1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
সমান অধিকারবাংলাদেশ

মায়ের অভিভাবকত্বের স্বীকৃতি : বড় প্রাপ্তির পথে যাত্রা?

সমীর কুমার দে
২৫ জানুয়ারি ২০২৩

শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর তথ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন ফরমে বাবার পাশাপাশি মা অথবা ‘আইনগত অভিভাবকের'ও স্বীকৃতি দিয়েছে হাইকোর্ট। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর ফলে দীর্ঘ অপেক্ষার পর সমাজে নারী পেলো প্রাপ্য স্বীকৃতি৷

https://p.dw.com/p/4MgDh
Dhaka Bangladesch 7 von 19
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan

মঙ্গলবারের এই রায়ের ফলে অভিভাবকের ঘরে বাবা অথবা মা অথবা আইনগত অভিভাবক- এই তিন বিকল্পের যেকোনো একটি উল্লেখ করেই শিক্ষার্থীরা এখন থেকে ফরম পূরণ করতে পারবে।

তবে নারী অধিকারকর্মী ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিশিষ্টজনেরা মনে করেন উচ্চ আদালতের এই সিদ্ধান্ত নারীর অধিকার অর্জনের প্রথম ধাপ, এখনও অনেকদূর যেতে হবে৷ এখনও অভিন্ন পারিবারিক আইন, সম্পত্তির অধিকারসহ অনেকগুলো পদক্ষেপ বাকি রয়েছে, যেগুলো আদায়ের জন্য এখনও আন্দোলন করে যাচ্ছেন নারী অধিকারকর্মীরা।  

এই অর্জনে যারা অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন তাদের একজন রিটকারী ব্যারিস্টার সারা হোসেন। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, "লিঙ্গ বৈষম্যমূলক প্রথা দূরীকরণের ক্ষেত্রে এই রায়টি যুগান্তকারী। প্রত্যেক ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশের অধিকার এবং শিক্ষা লাভের অধিকার নিশ্চিতে এই রায় অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। লিঙ্গভিত্তিক সকল বৈষম্য দূরীকরণের সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতি পূরণে এবং লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলের অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন নিশ্চিতকরণে আজকের এই রায়ের যথাযথ বাস্তবায়ন প্রয়োজন। পাশাপাশি আমাদের দেশে অনেক ক্ষেত্রেই আইন ঠিক আছে, কিন্তু বাস্তবায়নে গিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। অনলাইনে যতগুলো ফরম আছে, সেখানে সব জায়গায় বাবার নাম বাধ্যতামূলক করা আছে। অথচ অনেক জায়গাতেই আইনে এর প্রয়োজন নেই। এগুলো নিয়ে এখন কাজ করতে হবে।”

এটা নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ১০০ ধাপের এক ধাপ: আইনুন নাহার সিদ্দিকা

"বাবার পরিচয় নেই, বন্ধ হলো মেয়ের লেখাপড়া” শিরোনামে ২০০৭ সালের ২৮ মার্চ  দৈনিক প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও নারীপক্ষ ২০০৯ সালে ওই রিট করে। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ৩ আগস্ট রুলসহ আদেশ দেন হাইকোর্ট। রুলের ওপর চ‚ড়ান্ত শুনানি শেষে গত মঙ্গলবার বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেয়।

কেন এই রিট সে বিষয়ে বলতে গিয়ে আবেদনকারীদের আইনজীবী আইনুন নাহার সিদ্দিকা ডয়চে ভেলেকে বলেন, "এই রায়ের ফলে মায়ের অধিকারও আংশিক প্রতিষ্ঠিত হলো। আর মাতা-পিতার পরিচয়হীন যেকোনো শিশুর শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত হলো। আমি মনে করি, এটা নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ১০০ ধাপের এক ধাপ। আমাদের আরও কাজ করতে হবে।” কোন প্রেক্ষাপটে এই রিট, জবাবে তিনি বলেন, "রাজশাহী বোর্ডের অধীন এসএসসির ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণে বাবার নাম দিতে না পারায় এক শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন হয়নি। তখন শিক্ষার্থীর অভিভাবক হিসেবে বাবা এবং মায়ের নাম লেখা বাধ্যতামূলক ছিল। বৈষম্যমূলক এই বিধান চ্যালেঞ্জ করে আমরা রিটটি করেছিলাম। অভিভাবক হিসেবে এখনো শিক্ষা ক্ষেত্রের প্রতিটি স্তরে বাবা এবং মায়ের নাম লিখতে হয়। রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, বাবা অথবা মা অথবা আইনগত অভিভাবকের নাম উল্লেখ করে রেজিস্ট্রেশনসহ শিক্ষা ক্ষেত্রে সব ফরম পূরণ করা যাবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সব শিক্ষা বোর্ডের প্রতি এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে বাবা অথবা মা অথবা আইনগত অভিভাবক হিসেবে যেকোনো একটি পরিচয় উল্লেখ করে ফরম পূরণ করা যাবে।”  

সম্পত্তির অধিকারের ক্ষেত্রেও আইন সংশোধন করতে হবে: ডা. মালেকা বানু

রাষ্ট্রপক্ষ এই সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করেছিল কিনা জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমরা কোনো বিরোধিতা করিনি। বরং মায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আমরা সহযোগিতা করেছি। যখন রিটটি করা হয়, তখন শিক্ষা ক্ষেত্রে অভিভাবকের ঘরে তথ্য হিসেবে বাবার নাম লেখা বাধ্যতামূলক ছিল। এরপর মায়ের নাম উল্লেখ করতে হতো। আগে শিক্ষা ফরমে শুধু পিতার নাম থাকলেও ২০০০ সালে সেখানে মায়ের নাম লেখাও বাধ্যতামূলক করে সরকার। কিন্তু হাইকোর্টের এই রায়ের ফলে এখন থেকে শুধুমাত্র মায়ের পরিচয়েও যেকোনো সন্তান শিক্ষার অধিকার পাবেন।”

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. মালেকা বানু ডয়চে ভেলেকে বলেন, "শিক্ষা ক্ষেত্রে ফরম পূরণে পিতার নাম বাধ্যতামূলকভাবে উল্লেখের সুনির্দিষ্ট আইনগত কোনো বিধান না থাকা সত্ত্বেও এতকাল ধরে পিতা মাতার পরিচয় বিহীন শিশুরা শিক্ষা লাভের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছিল। এখন আমরা আশা করছি, এ যুগান্তকারী রায়ের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সকল শিশুর শিক্ষা গ্রহণের অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে এবং অভিভাবকত্বের ক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসন হবে। এখন আমাদের সামনের দিনে যে কাজটা করতে হবে সেটা অভিন্ন পারিবারিক আইন বাস্তবায়নের কাজ। ইতিমধ্যে আমরা আন্দোলনও করছি। সম্পত্তির অধিকারের ক্ষেত্রেও আইন সংশোধন করতে হবে। এগুলো নিয়ে আন্দোলনের পাশাপাশি আইনী লড়াইয়েও আমরা যাব।”

নারীপক্ষের সদস্য কামরুনন্নাহারও বলেন, "সন্তানের উপর মায়ের অভিভাবকত্বের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে এটা এক বিরাট অর্জন। এই অর্জনকে কার্যকর ভাবে প্রয়োগের লক্ষ্যে আমাদের আরও তৎপর হতে হবে।”