ক্রেমলিনের সমালোচক বলে পরিচিত সংবাদপত্র‘নোভায়া গাজেটা'-র সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং মুখ্য সম্পাদক মুরাটভ৷ ১৯৯৩ সালে সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচভের নোবেল শান্তি পুরস্কারের অর্থ দিয়ে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল৷
বছরের পর বছর ধরে কঠোর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কাজ চালিয়ে গিয়েছে নোভায়া৷ কিন্তু মার্চ মাসে এটি শেষ পর্যন্ত তার অনলাইন এবং মুদ্রণ কার্যক্রম বন্ধ করে৷ রাশিয়ায় ভুয়া খবর প্রচারের শাস্তি ১৫ বছরের কারাদণ্ড৷ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন স্বাক্ষর করায় এমন একটি বিল আইনের মর্যাদা পেয়েছে চলতি বছরের শুরুর দিকে৷ এরপর রাশিয়ায় ‘বন্ধ হয়ে যাওয়া' গণমাধ্যমের তালিকায় যোগ হয় ‘নোভায়া গাজেটা'-র নাম৷
‘‘আমার দেশ অন্য একটি দেশ ইউক্রেনকে আক্রমণ করেছে৷ সেখানে এখন এক কোটি ৫৫ লাখ শরণার্থী রয়েছে৷ আমরা কী করতে পারি তা নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ভেবেছি৷ তখন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, প্রত্যেকেরই প্রিয় কিছু দেয়া উচিত,'' রয়টার্সকে এ কথা জানিয়েছেন মুরাটভ৷
স্বর্ণপদক নিলাম করার মানে হল শরণার্থীদের ভাগ্যের শরিক হলেন মুরাটভ নিজেও৷ কারণ শরণার্থীরা তো তাদের ‘অতীতের স্মৃতি' হারিয়ে ফেলেছেন৷
মুরাটভের মত, ‘‘এখন তাদের ভবিষ্যত কেড়ে নেয়ার চেষ্টা চলছে৷ আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে তাদের ভবিষ্যত সুরক্ষিত রয়েছে৷ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে জিনিসটি আমরা বলতে চাই এবং দেখাতে চাই তা হল মানব সংহতি৷''
-
যে পাঁচ উপায়ে পৃথিবী বদলে দিয়েছে যুদ্ধ
অসংখ্য শরণার্থী
রাশিয়ার আক্রমণের পর প্রায় ৬৮ লাখ ইউক্রেনিয়ান দেশ ছেড়েছেন৷ জাতিসংঘের হিসেবে, এদের প্রায় ৩০ লাখ প্রতিবেশী দেশগুলো ছাড়িয়ে অন্যান্য দেশেও আশ্রয় নিয়েছেন৷ জার্মানিতে সাত লাখেরও বেশি ইউক্রেনিয়ান আশ্রয় নিয়েছেন৷ আরো ৭৭ লাখ দেশের ভেতরেই ঘরছাড়া হয়েছেন৷
-
যে পাঁচ উপায়ে পৃথিবী বদলে দিয়েছে যুদ্ধ
খাদ্য সংকট
বিশ্বের অর্ধেক সানফ্লাওয়ার ভোজ্য তেল উৎপাদন করে ইউক্রেন৷ এছাড়া দেশটি ১৫% ভুট্টা ও ১০% গম রপ্তানি করে৷ যুদ্ধের কারণে এসব পণ্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে৷ এ কারণে এসব পণ্য উৎপাদনকারী অন্য দেশগুলোও অভ্যন্তরীণ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য রপ্তানি বন্ধ করেছে৷ গেল মে মাস পর্যন্ত ২৩টি দেশ এসব পণ্য রপ্তানি বন্ধ করেছে৷
-
যে পাঁচ উপায়ে পৃথিবী বদলে দিয়েছে যুদ্ধ
জ্বালানি সংকট
রাশিয়া পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জ্বালানি গ্যাস রপ্তানিকারক দেশ৷ তারা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও তৃতীয় সর্বোচ্চ কয়লা রপ্তানিকারক৷ ইউক্রেনে হামলা করার পর রাশিয়ার ওপর জ্বালানি নির্ভরতা কমাতে বা বন্ধ করতে একযোগে কাজ করছে ইউরোপের দেশগুলো৷ রাশিয়াও একাধিক ইউরোপীয় দেশে গ্যাস রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে৷
-
যে পাঁচ উপায়ে পৃথিবী বদলে দিয়েছে যুদ্ধ
দ্রব্যমূল্য ও মুদ্রাস্ফীতি
খাদ্যপণ্য ও জ্বালানি সংকটের মুখে দাম বেড়ে গেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের৷ বেড়েছে মার্কিন ডলারের দাম৷ ইউরোজোনে গত মাসে মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে ৮.১%৷ সারা বিশ্বেই মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে৷
-
যে পাঁচ উপায়ে পৃথিবী বদলে দিয়েছে যুদ্ধ
ন্যাটোর পুনর্জন্ম
রাশিয়ার আক্রমণ এককাট্টা করেছে ন্যাটোর সদস্যদেশগুলোকে৷ শুধু তাই নয়, রাশিয়ার কারণে নিরাপত্তা হুমকিতে ভোগা অনেক রাষ্ট্র এখন ৩০ সদস্যদেশের এই জোটে যুক্ত হবার ব্যাপারে ভাবছে৷ ফিনল্যান্ড ও সুইডেন এরই মধ্যে তাদের আনুষ্ঠানিক আবেদন জমা দিয়েছে৷
পুরস্কার কমিটির সহায়তায় বিশ্ব শরণার্থী দিবসে (২০শে জুন) হেরিটেজ অকশনে মুরাটভের পদক বিক্রি করা হচ্ছে৷ ফিলিপাইন্সের মারিয়া রেসা ও রাশিয়ার দিমিত্রি মুরাটভকে ‘স্বাধীনতা রক্ষার জন্য লড়ে গণতন্ত্র ও দীর্ঘমেয়াদি শান্তি নিশ্চিত করায়' ২০২১ সালের শান্তি পুরস্কারের জন্য বেছে নিয়েছিল নোবেল কমিটি৷ বিশ্বের যে সাংবাদিকরা প্রতিকুল পরিস্থিতিতেও নৈতিক সাংবাদিকতার চর্চা করছেন, তাদের প্রতিনিধি হিসাবে রেসা ও মুরাটভের এই স্বীকৃতি বলে জানাচ্ছে নোবেল কমিটি৷
মুরাটভ তার সম্মান উৎসর্গ করেছেন নোভায়া গাজেটার ছয় জন সাংবাদিককে৷ সেই সাংবাদিকদের তাদের কাজের জন্য হত্যা করা হয়েছে৷ হত সাংবাদিকদের মধ্যে ছিলেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সর্বোচ্চ সমালোচকরাও৷
-
কার্টুনিস্টদের দৃষ্টিতে ইউক্রেন যুদ্ধ ও পুটিন
মাদার ওয়ার
ইটালির কার্টুনিস্ট পাওলো লাম্বার্ডি ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে তার কার্টুনটির নাম দিয়েছেন ‘মাদার ওয়ার’৷ সেখানে ইউক্রেনে হামলা শুরু করা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনকে দেখানো হয়েছে যমদূত গ্রিম রিপারের কোলে৷ পুটিনকে ফিডারে দুধ খাওয়াচ্ছেন মৃত্যুদূত৷ চার পাশে মাছি এমনভাবে উড়ছে যেন পুটিন হয় মরে গেছেন, নয়তো অচিরেই মরবেন!
-
কার্টুনিস্টদের দৃষ্টিতে ইউক্রেন যুদ্ধ ও পুটিন
দ্য নেভিগেটর
ডাচ কার্টুনিস্ট জিয়ার্ড রয়ার্ডসের কার্টুনেও পুটিন ভিলেন৷ এখানে রুশ প্রেসিডেন্টকে দেখানো হয়েছে অদ্ভুত এক বাহন রূপে৷ একমাত্র যাত্রী শয়তানকে পাশে নিয়ে বাহনটি চালাচ্ছেন যমদূত গ্রিম রিপার৷ চলন্ত যানে বসে পত্রিকা পড়ছেন শয়তান৷ পত্রিকার নাম ‘রোড টু থার্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ার’৷ ইঙ্গিতটা খুব স্পষ্ট – বিশ্বকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন যুদ্ধবাজ পুটিন৷
-
কার্টুনিস্টদের দৃষ্টিতে ইউক্রেন যুদ্ধ ও পুটিন
অস্ত্রের রূপান্তর
উজবেকিস্তানের মাখমুদ এশনকুলভের ইউক্রেন যুদ্ধ দেখে মনে হয়েছে মানুষ সৃষ্টির আদিকাল থেকে অনেক এগিয়েছে ঠিকই, তবে সেই অগ্রগতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানবজাতির বড় একটা অংশের মধ্যে যুদ্ধপ্রীতিও বেড়েছে৷ তাই তার কার্টুনে বানর নিরস্ত্র, নিয়ান্দারথালের হাতে মুগুর, তারপর মানুষের হাতে আধুনিক অস্ত্র৷ মানুষের অগ্রগতি আর অস্ত্রের ক্ষমতা বৃদ্ধি যেন সমার্থক!
-
কার্টুনিস্টদের দৃষ্টিতে ইউক্রেন যুদ্ধ ও পুটিন
অস্ত্রের নাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, পাসওয়ার্ড ফেক.নিউজ
কিউবার মিগুয়েল মোরালেস এ যুগের যুদ্ধে প্রপাগান্ডার গুরুত্ব কতটা তা ফুটিয়ে তুলেছেন৷ তার মতে, যুদ্ধের সবচেয়ে বড় অস্ত্রাগারের নাম প্রপাগান্ডা আর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অস্ত্র এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, অর্থাৎ টুইটার, ফেসবুক আর ইন্সটাগ্রাম৷ ঘরে বসে শুধু এই তিন অস্ত্রের বোতামে টিপুন, ব্যস যুদ্ধে অনেক এগিয়ে যাবেন৷ চলমান যুদ্ধেও যে প্রপাগান্ডার লড়াই চলছে কার্টুনের মাধ্যমে তা-ই জানাতে চেয়েছেন কিউবান শিল্পী৷
-
কার্টুনিস্টদের দৃষ্টিতে ইউক্রেন যুদ্ধ ও পুটিন
চির ক্ষুধার্ত রাশিয়া
ইউক্রেনের মতো লিথুয়ানিয়াও এক সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল৷ এখন ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া৷ লিথুয়ানিয়ার কার্টুনিস্ট কাজিস কেস্তুতিস সিয়াউলিতিসের তাই ভয়- ভবিষ্যতে না তার দেশের দিকেও হাত বাড়ায় রাশিয়া৷ সিয়াউলিতিসের চোখে তাই রাশিয়া এমন এক মাছ যার ক্ষুধা মরে কঙ্কাল হয়ে যাওয়ার পরও মিটবে না, কঙ্কালও হাঁ করে গিলতে থাকবে একের পর এক দেশ৷
-
কার্টুনিস্টদের দৃষ্টিতে ইউক্রেন যুদ্ধ ও পুটিন
যুদ্ধকে ‘না’
যুদ্ধ একটা দেশকে কী ভয়ানক খারাপ অবস্থায় ফেলতে পারে তা আফগানিস্তারের কার্টুনিস্ট শহিদ আতিকুল্লার চেয়ে বেশি ক’জন বুঝবেন!তিনি তাই নরওয়েজিয়ান শিল্পী এডওয়ার্ড মুঞ্চ- এর ১৯৮৩ সালে আঁকা আইকনিক ছবি ‘দ্য স্ক্রিম’ ধার করে সৃষ্টি করেছেন যুদ্ধবিরোধী বার্তা দেয়া এক ক্যারিকেচার৷ ক্যারিকেচারে ব্যবহার করেছেন বোমায় বিধ্বস্ত ইউক্রেনের কোনো এক শহরের ছবি৷
-
কার্টুনিস্টদের দৃষ্টিতে ইউক্রেন যুদ্ধ ও পুটিন
যুদ্ধ করো না, ভালোবাসো
রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর থেকেই বিশ্ব জুড়ে চলছে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ৷ কিন্তু পুটিন যুদ্ধ থামাননি৷ তুরস্কের মেনেকসে চাম তার কার্টুনে তুলে ধরেছেন শান্তির বাণী৷ ‘নো ওয়ার’ শীর্ষক কার্টুনে তাই গ্রিম রিপার কাঁটা দিয়ে গল্ফ খেলছেন আর চার পাশ থেকে শান্তিকামী মানুষরা তুলছেন ‘যুদ্ধ করো না, ভালোবাসো’ স্লোগান৷
-
কার্টুনিস্টদের দৃষ্টিতে ইউক্রেন যুদ্ধ ও পুটিন
ন্যাটোর প্রেমে
ইউক্রেন যুদ্ধের বড় কারণ ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্য হওয়ার সম্ভাবনা৷ পুটিন সে কথাই বলছেন বারবার৷ সংযুক্ত আরব আমিরাতের আমেরের কার্টুনেও তাই ইউক্রেন ন্যাটোর প্রেমে পড়া এক কিশোরী, সেই কিশোরী প্রেমভরা দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে ন্যাটোর দিকে, কিন্তু তাকে উল্টো দিকে টানছে রাশিয়া৷
-
কার্টুনিস্টদের দৃষ্টিতে ইউক্রেন যুদ্ধ ও পুটিন
পুটিন যেমন
আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধ শেষ করার কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না৷ নিজের অবস্থানে ভ্লাদিমির পুটিন অনড়৷ তাই পুটিনের বহুল আলোচিত টেবিলে শুধু পুটিনকে বসিয়েই তার একরোখা মানসিকতা ফুটিয়ে তুলেছেন জার্মানির আগোস্টিনো টালে৷ দীর্ঘ টেবিলের এক প্রান্তে পুটিন অন্য প্রান্তে আয়নায় তারই প্রতিচ্ছবি৷ আগোস্টিনো আসলে মনে করেন, পুটিন শুধু নিজের দিকটাই দেখেন, অন্য কারো কথা তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়৷
-
কার্টুনিস্টদের দৃষ্টিতে ইউক্রেন যুদ্ধ ও পুটিন
ড. অক্টোপুটিন
রাশিয়ার বিরুদ্ধে যত নিষেধাজ্ঞাই আরোপ করা হোক না কেন, মাকাওয়ের কার্টুনিস্ট রডরিগো মনে করেন চলমান যুদ্ধে পুটিনই এখনো সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন৷ তার সুবিধাজনক অবস্থায় থাকার প্রধান কারণ ইউরোপের বেশ কিছু দেশের রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতা৷
তিনি মুক্ত গণমাধ্যমের অভাব রয়েছে রাশিয়ায়৷ প্রতিবাদের ফলে রাষ্ট্রের তরফে নেমে আসা তীব্র আঘাতের জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন তিনি৷
তিনি বলেন, ‘‘রাশিয়ায় বাকস্বাধীনতা নেই, মতামতের প্রকৃত বিনিময় নেই, মতপ্রকাশের প্রকৃত স্বাধীনতা নেই, এতেই বোঝা যাচ্ছে মানুষের কাছে কোনো বিকল্প নেই৷ রাষ্ট্রের প্রচারকারীরা যা বলছে, জনগণকে বিশ্বাস করতে হচ্ছে৷কোনো মুক্ত গণমাধ্যম নেই৷ যে কোনও বিবৃতির জন্য, একটি প্রশাসনিক বা ফৌজদারি মামলা শুরু করা হচ্ছে৷''
মুরাটভের কথায়, ‘‘আধুনিক রাশিয়ায় স্বাধীন সাংবাদিকতা অসম্ভব৷ তবে কন্টেন্ট দেয়া সম্ভব–যেমন, ইউটিউব প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে৷ এছাড়া ভিপিএন পরিষেবার মাধ্যমে কিছু করা সম্ভব৷ কিন্তু প্রতিদিন আরো কঠিন হচ্ছে এগুলি৷''
বেশিরভাগ রুশ নাগরিক মামলাকে সমর্থন করে–তিনি সরকারের এ গবেষণায় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন৷
মুরাটভের বক্তব্য, ‘‘যখন তারা ফোন করে জিজ্ঞাসা করে, ‘আপনি কি প্রেসিডেন্ট পুটিনের পদক্ষেপকে সমর্থন করেন?' অথবা ‘আপনি কি রাশিয়ান সেনাবাহিনীর পদক্ষেপকে সমর্থন করেন?' অথবা আপনি কি ইউক্রেনে সামরিক অভিযানকে সমর্থন করেন?'-ব্যক্তিটি কী বলবে বলে আপনার মনে হয়?''
মুরাটভ বিশ্বাস করেন যে বাস্তবে, যুদ্ধের প্রতি সমর্থন, প্রায়শই ল্যাটিন বর্ণমালা থেকে ‘জেড'-এর প্রদর্শন দ্বারা প্রদর্শিত হয়৷ তার মতে, ‘‘আপনি যদি এখন মস্কোর রাস্তা দিয়ে হেঁটে যান, আপনি দেখতে পাবেন যে রাস্তায় কার্যত কোন ‘জেড' অবশিষ্ট নেই৷''
মস্কোর দাবি, তারা সামরিক হুমকি প্রশমিত করতে এবং রুশভাষীদের নিপীড়ন থেকে রক্ষা করতে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠিয়েছে৷ কিয়েভ এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা যুদ্ধের জন্য একটি ভিত্তিহীন অজুহাত হিসেবে এটি দেখায়৷তিনি বলেন, এমনকি ক্রেমলিন স্বীকার করেছে যে জনসংখ্যার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ অভিযানকে সমর্থন করে না৷
-
রাশিয়ায় নতুন নামে ম্যাকডোনাল্ডস
ম্যাকডোনাল্ডসের রাশিয়া ত্যাগ
ইউক্রেনে হামলা শুরুর প্রতিবাদে রাশিয়া ছেড়ে গেছে ম্যাকডোনাল্ডসসহ অনেক পশ্চিমা ব্র্যান্ড৷
-
রাশিয়ায় নতুন নামে ম্যাকডোনাল্ডস
নতুন নাম
রাশিয়ায় ম্যাকডোনাল্ডসের রেস্টুরেন্টগুলো আবার জমজমাট হয়ে উঠছে৷ সাইবেরিয়ার ব্যবসায়ী আলেকজান্ডার গভর রাশিয়ায় ম্যাকডোনাল্ডসের ব্যবসা কিনে নিয়েছেন৷ নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন ‘ভকুসনো অ্যাণ্ড টোচকা’, যার ইংরেজি অর্থ ‘টেস্টি অ্যাণ্ড দ্যাটস ইট’ আর বাংলা হতে পারে এমন, ‘সুস্বাদু এবং এটাই’৷
-
রাশিয়ায় নতুন নামে ম্যাকডোনাল্ডস
লোগো
সবুজ পটভূমিতে দুটি ফ্রাইস ও হ্যামবার্গারের একটি প্যাটি৷ দেখতে কি ইংরেজি ‘এম’ অক্ষরের মতো লাগছে?
-
রাশিয়ায় নতুন নামে ম্যাকডোনাল্ডস
উদ্বোধন
রোববার মস্কোর পুশকিন চত্বরে ‘ভকুসনো অ্যাণ্ড টোচকা’র আউটলেটের সামনে ক্রেতাদের ভিড়৷ তিন দশক আগে সেখানেই রাশিয়ার প্রথম ম্যাকডোনাল্ডস চালু হয়েছিল৷
-
রাশিয়ায় নতুন নামে ম্যাকডোনাল্ডস
গ্রীষ্মের মধ্যে সব আউটলেট চালু হবে
রাশিয়ায় ম্যাকডোনাল্ডসের প্রায় সাড়ে আটশ আউটলেট ছিল৷ রোববার ১৫টি আউটলেটের উদ্বোধন হয়৷ প্রধান নির্বাহী অলেগ পারোভ জানান, এ মাসের মধ্যেই ২০০টি আউটলেট চালু হবে৷ আর গ্রীষ্মের মধ্যে বাকিগুলো চালুর পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷
-
রাশিয়ায় নতুন নামে ম্যাকডোনাল্ডস
‘বিগ ম্যাক’ নেই
ভকুসনো অ্যাণ্ড টোচকার আউটলেটগুলোর ভেতরের সাজসজ্জা ম্যাকডোনাল্ডসের মতোই থাকছে৷ এছাড়া ম্যাকডোনাল্ডসের যন্ত্রপাতিও ব্যবহার করছে ভকুসনো অ্যাণ্ড টোচকা৷ তবে মেনুতে ম্যাকডোনাল্ডসের মূল বার্গার বিগ ম্যাক নেই৷ নেই ম্যাকফ্লারির মতো ডেজার্ট আইটেমও৷
-
রাশিয়ায় নতুন নামে ম্যাকডোনাল্ডস
দাম কম
বিগ ম্যাক, ম্যাকফ্লারি না থাকলেও ম্যাকডোনাল্ডসের বেশ কিছু বার্গার আইটেম থাকছে৷ তবে দাম ম্যাকডোনাল্ডসের চেয়ে কিছুটা কম রাখা হচ্ছে৷ যেমন ডাবল চিজবার্গারের দাম রাখা হচ্ছে ১২৯ রুবল৷ ম্যাকডোনাল্ডসে রাখা হতো ১৬০ রুবল৷ এছাড়া ফিশ বার্গারের দাম ম্যাকডোনাল্ডসে ছিল ১৯০ রুবল৷ ভকুসনো অ্যাণ্ড টোচকায় বিক্রি হচ্ছে ১৬৯ রুবলে৷
-
রাশিয়ায় নতুন নামে ম্যাকডোনাল্ডস
স্বাদ মোটামুটি একই
১৫ বছরের সের্গেই বলছে, তার কাছে কোলাটা একটু অন্যরকম মনে হয়েছে৷ তবে বার্গারের স্বাদে সে কোনো পার্থক্য পায়নি৷ প্রধান নির্বাহী অলেগ পারোভ জানান, ক্রেতারা যেন পরিবেশ ও খাবার মানে পার্থক্য ধরতে না পারেন, সেটাই তাদের লক্ষ্য৷
ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্ব
মুরাটভ বলেন, যারা বিশ্বাস করেন যে অভিজাতদের মধ্যে বিভক্তির ফলে রাশিয়ায় পরিবর্তন আসতে পারে তারা ভুল করেছেন৷ তার কথায়, শক্তিগুলো কখনো এতটা ঐক্যবদ্ধ ছিল না৷ ক্ষমতায় থাকা লোকদের কোথাও যাওয়ার নেই৷ ইউরোপ নয়, আমেরিকা নয়, অন্য কোথাও তাদের অনুমতি নেই৷ সাবমেরিনের ক্রু-দের মতো অবস্থা, পালানোর পথ নেই৷ তারা প্রেসিডেন্টকে ঘিরে ঐক্যবদ্ধ৷''
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে যদি জীবনযাত্রার মান ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে রুশ নাগরিকেরা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে যেতে পারে এমন পরামর্শ নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন৷ মুরাটভ জানান, রাশিয়া এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুটিন যতদিন ক্ষমতায় থাকবেন, যতক্ষণ তিনি নিজেকে উপযুক্ত মনে করেন৷ তিনি মনে করেন, এটি রাশিয়ার মঙ্গলের জন্য৷ তিনি রাষ্ট্রপতি হবেন নাকি কোনো রাজা হবেন, আমি জানি না৷ কিন্তু স্বৈরাচারী হওয়ার দিকে তার ঝোঁক একেবারে স্পষ্ট৷''
পদক নিলাম করে কী পরিমাণ অর্থ আশা করছেন জানতে চাইলে, মুরাটভ বলেন, ২০ লাখ ডলার বা তার বেশি দাম উঠতে পারে বলে তিনি শুনেছেন৷
আরকেসি/জেডএ (রয়টার্স)
-
রাশিয়ার অর্থনীতিতে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব
নিষেধাজ্ঞার বহর
২২ ফেব্রুয়ারির পর থেকে রাশিয়ার উপর ৮,২২৫টি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বিভিন্ন দেশ৷ আমদানি-রপ্তানি, ঋণ প্রদান, লেনদেন ব্যবস্থা সুইফট থেকে বাদ দেয়াসহ নানা নিষেধাজ্ঞা ঝুলছে দেশটির উপরে৷ বৈশ্বিক নিরাপত্তা ঝুঁকি ও নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কাজ করা কাস্টেলাম-এর হিসাবে সবচেয়ে বেশি দুই হাজার ২৬টি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷ এরপর আছে সুইজারল্যান্ড, ক্যানাডা, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, জাপান৷
-
রাশিয়ার অর্থনীতিতে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব
রুবলের উল্লম্ফন
নিষেধাজ্ঞার পরও রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপে দেশটির মুদ্রা দুর্বল হওয়ার বদলে শক্তিশালী হয়েছে৷ জানুয়ারির পর থেকে মে পর্যন্ত ডলারের বিপরীতে রুবল ৪০ শতাংশ শক্তিশালী হয়েছে৷ জ্বালানি তেলের উচ্চমূল্য, রাশিয়া থেকে আমদানি পণ্যের মূল্য রুবলে পরিশোধের বাধ্যবাধকতা এর পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে৷
-
রাশিয়ার অর্থনীতিতে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব
বেড়েছে মূল্যস্ফীতি
জুনের হিসাবে এক বছর আগের তুলনায় রাশিয়ায় মূল্যস্ফীতি বা জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ১৭ শতাংশ৷ তবে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার কারণে যতটা মূল্যস্ফীতি হবে বলে ধারণা করা হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে বছর শেষে তা আরো কম হবে৷ যে কারণে মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস ১৮ থেকে ২৩ শতাংশের বদলে ১৪ থেকে ১৭ শতাংশে নামিয়ে এনেছে তারা৷
-
রাশিয়ার অর্থনীতিতে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব
খরচ কমিয়েছেন ভোক্তারা
জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে কেনাকাটা কমিয়ে দিচ্ছেন রাশিয়ার মানুষ৷ পণ্যের মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটের হিসাব থেকে এমন তথ্যই মিলছে৷ গত এপ্রিলে যা ৫৪ শতাংশ কমেছে বলে রাশিয়ার দৈনিক কমারস্যান্টকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে রয়টার্স৷ ফেডারেল স্ট্যাটিস্টিকস সার্ভিসের হিসাবে একই মাসে খুচরা বিক্রি কমেছে ৯.৭ শতাংশ৷ ব্যবসা ও ভোক্তা ব্যয়ে ‘চাহিদা সংকট’ রয়েছে বলে স্বীকার করেছেন অর্থমন্ত্রী ম্যাক্সিম রেশেটনিকভও৷
-
রাশিয়ার অর্থনীতিতে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব
প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসে পরিবর্তন
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী রাশিয়ায় এপ্রিলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমেছে তিন শতাংশ৷ মে মাসে দেশটির সরকার থেকে জানানো হয়েছিল চলতি বছর জিডিপি সাত দশমিক আট শতাংশ কমতে পারে৷ তবে অর্থমন্ত্রী ম্যাক্সিম রেশেটনিকভ সম্প্রতি বলেছেন, এই হার পাঁচ থেকে ছয় শতাংশে সীমাবদ্ধ থাকবে৷ অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সের পূর্বাভাস, বিদেশি বিনিয়োগ ও শিল্পোৎপাদন কমায় জিডিপি কমবে ১৫ শতাংশ৷
-
রাশিয়ার অর্থনীতিতে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব
আমদানি কমেছে অনেক
যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞায় বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ও শিল্প উৎপাদন কমায় রাশিয়ার আমদানি ব্যাপকভাবে কমেছে৷ রাশিয়ার বাণিজ্যিক ব্যাংক ওটক্রিতির তথ্য দিয়ে দ্য মস্কো টাইমস জানিয়েছে, এপ্রিলে ৫০০ কোটি থেকে এক হাজার কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে দেশটি৷ যেখানে ফেব্রুয়ারিতে আমদানি হয়েছে দুই হাজার ৭৫০ কোটি ডলারের পণ্য৷ তবে সরকারের পক্ষ থেকে সবশেষ মাসের আমদানি, রপ্তানি বিষয়ক তথ্য প্রকাশ করা হয়নি৷
-
রাশিয়ার অর্থনীতিতে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব
চাঙা জ্বালানি রপ্তানি
দ্য ইকোনোমিস্ট-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, জ্বালানি রপ্তানি থেকে এখনও দৈনিক ১০০ কোটি ডলার আয় করে চলেছে রাশিয়া৷ হেলসিংকিভিত্তিক দ্য সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিয়ার এয়ার-এর তথ্য অনুযায়ী, ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন হামলার পর প্রথম ১০০ দিনে জ্বালানি রপ্তানি থেকে ৯৭ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে মস্কো৷ এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল-এর তথ্য অনুযায়ী, বছরের প্রথম পাঁচ মাসে দেশটির তেল রপ্তানি থেকে আয় ১২ শতাংশ বেড়েছে৷
-
রাশিয়ার অর্থনীতিতে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব
গাড়ি বিক্রিতে ধাক্কা
অ্যাসোসিয়েশন অব ইউরোপিয়ান বিজনেসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চাহিদা কমে যাওয়া এবং কাঁচামাল সংকটের কারণে মে মাসে গাড়ি বিক্রি রেকর্ড ৮৩ শতাংশ কমেছে৷ রুশ পরিসংখ্যান দপ্তর রসস্ট্যাট-এর তথ্য অনুযায়ী, গাড়ির দাম ৫০ শতাংশ বেড়েছে৷ গাড়ি শিল্পের ক্ষতি কাটাতে প্রণোদনার উদ্যোগ নিতে ১৬ জুন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন ভ্লাদিমির পুটিন৷
-
রাশিয়ার অর্থনীতিতে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব
সার্বিক প্রভাব কতটা?
রুশ অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘প্রথম প্রান্তিকের (অর্থনৈতিক) ফলাফল এবং এপ্রিল-মে মাসের পূর্বাভাস বলছে, যতটা খারাপ আশঙ্কা করা হয়েছিল পরিস্থিতি ততটা খারাপ হবে না৷’’ তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান এলভিরা নাবিউলিনা সেন্ট পিটার্সবার্গের অর্থনৈতিক ফোরামে বলেছেন, বিদেশি চাপে রুশ অর্থনীতি যে চাপে পড়েছে, তা অনির্ধারিত সময় ধরে চলমান থাকার শঙ্কা রয়েছে৷ পরিস্থিতি আগের অবস্থায় আর ফিরবে না বলেও আশঙ্কা তার৷
-
রাশিয়ার অর্থনীতিতে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব
প্রকৃত পরিস্থিতি
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাশিয়ার প্রকৃত পরিস্থিতি কী সেটি এখনও পরিস্কার নয়৷ দীর্ঘমেয়াদে দেশটির অর্থনীতিতে কী ধরনের প্রভাব পড়তে যাচ্ছে, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে৷ বিশেষ করে রাশিয়া ছাড়ার ঘোষণা দেয়া বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানিগুলো কর্মীদের বেতন দেয়া বন্ধ করলে তা মানুষের আয়ে প্রভাব ফেলবে৷ তবে কর্মসংস্থান, আমদানি, রপ্তানিসহ অর্থনীতির সাম্প্রতিক বিভিন্ন পরিসংখ্যান প্রকাশ বন্ধ রেখেছে দেশটির সরকার৷