1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দিল্লিতে নবরাত্রির জন্য মাছ-মাংসের দোকান বন্ধ নিয়ে বিতর্ক

৬ এপ্রিল ২০২২

নবরাত্রির জন্য মাংসের দোকান বন্ধ রাখতে বললেন দক্ষিণ ও পূর্ব দিল্লি পুরসভার মেয়র। যা নিয়ে প্রবল বিতর্ক শুরু হয়েছে।

https://p.dw.com/p/49WRE
দিল্লির বাঙালিপ্রধান এলাকা চিত্তরঞ্জন পার্কে মাছ-মাংসের দোকান খোলা আছে। ছবি: DW/G. Hore

নবরাত্রি হলো হিন্দুদের একটি উৎসব, যা নয়দিন ধরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পালিত হয়। নবরাত্রি যারা পালন করেন, তারা নয়দিন ধরে মাছ, মাংস, ডিমের মতো কোনো আমিষ খান না। পশ্চিমবঙ্গ ও দিল্লির খুব বেশি বাঙালি অবশ্য নবরাত্রি পালন করেন না।

গত কয়েক বছর ধরেই নবরাত্রির সময় মাংসের দোকান বন্ধ রাখার দাবি উঠছে। এবার পূর্ব ও দক্ষিণ দিল্লি পুরসভার দুই বিজেপি মেয়র বলেছেন, তাদের পুর এলাকায় মাংসের দোকান বন্ধ রাখতে হবে। তাদের যুক্তি, এই সময়ে অধিকাংশ মানুষ আমিষ খান না। তবে মেয়ররা মুখে এই কথা বললেও দুই পুরসভার তরফ থেকে কোনো লিখিত নির্দেশ জারি করা হয়নি। 

উত্তর দিল্লি পুরসভার মেয়র অবশ্য এখনো পর্যন্ত এরকম কোনো কথা বলেননি। এছাড়া মধ্যদিল্লির ভিভিআইপি এলাকা যার মধ্যে পড়ে সেই নিউ দিল্লি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন বা এনডিএমসি-ও এরকম কোনো নির্দেশ জারি করেনি।

আগামী ১০ এপ্রিল পর্যন্ত নবরাত্রি চলবে। 

কী বলেছেন দুই মেয়র?

পূর্ব দিল্লির মেয়র শ্যামসুন্দর আগরওয়াল বলেছেন, নবরাত্রির সময় ৯৯ শতাংশ মানুষ আমিষ খান না। আর দক্ষিণ দিল্লির মেয়র মুকেশ সুরইয়ানের বক্তব্য, নবরাত্রির সময় মাংসের দোকান খোলা রাখার কোনো দরকার নেই।

মুকেশ সুরইয়ান পুর কমিশনারকে চিঠি দিয়ে বলেছেন, ধর্মীয় বিশ্বাস ও আস্থার মর্যাদা রাখা উচিত। ভক্তদের মনোভাবে যেন আঘাত না লাগে। তারা যখন মাংসের দোকানের সামনে আসেন, তখন মাংসের কটু গন্ধ তাদের নাকে আসে। তারা পুজো করতে যাওয়ার সময় এই গন্ধ পান। এটা ঠিক নয়। 

তাদের সমর্থন করে বিজেপি সাংসদ প্রবেশ সাহেব সিং বর্মা বলেছেন, ''দুই মেয়র একদম ঠিক কথা বলেছেন। শুধু দিল্লি নয়, সারা দেশে নবরাত্রির সময় এই কড়াকড়ি চালু করা উচিত।'' 

উত্তর দিল্লি পুরসভার এক মুখপাত্র বলেছেন, এরকম কোনো প্রস্তাব তাদের বিচারাধীন আছে বলে তিনি অন্তত জানেন না। 

মাংসের দোকান বন্ধ

লিখিত নির্দেশ না থাকলে কী হবে, আইএনএ, জোরবাগ-সহ বেশ কিছু বাজারে মাংসের দোকান মঙ্গলবার বন্ধ ছিল। পূর্ব দিল্লিতেও কিছু বাজারে মাংসের দোকান বন্ধ ছিল। 

তবে নতুন দিল্লির বাঙালিটোলা বলে খ্যাত চিত্তরঞ্জন পার্কের মাছ বা মাংসের দোকান বুধবারও খোলা আছে। দুই নম্বর মার্কেটের মাছ বিক্রেতা টাবু ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''পুরসভা থেকে কোনো কর্মী এসে দোকান বন্ধ রাখার কথা বলেননি। তবে নানা ধরণের গুজব শোনা যাচ্ছে। আর মঙ্গলবার থেকে প্রচুর সাংবাদিক ও টিভি ক্যামেরাম্যান এসে মার্কেট থেকে লাইভ করেছেন।'' 

এক নম্বর মার্কেটের পাঁঠা ও মুরগির মাংসের বিক্রেতা মাজহার ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''কেউ এসে কিছু বলেনি। কিন্তু বিভ্রান্তি চরমে।'' এটা তাদের রুটি-রুজির বিষয় বলেও মাজহার জানিয়েছেন। 

উত্তরপ্রদেশের অবস্থা

উত্তরপ্রদেশে অনেক মাংসের দোকান বন্ধ। হিন্দুস্তান টাইমস জানাচ্ছে, গাজিয়াবাদের মেয়র চিঠি লিখে স্বাস্থ্য আধিকারিকদের জানিয়ে দেন, নয়দিন মাংসের দোকান বন্ধ থাকবে। তারপরই অনেক দোকান বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে রাজ্য সরকার জানিয়েছে, তারা মাংসের দোকান বন্ধ করার কোনো নির্দেশ দেয়নি।

দিল্লি জল বোর্ডে বিতর্ক

দিল্লি জল বোর্ড মঙ্গলবার রমজানের সময়ে একঘণ্টার ছুটি দেয়ার ঘোষণা করেছিল। কিন্তু তা নিয়ে প্রবল বিতর্ক শুরু হয়। তারপর সেই নির্দেশ প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। এনডিএমসি-তেও একই ঘোষণা করা হয়েছে। তারপর সংস্থার ডেপুটি চেয়ারম্যান চিঠি লিখে এই সিদ্ধান্ত রদ করার দাবি জানিয়েছেন।

তীব্র প্রতিক্রিয়া

জম্মু ও কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা টুইট করে বলেছেন, ''রমজানের সময় আমরাও সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খাই না। তার মানে কি, পর্যটক বা যারা মুসলিম নন, তারাও ওই সময় খেতে পারবেন না? বিশেষ করে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায়? যদি দক্ষিণ দিল্লিতে সংখ্যাগরিষ্ঠবাদ ঠিক থাকে, তাহলে কাশ্মীরেই বা তা ঠিক হবে না কেন?''

প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''দিল্লিতে পুরসভা ভোট আসছে। সরকার এখন তিনটি পুরসভাকে এক করে একটি পুরসভা গঠন করছে। তারপর ভোট হবে। একটি বিধানসভা উপনির্বাচনও হবে। তার আগে তাই বিভাজনের একটা চেষ্টা হচ্ছে।''

সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী আশিস গুপ্ত ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''গত বিধানসভা নির্বাচনের আগেও দিল্লিতে বিভাজনের, মেরুকরণের চেষ্টা হয়েছিল। আবার সেই চেষ্টা শুরু হয়েছে পুর ভোটকে সামনে রেখে।''

জিএইচ/এসজি (পিটিআই)