২৪ বার এমন বোমা ব্যবহার করেছে বলে তার অফিস অভিযোগ পেয়েছে৷ এই বোমার এমন নামকরণের কারণ এই বোমায় অনেকগুলো ছোট ছোট বোমা (বম্বলেট) থাকে৷ ক্লাস্টার বোমা বিস্ফোরিত হলে ছোট বোমাগুলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে৷ ফলে একটা বিশাল এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ ছবিটি ফাইল থেকে নেয়া৷
-
ইউক্রেন যুদ্ধে যেসব অস্ত্রের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে
কালিবা ক্রুজ মিসাইল
ইউক্রেনের সামরিক ও সরকারি ভবনে হামলা চালাতে কালিবা ক্রুজ মিসাইল ব্যবহার করেছে রাশিয়া৷ ছবিটি ফাইল থেকে নেয়া৷
-
ইউক্রেন যুদ্ধে যেসব অস্ত্রের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে
ইস্কান্দার ব্যালিস্টিক মিসাইল
এই মিসাইল সর্বোচ্চ ৫০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে৷ বড় ভবন ও সুরক্ষিত, দুর্ভেদ্য অবকাঠামো ধ্বংস করতে পারে এটি৷ বেলারুশ থেকে কিছু ইস্কান্দার মিসাইল ইউক্রেনের দিকে ছোড়া হয়েছে বলে জানা গেছে৷
-
ইউক্রেন যুদ্ধে যেসব অস্ত্রের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে
আর্টিলারি সিস্টেম
২৬ ফেব্রুয়ারির এই ছবিতে ইউক্রেন সীমান্তের কাছে রাশিয়ার বেলগোরোদ এলাকায় ‘উরাগান’ মাল্টিপল রকেট লঞ্চার সিস্টেম দেখা যাচ্ছে৷ তার দুদিন আগে ইউক্রেনে হামলা শুরু করেছিল রাশিয়া৷ উরাগান ছাড়াও রাশিয়ার কাছে সোভিয়েত আমলের ডিজাইন করা ‘গ্রাট’, ‘স্ম্যার্শ’ রকেট লঞ্চার আছে৷
-
ইউক্রেন যুদ্ধে যেসব অস্ত্রের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে
ফসফরাস বোমা?
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ২৫ মার্চ জানান, রাশিয়া ইতিমধ্যে ফসফরাস বোমা ব্যবহার করেছে৷ লুহানস্কের গভর্নর জানান একটি গ্রামে এমন বোমা হামলায় দুই শিশুসহ কমপক্ষে চারজন মারা গেছেন৷ জেলেনস্কির মন্তব্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে ক্রেমলিনের মুখপাত্র জানান, রাশিয়া ‘‘কখনও আন্তর্জাতিক কনভেনশন লঙ্ঘন করেনি৷’’ ছবিতে ১৯৪৫ সালে ফসফরাস বোমার ব্যবহার দেখা যাচ্ছে৷
-
ইউক্রেন যুদ্ধে যেসব অস্ত্রের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে
জ্যাভলিন মিসাইল
যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এই অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল ব্যবহার করছে ইউক্রেন৷ পশ্চিমা দেশগুলো এসব তাদের সরবরাহ করেছে৷ গত ডিসেম্বরের ছবিতে জ্যাভলিনসহ ইউক্রেনের সেনাদের দেখা যাচ্ছে৷
-
ইউক্রেন যুদ্ধে যেসব অস্ত্রের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে
স্টিঙ্গার মিসাইল
এটি একটি অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট মিসাইল৷ এটিও পশ্চিমের কাছ থেকে পেয়েছে ইউক্রেন৷
-
ইউক্রেন যুদ্ধে যেসব অস্ত্রের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে
বায়রাকতার ড্রোন
যুদ্ধ শুরুর আগে ইউক্রেনকে এই ড্রোন দিয়েছিল তুরস্ক৷ এটি ব্যবহার করে রাশিয়ার মিলিটারি কনভয়ের উপর হামলার ভিডিও প্রকাশ করেছে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী৷
-
ইউক্রেন যুদ্ধে যেসব অস্ত্রের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে
ক্ষয়ক্ষতির হিসাব
ওরিক্স মিলিটারি অ্যানালিসিস ব্লগের তথ্য উল্লেখ করে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) পর্যন্ত রাশিয়ার ৩১৮টি ট্যাঙ্ক ধ্বংস হয়েছে কিংবা সেনারা ফেলে পালিয়ে গেছেন৷ এছাড়া পাঁচশর বেশি সাঁজোয়া যান, ১৬টি ফাইটার জেট, ৩৫টি হেলিকপ্টার ও নৌবাহিনীর দুটি জাহাজ ধ্বংস হয়েছে বলে জানিয়েছে ওরিক্স৷ আর ইউক্রেন হারিয়েছে ৭৯টি ট্যাঙ্ক, প্রায় ২০০টি সাঁজোয়া যান, ১২টি জেট ও ১৩টি জাহাজ৷
নিউজিল্যান্ডের নিষেধাজ্ঞা
আগেই রাশিয়ার উপর বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। এবার ফের নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করল তারা। রাশিয়া থেকে বিভিন্ন ধরনের মেশিন আমদানি করে নিউজিল্যান্ড। তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। কিছু কিছু জিনিস আমদানির ক্ষেত্রে ৩৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক চাপানো হয়েছে। দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, ভ্লাদিমির পুটিন যা করছেন, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
টুইট
ইটালি, স্পেন, স্লোভানিয়ার পদক্ষেপ
বুচার ঘটনা সামনে আসার পর ইটালি, স্পেন এবং স্লোভানিয়া তাদের দেশ থেকে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এস্টোনিয়া এবং লাটভিয়াও তাদের দেশের দুইটি করে রাশিয়ার কনসুলেট বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কনসুলেটের কর্মীদের দেশে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে যুক্তরাজ্য ৩৫০ বিলিয়ন ডলার রাশিয়ার সম্পত্তি ফ্রিজ করেছে বলে জানিয়েছে। তাদের বক্তব্য, ওই অর্থ ছিল পুটিনের যুদ্ধের সিন্দুক। ওই অর্থ ফ্রিজ করে দেওয়ার ফলে রাশিয়া অর্থ সংকটে পড়বে বলে মনে করছে যুক্তরাজ্য।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি, এএফপি)