1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অধীর বনাম কংগ্রেস হাইকমান্ডের সংঘাতে লাভ কার?

গৌতম হোড় দিল্লি
৩১ জুলাই ২০২৪

লোকসভা নির্বাচনের পর আবার লড়াইয়ের ময়দানে কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী। তবে এবার লড়াইটা তার নিজের দলের হাইকমান্ডের বিরুদ্ধে।

https://p.dw.com/p/4iwzd
বহরমপুরে লোকসভার প্রচারে অধীর চৌধুরী।
অধীর চৌধুরীর সঙ্গে কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের সংঘাত তীব্র হয়েছে। ছবি: Goutam Hore/DW

লোকসভা নির্বাচনে অধীর এবার বহরমপুর থেকে জিততে পারেননি। পরপর পাঁচবারের জেতা সাংসদ হেরে গেছেন রাজনীতিতে আনকোরা সাবেক ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠানের কাছে। কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গ থেকে মাত্র একটি আসনে জিতেছে। মালদহ দক্ষিণ থেকে ইশা খান চৌধুরী হলেন পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র কংগ্রেস সাংসদ। লোকসভা নির্বাচনে এমন ভরাডুবির পরই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন অধীর।

কিন্তু সেই ইস্তফা এখনো পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়নি। ডিডাব্লিউকে অধীর বলেছেন, ''আমি খুবই বিভ্রান্ত। কী হচ্ছে তা বুঝতে পারছি না। আমি ইস্তফা দিয়েছি। তা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হলে তো আমার জানা উচিত ছিল। কিন্তু এখনো আমাকে কিছুই বলা হয়নি। ফলে আমি খুবই কনফিউজড।''

তার উপর আলোচনার জন্য প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের দিল্লিতে ডেকেছিল হাইকম্যান্ড। রাহুল গান্ধী বা মল্লিকার্জুন খাড়গে তাদের সঙ্গে দেখা করেননি। অধীরদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক কে সি বেনুগোপাল ও পশ্চিমবঙ্গের পর্যবেক্ষক গোলাম মীর। সেখানে বৈঠকে অধীরকে 'প্রাক্তন সভাপতি' বলেও সম্বোধন করা হয়।

এরপর মঙ্গলবার রাতে সামাজিক মিডিয়ায় একটা পোস্ট করেন অধীর। সেখানে তিনি কোনো রাখঢাক না করে বলেছেন, ''অন্যায়ের সঙ্গে কখনো আপস করিনি, করবোও না।''

অধীরের সাফ কথা, ''আমাদের লোকেদের মারছে, যে কর্মীরা রাতদিন তৃণমূলের হাতে মার খেলো, খাচ্ছে, তাদের জন্য আমরা বলবো না তো কে বলবে?''

অধীরের প্রতিবাদ

আসলে নিজের সভাপতি থাকা না থাকার থেকেও অধীরের সামনে বড় প্রশ্ন হলো, তৃণমূল সম্পর্কে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নীতি। অধীর কোনোদিন তৃণমূলের সঙ্গে জোট চাননি। তিনি বামেদের সঙ্গে জোট করার বিষয়টির উপর জোর দিয়ে এসেছেন।  এবারো ভোটের আগে বামেদের সঙ্গে জোট করা নিয়ে তিনি অনড় ছিলেন এবং সেই জোট হয়েছিল।

পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুরে কঠিন লড়াইয়ে অধীর চৌধুরী

অধীর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ''শাসক তৃণমূল আমাদের দল ভাঙছে প্রতিদিন! ওরা তো ‘ইন্ডিয়া' জোটে শামিল হয়েও আমাদের ওপর অত্যাচার বন্ধ করেনি ! তৃণমূল তো এ রাজ্যের শাসক দল, তারা কি আমাদের কংগ্রেস কর্মীদের কোনোরকম রেহাই দিয়েছে? আজও জেলে বন্দি আমাদের কর্মী, মিথ্যা মামলায় জর্জরিত,আমাদের পার্টি অফিস দখল করেছে, করছে, বিরাম নেই তো ! তাহলে সেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে কীকরে চুপ করবো, করলে আমার সেই সহকর্মীদের প্রতি অবিচার অন্যায় করা হবে! আমি পারবো না।''

অধীর জানিয়েছেন, ''যে কর্মীরা রাতদিন লড়াই করছে, দলের পতাকা নিয়ে রাস্তায় আন্দোলন করছে তাদের সঙ্গেও দিল্লি কথা বলুক, তাদের মতামতও জানা দরকার। তাদেরকেও দিল্লিতে ডাকা দরকার। আমি আমার সেই সকল সহকর্মীদের সাথে রাস্তায় থাকবো, আন্দোলনের পথে, অন্যায়ের সাথে আপণ করতে শিখিনি, করবোও না।''

এই মত যে শুধু অধীরের একার তা নয়। পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সব কংগ্রেস নেতা তৃণমূল বিরোধিতার পথে চলতে চান। এমনিতে রাজ্যের প্রবীণ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান ও অধীর চৌধুরীর মধ্যে সম্পর্ক খুব মধুর নয়, কিন্তু তৃণমূল-বিরোধিতার প্রশ্নে দুজনেই একই মেরুতে দাঁড়িয়ে। লোকসভা ভোটের আগে ডিডাব্লিউকে দেয়া সাক্ষাৎকারে আব্দুল মান্নান  বলেছিলেন, তৃণমূলের সঙ্গে জোট করলে দল উঠে যাবে। তৃণমূল বিরোধিতার রাস্তা থেকে সরা উচিত নয়।

হাইকমান্ডের অবস্থান

কংগ্রেস হাইকমান্ডের সঙ্গে এই ক্ষেত্রে অধীর-সহ পশ্চিমবঙ্গের অন্য নেতাদের অবস্থান মিলছে না। হাইকমান্ড জাতীয় পরিস্থিতির নিরিখে বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে চায়। তারা চায়, মোদীবিরোধী ও বিজেপিবিরোধী অবস্থানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও পাশে পেতে। সেজন্য সংসদে তৃণমূলসহ সব বিরোধীকে সঙ্গে নিয়ে তারা মোদী সরকারের বিরোধিতা করতে চায়।  সে কারণেই তারা মমতাকেও চটাতে চায় না।

প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''অধীরের কাছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি অনেক বেশি জরুরি। আর পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতি করতে গেলে তাকে মমতার বিরোধিতা করতেই হবে।আর কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতারা জাতীয় স্তরে মমতাকে পাশে পেতে উদগ্রীব। এখানেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও অধীরদের অবস্থানের মধ্যে সংঘাত দেখা দিচ্ছে।''

কী হতে চলেছে?

প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত ভট্টাচার্য ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''অধীরই ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের শেষ নেতা যার সর্বভারতীয় পরিচিতি আছে, যিনি জাতীয় রাজনীতিতে পরিচিত মুখ, কিন্তু যার রাজনীতির শিকড় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। বলা যেতে পারে তিনি হলেন লাস্ট অফ দ্য মোহিকানস।''

জয়ন্ত মনে করেন, ''অধীর না থাকলে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস পুরোপুরি মমতার উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকবে। তাদের দেয়া দু-একটি আসনে তারা লড়বে। খাতায়-কলমে কংগ্রেস থাকবে ঠিকই, কিন্তু তাদের ধার বা ভার কিছুই থাকবে না। সেই ভবিতব্যের দিকেই কি যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস?''

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি গৌতম হোড়৷
গৌতম হোড় ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷