স্কুলের শিক্ষার্থী যখন কোম্পানির মালিক
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭১৭ বছর বয়সি রুবিন লিন্ড মাত্র চার সপ্তাহ আগে তার কোম্পানি রেজিস্ট্রি করেছে৷ স্কুলে যাওয়ার পরিবর্তে সে আজ একটি বিজ্ঞাপনের শুটিং করবে৷ বিজ্ঞাপনটি অন্যান্য টিন-এজারদের তাদের নিজেদের কোম্পানি খুলতে উদ্বুদ্ধ করবে৷
গত কয়েক মাস বিশেষ মজায় কাটেনি, জানালো রুবিন৷ অনবরত স্থানীয় আদালতে যেতে হয়েছে৷ কোর্টের ক্লার্কের চিন্তা ছিল, রুবিন দেনায় পড়বে৷ রুবিন জানাল, ‘‘না দেখানোর চেষ্টা করি, কিন্তু আসলে আমি এই সব নানা সিদ্ধান্ত আর সরকারি অফিসে হাঁটাহাঁটি করতে করতে ক্লান্ত৷''
রুবিনের চুক্তি স্বাক্ষর করার অধিকার নেই, যদিও সে অ্যাপটা নিজেই করেছে৷ বইয়ের কন্টেন্ট সরাসরি স্মার্টফোনে ঢোকানো হবে, যাতে পথেঘাটে যাওয়ার সময়ও শেখা যায়৷
কী করে কোম্পানি চালু করতে হয়, তা শিখেছে ইন্টারনেট থেকে, স্কুল থেকে নয়৷ স্কুল সম্পর্কে রুবিনের মন্তব্য, ‘‘ও সবই বাস্তব থেকে অনেক দূরে৷ একটা কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে বসলাম বটে, কিন্তু আমাদের কাছে একটা কড়ি নেই৷ মাথা ঠান্ডা করে দেখতে হবে, কোন ধরনের কোম্পানি আমাদের জন্য ভালো, লায়াবিলিটি কতটা....এসব জিনিস স্কুলে শেখানো হয় না৷''
মেডিক্যাল দস্তানা
পরের দু'জন সেল্ফমেড বিজনেসম্যান৷ দু'জনের বয়সই ১৯৷
শোবার ঘরের বদলে ওয়ার্কশপ হলেই বোধহয় গের্নো জ্যুমারমানের ভালো হতো৷ সে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র৷ তার রিহ্যাবিলিটেশন গ্লাভ বা মেডিক্যাল দস্তানাটি একটি ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি চশমার সঙ্গে যুক্ত৷ ভিডিও গেম খেলতে খেলতে হাতের তালু ও আঙুলগুলোর ফিজিওথেরাপি চলবে, এই হলো আইডিয়া৷ গের্নো যখন ১৫, তখনই তার মাথায় ধারণাটা এসেছিল৷ এখন সে কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছে, ইউনিভার্সিটির পড়াশুনোর সময় কোথায়? গের্নো জানাল, ‘‘এ ধরনের একটা প্রকল্পে সারাটা সময় দিতে হয়৷ সর্বক্ষণ ভাবতে হয়, ভুলটা কোথায়, কীভাবে ঠিক করা যায়৷ কীভাবে কাজটা আরো ভালোভাবে করা যায়৷''
স্টার্টআপ প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে জায়গা পেয়েছে গের্নো৷ তার মধ্যে আছে ১৫,০০০ ইউরোর সূচনার পুঁজি, বিজনেস ম্যানেজমেন্টের পড়াশুনো আর একক কোচিং৷
প্রযুক্তি তৈরি, বিনিয়োগকারীরাও আগ্রহী, কিন্তু এই বাজারে নিজের পথ করে নেওয়া সহজ নয়!
ট্রেড ফেয়ারে টিন-এজার?
ট্রেড ফেয়ারে তার মতো একজন টিন-এজারকে দেখে অনেকে ঘাবড়ে যান৷ গের্নো বয়স নিয়ে তার সমস্যার কথা শোনাল: ‘‘প্রোজেক্ট প্রেজেন্টেশনের পর কোনো প্রফেসর ইন্টারেস্টেড হলে হয়ত গোড়াতেই জিজ্ঞেস করে বসবেন: প্রকল্পটা চালাচ্ছে কে? তারপর যখন শোনেন যে, আইডিয়াটা আমার...৷''
নেদারল্যান্ডসের একটি ছোট কনসাল্টেন্সি সাহায্য করবে৷
হেল্থ সেক্টরে সাততাড়তাড়ি কিছু হয় না৷ স্বাস্থ্যবীমা কোম্পানিগুলি বা রোগীরা চট করে নতুন কিছু মানতে রাজি নন৷ গের্নো আর তার সমবয়সি তিন সহযোগীকে কোনো অভিজ্ঞ অংশীদার খুঁজতে বলা হয়েছে৷
মেড ভ্যালু সংস্থার উপদেষ্টা রিচার্ড ফন ডেন ব্রুক বললেন, ‘‘বয়স কম হওয়ার সুবিধে এই যে, তারা পূর্ণ উৎসাহ নিয়ে তাদের উদ্ভাবনের বিষয়ে বক্তব্য রাখে৷ কিন্তু ওদের এমন মানুষও দরকার, যারা সমালোচনামূলক প্রশ্ন করবেন, ফাঁদে পড়া থেকে রক্ষা করবেন৷''
স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাই তো আজ
১৭ বছর বয়সের রুবিন লিন্ড কর্নেলসেন প্রকাশনীর এক প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন৷ রুবিনের নিজের কোনো অফিস নেই, তাই কাফেতেই বসতে হবে৷
রুবিন চায় যে, কর্নেলসেন প্রকাশনী তাদের স্কুলের পাঠ্যপুস্তকগুলো তার অ্যাপে সরবরাহ করে, কেননা, স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা ক্রমেই আরো বেশি ডিজিটাল নেটিভ হয়ে উঠছে! রুবিনের বক্তব্য হলো, ‘‘আজ আমরা আর শুধু হাতে বই নিয়ে ঘুরে বেড়াই না, বরং সাথে আমাদের স্মার্টফোন থাকে৷ আমি যদি স্মার্টফোন থেকেই পরীক্ষার পড়া করতে পারি, তাহলে বই নিয়ে বেড়াবো কেন?''
পরের বছর স্কুলের পড়া শেষ করছে রুবিন৷ আপাতত তার মাথায় নিজের কোম্পানি ছাড়া আর কিছু নেই৷
পাউলা হেনফ্লিং/এসি
আশীষ চক্রবর্ত্তী