অভিষেকের কনভয়ে ‘হামলা': অভিযোগের তীর কুড়মিদের দিকে
২৭ মে ২০২৩রেল থেকে সড়কপথ অবরোধ এবং রাজনৈতিক নেতাদের ঘেরাওয়ের কর্মসূচি নিয়েছে তারা৷ সব দলের নেতাদেরই পথ আটকানো হচ্ছে ‘ঘাগরা ঘেরা' কর্মসূচিতে৷
মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া, তৃণমূল বিধায়ক জুন মালিয়া, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, প্রবীণ সিপিএম নেতা বিমান বসুকেও পড়তে হয়েছে ঘেরাওয়ের মুখে৷
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও ঘেরাওয়ের মুখে পড়েছেন৷ শুক্রবার সন্ধ্যায় ‘নবজোয়ার' কর্মসূচিতে তিনি ঝাড়গ্রামের শালবনী যাওয়ার পথে একই কর্মসূচি নেয় কুড়মিরা৷ কিন্তু গড়শালবনী এলাকায় এই অবরোধ সহিংসতায় রূপ নেয়৷ অভিযোগ, লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায় আন্দোলনকারীরা৷ ছোঁড়া হয় ইট-পাটকেল৷ এসময় ভেঙে যায় কনভয়ে থাকা মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদার গাড়ির কাচ৷
এই ঘটনার পর সরাসরি কুড়মি নেতৃত্বকে হুঁশিয়ারি দেন অভিষেক৷ তিনি বলেন, ‘‘এই ঘটনার পিছনে বিজেপি রয়েছে, আর কারা রয়েছে আমরা জানি৷ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কুড়মি নেতৃত্বকে জানাতে হবে কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে৷ কারা জয় শ্রীরাম স্লোগান দিয়েছে৷''
কুড়মিরা ‘জয় গরাম' স্লোগান দিয়ে থাকে৷ গন্ডগোলের সময় অবরোধকারীদের হলুদ পতাকা নিয়ে ঘটনাস্থলে দেখা গিয়েছে সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত খবরে৷
ঘটনার পর সংবাদ সম্মেলন করেছেন কুড়মির নেতারা৷ শনিবার ঘাগরা ঘেরাও কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের কর্মীরা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন৷ যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের শাস্তি দেওয়া হোক৷ প্রয়োজনে বিচারবিভাগীয় বা সিবিআই তদন্ত হতে পারে৷ তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন৷
ঘটনার রাত থেকেই জঙ্গলমহলে ধরপাকড় শুরু করেছে পুলিশ৷ তিন কুড়মি নেতাসহ সাত জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ তাদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ৷ যদিও পরিবারের দাবি, ধৃতরা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নন৷ তারা পুলিশি জুলুমেরও অভিযোগ তুলেছেন৷
অভিষেকের অভিযোগের জেরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক উত্তেজনা৷ বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘ভাগাভাগির রাজনীতি করতে গিয়ে তৃণমূল বিপাকে পড়েছে৷ কুড়মি, মতুয়া, গোর্খা, রাজবংশী, আদিবাসী সবাই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কেন? এর ফল ওরা বুঝতে পারবে ভোটে৷''
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘একটা হামলার জেরে কুড়মিদের দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে৷ ঘটনাস্থলে দুই হাজার পুলিশ ছিল৷ তারা এই ঘটনা আটকাতে পারেনি কেন?''
কনভয় হামলার পরের দিনই জঙ্গলমহলে পৌঁছে গিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তার মন্তব্য, ‘‘বিজেপি চাইছে এখানে জাতিগুলির মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে৷ এটা জঙ্গলমহল অশান্ত করার চক্রান্ত৷ এরপর এখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করবে৷''
যদিও পর্যবেক্ষক অমল মুখোপাধ্যায় শুক্রবারের ঘটনাকে ‘চক্রান্ত' বলতে চাইছেন না৷ তার বক্তব্য, ‘‘ঘটনাস্থলে কোনো বিজেপি নেতা বা সদস্য ছিলেন না৷ তাই এটাকে স্বতঃস্ফূর্ত বলতে হচ্ছে৷ রাজ্য কুড়মিদের দাবি মেনে প্রস্তাব কেন্দ্রকে পাঠায়নি৷ তাই এই আন্দোলন৷''
জঙ্গলমহলের বৃহৎ জনগোষ্ঠী হিসেবে কুড়মিদের পরিচয়৷ এই এলাকায় ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিপুল জয় পেয়েছিল বিজেপি৷ ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কিছুটা জমি ফিরে পেয়েছে৷ এই পরিস্থিতিতে কুড়মিদের আন্দোলন পঞ্চায়েত ভোটের আগে চিন্তায় রেখেছে শাসক দলকে৷
কুড়মি নেতৃত্বের একাংশের অভিযোগ, রাজ্য সরকার জনজাতি বিষয়ক প্রস্তাব কেন্দ্রের কাছে পাঠাচ্ছে না৷ এর ফলে তাদের স্বীকৃতি লাভের পথে বাধা তৈরি হচ্ছে৷ আবার অন্যান্য আদিবাসী জনগোষ্ঠী কুড়মিদের জনজাতি স্বীকৃতি দেয়ার বিরোধী৷ সাঁওতাল সংগঠনের সদস্যরা ইতিমধ্যে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে গিয়ে এর বিরোধিতায় দরবার করে এসেছেন৷
রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কুড়মিরা শুধু সংখ্যায় বেশি নন, তাদের মধ্যে শিক্ষার হার বেশি৷ তাদের জনজাতি স্বীকৃতি দিলে অন্যান্য আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কাছে প্রতিযোগিতা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে৷ উভয় চাপে সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন৷ কুড়মিরা জঙ্গি আন্দোলন করে সিদ্ধান্তকে ত্বরান্বিত করতে চাইছেন৷''