‘আমার বিধবা হবে?'
১৩ জুন ২০১৩ইয়ান ব্যাংকস ছিলেন স্কটল্যান্ডের মানুষ, সারা জীবন সেখানেই কাটিয়েছেন৷ ইংরিজি সাহিত্যের ছাত্র, ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘‘দ্য ওয়্যাস্প ফ্যাকটরি'' তাঁকে বিশ্বখ্যাতি এনে দেয়৷ সে এক অদ্ভুত কাহিনি: এক স্কটিশ টিনেজার তার দশ বছর বয়স হওয়ার আগেই নিজের পরিবারের তিনজন শিশুকে হত্যা করেছে৷ অর্থাৎ গোড়া থেকেই ব্যাংকস-এর আশ্চর্য কিন্তু গা ছম ছম করা কল্পনাশক্তির স্বাক্ষর বহন করছিল এই উপন্যাসটি৷
ইয়ান ব্যাংকসকে সায়েন্স ফিকশন লেখক বললে কম বলা হয়, কিন্তু ভুল বলা হয় না৷ তার প্রমাণ তাঁর ‘‘কালচার'' সিরিজ৷ সেই সঙ্গে ছিল তাঁর গথিক বা ভূতুড়ে হিউমার, বাংলায় যাকে বলে হাস্যরস৷ অসম্ভব তাড়াতাড়ি বই লিখতে পারতেন ব্যাংকস: লেখক জীবনে দু'ডজনের বেশি বই লিখেছেন৷ তাঁর শেষ উপন্যাস ‘‘দ্য কোয়্যারি''-র একটি কপি তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় মৃত্যুর মাত্র তিন সপ্তাহ আগে৷
প্রকাশকরা বইটির প্রকাশনা এগিয়ে এনেছিলেন, কেননা ব্যাংকস গত এপ্রিল মাসেই তাঁর ওয়েবসাইটে ঘোষণা করেন যে, তিনি আর মাত্র কয়েক মাস বাঁচবেন৷ সে ঘোষণাও ছিল ব্যাংকস-সুলভ: ‘‘সরকারিভাবে আমার অবস্থা বিশেষ ভালো নয়৷'' ব্যাংকস নিজেই জানিয়ে দিচ্ছিলেন যে, ক্যানসার তাঁর গল ব্লাডার থেকে লিভার ও প্যানক্রিয়াসে ছড়িয়ে পড়েছে৷
আরো বড় কথা, জীবন শেষ হতে চলেছে জেনে ব্যাংকস তাঁর বান্ধবী অ্যাডেল হার্টলেকে প্রশ্ন করেন: ‘‘তুমি কি আমার বিধবা হয়ে আমাকে সম্মানিত করবে?'' হার্টলে স্বয়ং লেখিকা, এছাড়া তিনি একটি হরর ফিল্ম ফেস্টিভাল চালান৷ এমনই এক মহিলা যিনি এর পরে একটি ব্লগ পোস্ট স্বাক্ষর করেছিলেন এই উপাধি নিয়ে: ‘‘চিফ উইডো-ইন-ওয়েটিং'', অর্থাৎ ‘প্রধান হবু বিধবা'৷
হার্টলে সম্মত হলে দু'জনে হনিমুন করতে যান ভেনিস ও প্যারিসে৷ কিন্তু স্কটল্যান্ডে ফেরার পরই ব্যাংকসকে এডিনবরার হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়৷
অনেক মানুষকে কাঁদিয়ে যাবার পরিবর্তে অনেক মানুষকে হাসিয়ে যাওয়াটায় ভুলটা কোথায়?
তবু যেন চোখে এক ফোঁটা পানি আসে...
এসি/ডিজি (এএফপি)