1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা ছাড়াও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধের ‘সাজানো মামলা’ দেয়া হচ্ছে
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা ছাড়াও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধের ‘সাজানো মামলা’ দেয়া হচ্ছে৷ ছবিতে, ২০২১ সালে ঠাকুরগাঁওয়ে গ্রেপ্তার সাংবাদিক তানভীর হাসান৷ছবি: Jeebon Haq

ঢাকার বাইরের সাংবাদিকদের বড় চাপ ‘সাজানো মামলা’

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৯ জানুয়ারি ২০২৩

পুলিশ, প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের নানামুখী চাপে রয়েছেন বাংলাদেশের জেলা এবং উপজলা পর্যায়ের সাংবাদিকেরা৷ হামলা নির্যাতনের সঙ্গে বড় চাপ ‘সাজানো মামলা’৷

https://p.dw.com/p/4MqQq

বাগে আনতে না পারলে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সংবাদ সংশ্লিষ্ট নয় এমন নানা অপরাধমূলক মামলাও দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে৷ এমনকি সন্ত্রাসী তৎপরতা, নাশকতা ও বিস্ফোরক আইনের মামলাও দেয়া হচ্ছে, করা হচ্ছে গ্রেপ্তার৷ সেই সঙ্গে জিডিটাল আইনের খড়গ তো আছেই৷ এসব নিয়ে সাংবাদিকেরাও তেমন প্রতিবাদ করছেন না৷ ভুক্তভোগী সাংবাদিকেরা বলছেন, কৌশল হিসেবেই তাদেরকে নানা ভাগে বিভক্ত করে দেয়া হচ্ছে, যাতে গ্রেপ্তার বা নির্যাতনের শিকার হলে প্রতিবাদ না হয়৷ আবার কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের হুমকি দেয়া হয়৷ যার সবশেষ উদাহরণ সাতক্ষীরার সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁ

গত সোমবার সকালে সাতক্ষীরা সদর থেকে পুলিশ তাকে আটক করে বলে জানা যায়৷ এই তথ্য সাত ঘণ্টা গোপন রাখা হয়৷ এরপর সন্ধ্যায় সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে আরেকটি উপজেলা দেবহাটা থানায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়৷ সেই থানায় তার বিরুদ্ধে নাশকতা ও চাঁদাবাজির মামলা দেয় পুলিশ৷ আটকের পর তাকে ইলেকট্রিক শক দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার৷ পাঁচ দিন কারাগারে থাকার পর রোববার তিনি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন৷

আটকের পর জেলার সাংবাদিকেরা কোনো প্রতিবাদ করেননি৷ এমনকি এক পক্ষ এসপির কাছে গিয়ে উল্টো তাকে মিষ্টি খাইয়ে আসেন৷

একই ভাবে গত বছরের নভেম্বরে সংবাদ প্রকাশের কারণে রামগড়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাতের রোষাণলে পড়েন স্থানীয় সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম৷ তার বিরুদ্ধে জিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন ইউএনওর কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জালাল আহমেদ৷ ‘ইউএনওর রোষাণলে পড়ে দুই দিনমজুর নিরাপত্তাহীন', শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেন তিনি৷ এর প্রেক্ষিতেই তার বিরুদ্ধে মামলা দেন ইউএনও৷

একই বছরের আগস্টে নেত্রকোনার কেন্দুয়ার ইউএনও মাহমুদা বেগম স্থানীয় এক সাংবাদিককে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে জড়িয়ে মামলার হুমকি দেন৷ দৈনিক সংবাদ ও দ্য ডেইলি স্টারের কেন্দুয়া প্রতিনিধি হমায়ুন কবির ভূমিহীনদের দেয়া প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে আগুন দেয়ার ঘটনার ভিডিও প্রকাশ করায় ইউএনও তার ওপর ক্ষুব্ধ হন বলে জানা যায়৷

২০১৯ সালে বরিশালের গৌরনদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম সারোয়ার স্থানীয় সাংবাদিক মোল্লা ফারুক হাসান ও রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা করেন৷ ওসির বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায় পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ নিয়ে খবর প্রকাশ করায় ওই মামলা দেয় হয়৷

‘প্রকাশিত খবর নিয়ে নয়, মামলা করা হয় চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে’

যা বলছেন ভুক্তভোগী সাংবাদিকেরা

কুড়িগ্রামে গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যান বলেন, ‘‘এখন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সাংবাদিকতা করা কঠিন হয়ে পড়ছে৷ কোনো প্রতিবেদন পুলিশ বা প্রশাসনের বিরুদ্ধে গেলেই হুমকি , নির্যাতন বা মামলার শিকার হতে হচ্ছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘প্রেসক্লাব বা সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতাদের বড় একটি অংশ এখন পুলিশ ও প্রশাসনের সুবিধাভোগী৷ ফলে তারা তো অনিয়ম, দুর্নীতির খবর প্রকাশ করেনই না, উপরন্তু কেউ ওই ধরনের খবর প্রকাশ করে হামলা মামলার শিকার হলে তারা প্রতিবাদও করেন না৷ কেউ প্রতিবাদ করলে তাকেও একই পরিণতির শিকার হতে হয়৷ যার বড় প্রমাণ আমি নিজে৷’’

খুলনার আরেকজন নির্যাতিত সাংবাদিক রকিবউদ্দির পান্নু বলেন, ‘‘স্থানীয় পর্যায়ে সাংবাদিকতা অনেক ঝুঁকিপুর্ণ হয়ে উঠছে৷ কারণ পুলিশ প্রশাসন চায় না তাদের অনিয়ম, দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হোক৷ প্রকাশের আগেই তারা নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করে৷ আর প্রকাশ হলে মামলায় জড়িয়ে দেয়৷ সেই মামলা প্রকাশিত খবর নিয়ে নয়, মামলা করা হয় চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে৷ তাদের লোকেরাই সাজানো মামলা করে৷ জিজিটাল নিরাপত্তা আইন তো আছেই৷''

তিনিও মনে করেন, এইসব মামলা বা হয়রানির তেমন প্রতিবাদ না হওয়ার কারণ স্থানীয় প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক ইউনিয়নে নানা ধরনের বিভক্তি৷ ‘‘অপসাংবাদিকতাও এখন বেশ বেড়েছে,” বলেন পান্নু৷

পুলিশ ও প্রশাসন সাংবাদিকদের চাপে রাখতে চায়: মো. ওমর ফারুক

পুলিশ প্রশাসন রাজনৈতিক নেতারা এগিয়ে

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র(আসক) তাদের প্রতিবেদনে বলেছে গত বছর (২০২২) সারদেশে ২২৬টি সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে৷ এর ৯০ ভাগেরও বেশি ঢাকার বাইরে জেলা ও উপজেলায়৷ আর এই নির্যাতন ও হুমকির ঘটনা বেশি ঘটিয়েছে পুলিশ, প্রশাসন ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা৷ আর সরাসরি খবর প্রকাশের কারণে ওই খবরের ঘটনায় মামলা হয়েছে ৪১টি৷

আর্টিক্যাল ১৯-এর হিসেবে ওই সময় ৬১ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে৷ ছয়জন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে৷ এইসব মামলায়ও পুলিশ প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতারা এগিয়ে৷

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘‘স্থানীয় পর্যায়ে পুলিশ ও প্রশাসন এখন সাংবাদিকদের চাপে রাখতে চায়৷ তাই তারা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের মামলা করছে৷ যারা স্বাধীনভবে সত্য ঘটনা প্রকাশ করতে চায় এর মাধ্যমে তারা অন্য সাংবাদিকদের মেসেজ দিচ্ছে৷ একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি করছে৷ এটা স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে অন্তরায়৷''

তিনি জানান, ‘‘আমি শুনেছি স্থানীয় পর্যায়ে এইসব ঘটনায় সাংবাদিকেরা অনেক সময় প্রতিবাদও করেন না৷ এটা ভয়াবহ৷ এটা চলতে থাকলে নির্যাতন, মামলা, হুমকি আরো বেড়ে যাবে৷''

তার মতে, ‘‘সাংবাদিকতা এখন নানা কারণে তার আদর্শের জায়গা থেকে বিচ্যুত হচ্ছে৷ কোনো কোনো সাংবাদিক পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে নানা অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছেন৷ তারা সাংবাদিকতার পরিবেশ নষ্ট করছেন৷ আবার সাংবাদিকদের মালিক পক্ষ বিজ্ঞাপনের জন্য কাজ করাচ্ছে৷ স্থানীয় পর্যায়ে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সুসম্পর্ক না থাকলে তো বিজ্ঞাপন দেয় না৷ সব মিলিয়ে একটা জটিল পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ঢাকায় সবজি কিনছেন ক্রেতারা৷

রমজানে আবার ব্যবসায়ীদের লাভ-লালসায় অসহায় ক্রেতা

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

প্রথম পাতায় যান