এমপির মামলার একদিন পরই নিখোঁজ সাংবাদিক
১২ মার্চ ২০২০'পক্ষকাল' নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করা শফিকুল ও বণিক বার্তায় ফটো সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কাজল ফকির নামে একটি একাউন্ট থেকে রাষ্ট্র,সরকার ও সমাজ ব্যবস্থার সমালোচনা করে নানা পোস্ট দিতেন তিনি৷
তার পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ১০ মার্চ বাসা থেকে বের হয়ে তিনি আর ফিরে আসেননি৷ নিখোঁজ হওয়ার আগের দিন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমানসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন৷ ওই মামলায় তিন নাম্বার আসামি কাজল৷
মানবজমিন কারাগারে আটক যুব মহিলালীগ নেত্রী শামিমা নূর পাপিয়ার সঙ্গে বিভিন্ন ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা নিয়ে একটি খবর প্রকাশে ক্ষুব্ধ হয়ে মাগুরা-১ আসনে আওয়ামী লীগের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় মামলাটি করেন৷ গত ৯ মার্চ কাজল তার ফেসবুকে মানবজমিনের খবরটি শেয়ার করেছিলেন৷
কাজলের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় তার পরিবার বুধবার চক বাজার থানায় একটি জিডি করে৷ জিডিতে বলা হয়, কাজল মঙ্গলবার দুপুরে তার বকশিবাজারের বাসা থেকে মটর সাইকেল যোগে বের হয়ে যান৷ তার সঙ্গে দুইটি মেবাইল ফোন ছিলো৷ এরপর তিনি আর বাসায় ফিরে আসেননি৷ তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে৷ মোটর সাইকেলেরও কোনো খোঁজ নাই৷
কাজলের ছেলে মনোরম পলক জানান, ‘‘তিনি সাধারণত রাত ১০টা-১১টার মধ্যে বাসায় ফেরেন৷ রাতে বাসায় ফিরে না আসায় পরদিন আমরা চকবাজার থানায় জিডি করি৷ পুলিশ আমাদের থানায় ডেকে কথা বলেছে৷ তারা বাবাকে উদ্ধারের চেষ্টা করছেন৷ একই সঙ্গে আমাদের চাইলে গোয়েন্দা পুলিশের সহায়তা নিতে বলেছেন৷’’
চকবাজার থানার ওসি মওদুদ হাওলাদার বলেন, ‘‘আমরা তার নিখোঁজের বিষয়ে সারাদেশে সংবাদ দিয়েছি৷ তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তথ্য জানার চেষ্টা করছি৷ তার বাসা এবং সন্দেহজনক এলকার সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজও সংগ্রহের চেষ্টা করছি৷ এর বাইরে আর কোনো অগ্রগতি নেই৷’’
কাজলকে এমপি'র করা মামলায় আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে শেরেবাংলা থানার ওসি জানে আলম মুন্সি বলেন, ‘‘এই মামলার কোনো আসামিকেই আমরা আটক বা গ্রেপ্তার করিনি৷ আর এখন মামলাটি তদন্ত করছে ডিএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিট৷’’
সাইবার ক্রাইম ইউনিটের এডিসি নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘‘মামলাটির তদন্ত ভার তাদের দেয়া হয়েছে৷ তবে কাগজপত্র এখনো হাতে না পাওয়ায় তদন্ত শুরু হয়নি৷ এরমধ্যে তাদের পক্ষ থেকে কোনো আসামিকে গ্রেপ্তারের প্রশ্নই ওঠেনা৷’’
কাজলের ছেলের প্রশ্ন তাহলে বাবা কোথায়?
‘‘বাবা ফেসবুকে অনেক লেখালেখি করতেন৷ তবে এনিয়ে কখনো কোনো হুমকি পেয়েছেন বলে আমাদের জানা নেই৷ তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পরও তাকে উদ্বিগ্ন হতে দেখিনি৷ মঙ্গলবার তিনি যখন বাসা থেকে বের হয়ে যান তখনও স্বাভাবিকই ছিলেন৷ আমরা পুলিশের সাথে কথা বলেছি৷ বিভিন্ন পর্যায়ে খোঁজ নিয়েছি৷ তারা জানিয়েছেন এমপির মামলায়ও বাবাকে আটক করা হয়নি৷ তাহলে বাবা কোথায় গেলেন?’’
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ফটো সাংবাদিক কাজলকে দ্রুত উদ্ধার করে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছে৷ সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান বলেন, ‘‘কোনো সভ্য সমাজে সাংবাদিক কেন, কোনো নাগরিকের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা নিন্দনীয়৷ নাগরিকদের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের৷ আমরা কাজলকে দ্রুত উদ্ধার করে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানাই৷’’
এবিষয়ে সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর বলেন, ‘‘আমিও আমার মামলার একজন আসামি নিখোঁজ বলে শুনেছি৷ এটা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দেখার দায়িত্ব৷ আমার মামলায় কোনো আসামি আটক হয়েছে বলে আমার জানা নেই৷ তদন্তকারীরাও কাউকে গ্রেপ্তার করেছে বলে আমার কাছে তথ্য নেই৷
‘‘অন্যায়ভাবে অসত্য তথ্য দিয়ে আমার চরিত্র হননের চেষ্টার অভিযোগে আমি মামলা করেছি৷ এটা আমার প্রতিবাদ৷ কোনো প্রতিশোধ নিতে আমি মামলা করিনি৷’’
এদিকে কাজলের পরিবারের সদস্যরা তার খোঁজ না পেয়ে ভেঙে পড়েছেন৷