1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
সমাজইউক্রেন

প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে রাশিয়া সেনার অত্যাচার

৪ এপ্রিল ২০২২

সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদদের অপহরণ করছে রাশিয়া। সাধারণ মানুষের উপর চলছে অত্যাচার। অভিযোগ ইউক্রেনবাসীর।

https://p.dw.com/p/49Pcz
ইউক্রেন
ছবি: Deputy Head For President's Office, Ukraine/REUTERS

লড়াই এখনো বন্ধ হয়ে যায়নি। তারই মধ্যে রাশিয়ার সেনার অত্যাচারের খণ্ডচিত্র সামনে আসতে শুরু করেছে। কীভাবে অপহরণ করে, হুমকি দিয়ে রাশিয়ার সেনা সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করেছিল, ডিডাব্লিউকে সে কথা জানিয়েছেন আক্রান্তরা। সাংবাদিক এবং রাজনীতিবিদদের মূলত টার্গেট করা হয়েছিল বলে অভিযোগ।

সাংবাদিকের বাবার উপর অত্যাচার

পূর্ব ইউক্রেন দিয়ে ঢুকে পশ্চিম এবং দক্ষিণ ইউক্রেনের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করেছিল রাশিয়ার সেনা। পূর্ব ইউক্রেনে মারিউপল বন্দর শহরে রাশিয়ার সেনাকে বেগ পেতে হয়েছে। এখনো সেখানে লড়াই চলছে। পশ্চিমে রাজধানী কিয়েভের কাছে পৌঁছে গেলেও ইউক্রেনের রাজধানী দখল করতে পারেনি রাশিয়ার সেনা। কিয়েভের শহরতলিতে তীব্র লড়াই হয়েছে। শেষপর্যন্ত সেখান থেকে রাশিয়ার সেনাকে পিছু হঠতে হয়েছে। কিন্তু দক্ষিণ ইউক্রেনে দ্রুত বেশ কিছু শহর দখল করতে পেরেছিল রাশিয়া। বিশেষ করে জাপোরঝঝিয়া অঞ্চলের কয়েকটি শহর তারা কার্যত দখল করে নিয়েছে। যার অন্যতম মেলিটোপল শহর। ইউক্রেনের আক্রমণের একদিনের মধ্যেই এই শহরটি দখল করে নেয় রাশিয়া। স্থানীয় মেয়র ইভান ফেডেরভকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার জায়গায় রাশিয়াপন্থি এক ব্যক্তিকে মেয়র পদে বসিয়ে দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, এই জায়গাটি ক্রাইমিয়া থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে। ২০১৪ সালে ক্রাইমিয়া দখল করেছিল রাশিয়া।

নতুন মেয়র স্থানীয় বাসিন্দাদের রাশিয়াকে সমর্থন করার নির্দেশ দেন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তাতে সহমত হননি। এর সপ্তাহখানেক পরে ৭৫ বছরের এক বৃদ্ধকে অপহরণ করা হয়। ওই বৃদ্ধ স্থানীয় সাংবাদিক সোয়েতলানা জালিজেটস্কার বাবা। সোয়েতলানা স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমের এডিটর। তাকে বলা হয়েছিল, রাশিয়ার পক্ষে খবর করতে হবে। সোয়েতলানা রাজি হননি। অত্যাচারের ভয়ে তিনি পালিয়ে যান। কিন্তু রোগগ্রস্ত বাবা-মাকে নিয়ে যেতে পারেননি। এর কিছুদিনের মধ্যেই তার বাবা-মায়ের বাড়িতে চড়াও হয় তিন ব্যক্তি। একজন সাদা পোশাকে এবং দুইজন রাশিয়ার সেনা উর্দি পরে বাড়িতে ঢোকে। ৭৫ বছরের বৃদ্ধকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই দিন বিকেলেই সোয়েতলানার কাছে ফোন আসে। তার বাবা জানান, একটি বেসমেন্টে তাকে আটকে রাখা হয়েছে। ডিডাব্লিউর সঙ্গে কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন সোয়েতলানা। জানান, বাবার ওই গলা শুনেও তিনি রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতার প্রশ্নে নিষেধ করে দেন।

এর বেশ কিছুদিন পর ফের বাবার সঙ্গে তার একবার কথা হয়। ততদিনে তিনি ঠিক করে ফেলেছেন, নিজের সংবাদমাধ্যমটি আর নিজের হাতে রাখবেন না। ওই সিদ্ধান্তের পর তার বাবাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আটক রাশিয়ার সেনার সঙ্গে বন্দি প্রত্যার্পণ চুক্তি মেনে ওই শহরের সাবেক মেয়রকেও মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

আস্ত পরিবার গ্রেপ্তার

ওই একই শহরের বাসিন্দা টেটিয়ানা কুমোক। কুমোক ফ্যাশন ডিজাইনার। তার বাবা স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমের মালিক। তার বাবাকেও রাশিয়ার পক্ষে খবর করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি রাজি হননি। এরপরেই পরিবারের তিনজন এবং আরো তিন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করে কয়েকঘণ্টা ধরে জেরা করা হয়। শেষপর্যন্ত টেটিয়ানার বাবা সংবাদমাধ্যমটি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত জানানোর পরে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। ছাড়ার আগে তাদের দিয়ে একটি বয়ানে সই করানো হয়। যেখানে লেখা ছিল, তাদের উপর কোনো অত্যাচার করা হয়নি।

শুধু মেলিটোপল নয়, অভিযোগ, ইউক্রেনের একাধিক শহরে একই ঘটনা ঘটিয়েছে রাশিয়ার সেনা। বহু মানুষ এখনো নিখোঁজ। যার মধ্যে অধিকাংশই সাংবাদিক এবং রাজনীতিবিদ।

রোমান গনচারেনকো/এসজি