1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মানুষের পাশে থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে অধীর

২১ জুন ২০২১

বিধানসভা নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর আবার দুর্গতদের পাশে অধীর চৌধুরী। সাহায্য করছেন করোনা আক্রান্তদের। খাবার দিচ্ছেন দুর্গতদের।

https://p.dw.com/p/3vGkr
ছবি: Syamantak Ghosh/DW

আবার চেনা রূপে অধীর চৌধুরী। বিধানসভা নির্বাচনে হারের ধাক্কা সামলে তিনি আবার মানুষের পাশে। বিশেষ করে করোনা রোগী ও দুর্গতদের সমানে সাহায্য করছেন তিনি। তার নিজের কেন্দ্র বহরমপুর বা নিজের জেলা মুর্শিদাবাদে তো বটেই, গোটা পশ্চিমবঙ্গেই তিনি সাধ্যমতো দুর্গত মানুষজনের পাশে দাঁড়াবার চেষ্টা করছেন। বিশেষ করে এই করোনাকালে। অধীরের ভলেন্টিয়ার্সরাও নেমে পড়েছেন সাহায্যের কাজে।

বহরমপুরে করোনায় আক্রান্তদের কাছে খাবার পাঠাচ্ছেন এবং সব ধরনের প্রয়োজনে পাশে থাকার চেষ্টা করছেন অধীর। এমনকী, করোনা হাসপাতালের বাইরে রোগীর আত্মীয়দেরও নিয়মিত খাবার দিচ্ছেন। অধীরের নির্দেশে তার টাউন ক্লাবের সদস্য ও কংগ্রেসের কর্মীরা দিন-রাত এই কাজ করে যাচ্ছেন। ডয়চে ভেলেকে অধীর জানিয়েছেন, ''আমার কাছে মানুষের পাশে থাকার সঙ্গে ভোটের কোনো সম্পর্ক নেই। আমি যখন রাজনীতি করতাম না, তখনও আমার জেলায় বন্যা হলে ঝাঁপিয়ে পড়তাম, মানুষের বিপদ হলে ঝাঁপাতাম। আজও তাই করি। তাতে ভোট পেলাম বা পেলাম না, বিধায়ক হলাম কি হলাম না, সেসবের ধার ধারিনা।''

গোরাবাজারে একজনের অক্সিজেন চাই। অধীরের ছেলেরা পৌঁছে দিয়ে এসেছেন। সারাগাছি স্টেশনে একশ জন শ্রমিক কাজ করেন। তাদের ভ্যাকসিন দিতে হবে। অধীরের ছেলেরা গিয়ে তাদের নাম নথিভুক্ত করে এসেছেন। চিঠি লিখে এবং তাগাদা দিয়ে বহরমপুর হাসপাতালে দুইটি অক্সিজেন প্ল্যান্ট চালু করেছেন তিনি। তার অনুরোধে ও চেষ্টায় পিএম কেয়ার্স তহবিলের টাকায় মুর্শিদাবাদে একটি করোনা হাসপাতালও করছে ডিআরডিও। গরিবদের খাবার দিচ্ছেন তারা। অধীর বলেছেন, ''আমি পশ্চিমবঙ্গে প্রথম কোভিড হাসপাতাল নিয়ে আসতে পেরেছি। এটা আমার কাছে খুব বড় ব্যাপার। বহরমপুর শহরে অক্সিজেন প্ল্যান্ট বসিয়েছি। অক্সিজেনের অভাবে মানুষ এখানে মরবে না। এটা আমার কাছে খুব বড় ব্যাপার।''

কোনো সন্দেহ নেই, অধীরের এই রবিনহুড ভাবমূর্তিই এতকাল ধরে বহরমপুর তথা মুর্শিদাবাদে তার সাম্রাজ্যকে অটুট রেখেছিল। কিন্তু এই প্রথমবার বিধানসভা নির্বাচনে নিজের জেলা থেকে একটা আসনও দলকে জেতাতে পারেননি অধীর। তার দুর্গের এভাবে পতনের পর ঘুরে দাঁড়ানোর লড়ইটা ঠিক আগের পথ ধরেই শুরু করেছেন অধীর।

পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি মমতার আমদানি: অধীর

প্রবীণ সংবাদিক সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ''এই কাজগুলোই অধীরকে স্বীকৃতি ও সমর্থন দিয়েছে। তাকে রবিনহুডের মর্যাদা দিয়েছে। যার জন্য বাম আমলে অনেক চেষ্টা করেও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যরা তাকে হারাতে পারেননি।''

আরেক প্রবীণ সংবাদিক জয়ন্ত ভট্টাচার্যের মতে, ''এটাকে এককথায় বলা যায়, রিটার্ন অফ দ্য রবিনহুড।'' ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''লোকসভায় কংগ্রেসের নেতার দায়িত্ব, জাতীয় রাজনীতিতে ভূমিকার জন্য অধীরকে মাঝখানে দিল্লিতে বেশি ব্যস্ত থাকতে হতো। তারপরেও করোনাকালে তিনি যথাসাধ্য মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আবার তিনি এই কাজে ঝাঁপিয়েছেন।''

সৌম্যর মতে, ''এটাই একমত্র পথ। হারানো জমি ফিরে পাওয়ার। বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার। এর কোনো বিকল্প নেই। অধীর বরাবর এই পথে থেকেছেন। এখনো থাকছেন। তিনি এখন রাজ্যজুড়েই কংগ্রেস কর্মীদের দিয়ে এই কাজ করানোর চেষ্টা করবেন।''

অধীর জানিয়েছেন, ''আমাদের তো সামর্থ্য কম। আমি ভিডিও কনফারেন্স করে সব জেলা কংগ্রেস নেতাদের বলেছি, মানুষের সেবা করতে। সেই কাজ হচ্ছে।'' গত ১৯ জুন রাহুল গান্ধীর জন্মদিনে রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স চালক, রেল স্টেশনের শ্রমিক ও গরিব মানুষদের কাছে চাল-গম সহ স্বাস্থ্য সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন কংগ্রেস কর্মীরা। অধীর বলেছেন, ''আমরা নিজেরা পয়সা দিচ্ছি। চেয়েচিন্তে জোগড় করছি। আমরা তো ভিখিরি। তবে আমাদের হৃদয় আছে। তাই দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।''

জয়ন্ত মনে করেন, ''অধীর প্রকৃত অর্থেই দুর্গত ও বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। এটাই তাকে ঘুরে দাঁড়ানোর রসদ জোগাবে। তার এই কাজ ও ভাবমূর্তির জেরে তিনি আবার হারানো জমি সম্ভবত ফিরে পাবেন।''