বাংলাদেশ আর ভারতের পার্থক্য অনেক
২৪ নভেম্বর ২০১৯ভারতে একটা টেস্ট সিরিজের জন্য অনেকদিন অপেক্ষা করেছে বাংলাদেশ৷ তা ১৯ বছর অপেক্ষার পর দুই টেস্টের সিরিজ পেয়ে কী লাভ হলো? কোন টেস্টেই তো তিন দিনও টিকতে পারেনি বাংলাদেশ! ভারতের মতো শক্তিশালী দলের মুখোমুখি হওয়ার উপযুক্ত প্রস্তুতি যে ছিল না তা কি অস্বীকার করা যাবে?
অস্বীকার করলে ক্ষতিই হবে বেশি৷ আজ ভারতে গিয়ে লজ্জাজনকভাবে হেরেছে, কাল হারবে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে, পরশু ইংল্যান্ডে, তারপর হয়তো সাউথ আফ্রিকায়- গোহারা হারার এই ধারা চলতেই থাকবে৷
ভারতের অবস্থাও কিন্তু এমনই ছিল৷ কিছুদিন আগেও তারা বাংলাদেশের মতোই নিজেদের সুবিধামতো উইকেট তৈরি করে দেশের মাটিতে বড় বড় জয় পেতো আর দেশের বাইরে গিয়ে ভালো দলের বিপক্ষে নাস্তানাবুদ হতো৷
তবে দেশের বাইরে জয়ের ধারা শুরুর প্রক্রিয়াটা তারা শুরু করেছিল ৪৮ বছর আগে৷ একাত্তরে আমাদের মুক্তিসেনারা যখন স্বাধীন ভূখণ্ডের জন্য লড়ছেন, ভারতের ক্রিকেট বোর্ড তখন দেশের ক্রিকেটে বড় পরিবর্তন আনার জন্য খুব বড় একটা পদক্ষেপ নিয়েছিল৷
তখনকার দোর্দণ্ড প্রতাপশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যাওয়ার আগে নির্বাচকরা ঠিক করেছিলেন ঘরোয়া ক্রিকেট না খেললে কাউকে জাতীয় দলে সুযোগ দেয়া হবে না৷ সেই নিয়মে ফারুক ইঞ্জিনিয়ার, রুসি সুর্তির মতো খেলোয়াড়রা বাদ পড়েছিলেন দল থেকে৷ এমনকি ফর্ম খারাপ থাকায় কিংবদন্তি ক্রিকেটার মনসুর আলী খান পতৌদি আর চান্দু বোর্দেকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতেও ভয় পাননি নির্বাচকরা৷ সমালোচনা হয়েছে প্রচুর৷ সেই সমালোচনাকে পাত্তা দেয়নি বিসিসিআই৷ খুব লাভ হয়েছিল তাতে৷ ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গ্যারি সোবার্সের ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে ফিরেছিল ভারতীয় দল৷
তারপর থেকে ক্রিকেটে অনেক সাফল্য পেয়েছে ভারত৷ ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতেছে দুবার৷ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও জিতেছে৷ তাই বলে টেস্ট ক্রিকেটের গুরুত্ব কমতে দেয়নি৷ ঘরোয়া ক্রিকেট একেবারেই আকর্ষণহীন হয়নি৷
টি-টোয়েন্টির সবচেয়ে আকর্ষণীয় আসর আইপিএল হয় ভারতে৷ তার পাশাপাশি ঘরোয়া ক্রিকেটে একদিন ও চারদিনের ম্যাচের প্রতিযোগিতাও হয় নিয়মিত৷ তাই ভারতের এখন কোনো ফরম্যাটের খেলোয়াড়েরই অভাব নেই৷
টি-টোয়েন্টির খেলোয়াড়দের নিয়ে তাদের টেস্ট দল গড়তে হয় না৷ বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলা খেলোয়াড়দের মধ্যে তাই শুধু রোহিত শর্মা টেস্ট দলে ছিলেন, বাকিরা কিন্তু টি-টোয়েন্টি দলের বাইরের৷
আরেকটা দেখার মতো বিষয় হলো, বিরাট কোহলি টি-টোয়েন্টি সিরিজে বিশ্রাম নিয়ে টেস্ট সিরিজ খুব গুরুত্ব দিয়ে খেলেছেন৷
এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কিন্তু একেবারে উল্টো অবস্থানে৷
টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট ধীরে ধীরে দুর্বল থেকে দুর্বলতর হচ্ছে৷ ঘরোয়া ক্রিকেটে চারদিনের ম্যাচ হয় না বললেই চলে৷ যা হয় তাতে তারকা ক্রিকেটাররা অংশ নিতে চান না৷
বিরাট কোহলি যেখানে টি-টোয়েন্টি সিরিজে বিশ্রাম নিয়ে টেস্ট সিরিজ খেলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় তারকা ক্রিকেটার সেখানে সাউথ আফ্রিকা সফরে না গিয়ে বিশ্রাম নেন আর আইপিএলটা ঠিকমতো খেলেন৷
আসলে বাংলাদেশ ভারতের কাছে হারতেই পারে৷ কদিন আগে সাউথ আফ্রিকাও তো ভারত থেকে নাস্তানাবুদ হয়ে ফিরেছে!
কিন্তু সাউথ আফ্রিকা নিশ্চয়ই লজ্জাজনক হার থেকে শিক্ষা নেবে৷ বাংলাদেশ কি সেই শিক্ষাটা নেবে? ক্রিকেট বোর্ডের ভাবগতিক দেখে তা কি মনে হয়?
একটা কথা পরিষ্কার বুঝে নেয়া ভালো৷
জোড়াতালি দিয়ে, ফাঁকি দিয়ে প্রস্তুতি সেরে, গায়ের জোরে বল করে আর বলে বলে ছক্কা মারার চেষ্টা করে টেস্ট ক্রিকেটে ভালো করা যায় না, যাবে না৷ টেস্ট ক্রিকেট অনেক বেশি ধৈর্য, বুদ্ধি আর কৌশলের সমষ্টিগত সামর্থের খেলা৷ এই খেলা ‘খেলতে হয় তাই খেলি' মানসিকতা নিয়ে খেলে যাওয়ার কোনো মানে নেই৷ এভাবে খেলার চেয়ে না খেলাও ভালো৷