বার্লিনের হাউসবোট
২৯ ডিসেম্বর ২০১৬বার্লিন আর পট্সডামের মাঝে হাফেল নদী৷ বার্লিনের মানুষ এখানে বেড়াতে আসেন – শুধু তারাই নন৷ জলের ওপর ভাসছে হারাল্ড ভিন্ডলারের নতুন বাসা, তাঁর হাউসবোট৷ হারাল্ড জানালেন, ‘‘এটা সম্পূর্ণ অন্য একটা অভিজ্ঞতা, বেঁচে থাকার সম্পূর্ণ অন্য একটা অনুভূতি৷ এখানে হাত-পা ছেড়ে থাকা যায়, প্রতিটি দিনই যেন ছুটি কাটানোর দিন৷ স্ট্রেস নিয়ে বাড়ি ফিরলে, মুহূর্তে তা উপে যায়৷''
হারাল্ড পেশায় ফিজিও; এক বছর হলো এই হাউসবোটে বাস করছেন৷ ভিতরের আসবাবপত্র যেন বাইরের দৃশ্যের সঙ্গে মানিয়ে সহজ-সরল রাখা হয়েছে৷ আড়াই মিটার উঁচু কাচের জানলাগুলোর দরুণ হাউসবোটের প্রায় সব জায়গা থেকেই বাইরের দৃশ্য দেখা যায়৷ সোফাটাকে অতিথিদের জন্য বিছানায় পরিণত করা যায়৷
সব কিছুই আছে
কিচেনে মাইক্রোওয়েভ, ডিশওয়াশার ও একটি ইন্ডাকশন কুকার৷ বোটের নিজস্ব ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থেকে পানীয় জল আসে, বিদ্যুৎ আসে নিজস্ব জেনারেটর থেকে৷ স্নানের ঘরটা মাত্র পাঁচ বর্গমিটার হলেও বেশ বড় দেখায়৷ এমনকি একটি ছোট সনা-ও আছে৷ কাজেই শীতেও চান করে মজা৷ হারাল্ড বললেন, ‘‘আমি চেয়েছিলাম যে, একটা সাধারণ বাড়ি কিংবা ফ্ল্যাটে যে যে সুবিধে থাকে, তা আমার হাউসবোটেও থাকবে, কোনো কিছু বাদ দিতে হবে না৷ সেভাবেই আমি হাউসবোটটা তৈরি করিয়েছি৷''
হারাল্ডের প্রিয় স্থানটি হলো বোটের পিছন দিকে তাঁর শোবার ঘর৷ ঘুম থেকে ওঠার পরে এখান থেকে সটাং জলে ঝাঁপ দেওয়া যায়৷ এখানেও সোফা-কাম-বেড৷ বিরাট কাচের জানলাগুলো ঢেকে দেওয়া যায়৷ প্রত্যেক বর্গমিটার এলাকা সযত্নে কাজে লাগানো হয়েছে৷ হারাল্ড বললেন, ‘‘হাউসবোটে স্বভাবতই জায়গা একটু কম, নয়ত আর বিশেষ কোনো কমতি নেই৷ আমার জামাকাপড় রাখার আলমারি, এখানে আমি খানিক খানিক রাখতে পারি, বাকিটা বোটের খোলে রাখা যায়৷ এখান থেকেও বাইরেটা সুন্দর দেখা যায়৷ ডাবল গ্রেজিং উইন্ডো, কাজেই শীতকালেও কোনো সমস্যা নেই৷''
হাউসবোটের ৫০ বর্গমিটার এলাকার সবটাতেই ফ্লোর হিটিং, অর্থাৎ মেঝের তলায় হিটিং আছে৷ সবচেয়ে বেশি জায়গা কিন্তু ওপরের ছাদে, প্রায় ৬০ বর্গমিটার৷ হারাল্ড বললেন, ‘‘আমি চিরকালই চেয়েছিলাম যে, অনেক জায়গা থাকবে, এরকম ছাদের ওপর যা সব কিছু করা যায়, তার জন্যে৷ শুধু খাওয়াদাওয়াই নয়, সেই সঙ্গে লাউঞ্জ, একটা ছোট পুল, যার পানি কিন্তু গরম৷''
ড্রেসডেনে ফরমায়েশ দিয়ে চার লাখ ইউরো খরচ করে এই হাউসবোট বানিয়েছেন হারাল্ড, পরে নদী-খাল-বিল হয়ে তা বার্লিনে নিয়ে এসেছেন৷ তবে সেটাই সবচেয়ে বড় বাধা ছিল না৷ হারাল্ড জানালেন, ‘‘যে একটা হাউসবোট খুঁজছে কিংবা বানাতে দেওয়ার কথা ভাবছে, তার পক্ষে সবচেয়ে শক্ত কাজ হবে, হাউসবোট রাখার, অর্থাৎ নোঙর ফেলার জায়গা খুঁজে পাওয়া৷ বার্লিনে আপাতত কোনো নোঙর ফেলার জায়গাই ফাঁকা নেই৷''
হারাল্ডের বন্ধুরা রাবারের ডিঙিতে চড়ে তাঁর হাউসবোটে আসেন৷
আবহাওয়া ভালো থাকলে বোটের ছাদে বার্বেকিউ!
বার্লিনের গোলমাল, ব্যস্ততা তখন অনেক দূরে...৷৷
ফ্রানৎসিস্কা ভার্টেনব্যার্গ/এসি
দেবারতি গুহ