1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অপ্রত্যাশিত সন্তান বাক্স বিতর্ক

মনিকা ডিট্রিশ / এআই১৪ মার্চ ২০১৩

জন্মের পর সন্তানকে নির্দিষ্ট বাক্সে রেখে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে জার্মানিতে৷ একজন মা সেটা করতে পারেন নাম পরিচয় গোপন রেখেই৷ বাক্সে সন্তান রাখলে ভবিষ্যতে তার দায়িত্ব নেয় অন্য কেউ৷ কিন্তু জার্মান সরকার এখন বিকল্প উপায় খুঁজছে৷

https://p.dw.com/p/17x8e
ছবি: picture-alliance/dpa

তলপেটে বেড়ে ওঠা সত্ত্বেও অনেক মেয়ে নিজেকে অন্তঃসত্ত্বা হিসেবে মানতে চাননা৷ হয়তো সন্তানটি তার স্বামীর নয়, কিংবা সন্তান লালনপালনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ তার নেই অথবা সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য সময়টাকে সঠিক মনে করেন না তারা৷ তাই বাচ্চা জন্মের পরই তারা নবজাতককে রেখে যান বিশেষ শিশু বাক্সে৷ জার্মানির বিভিন্ন শহরে এই ব্যবস্থা রয়েছে৷ জার্মানিতে মায়েদের জন্য বিভিন্ন রকম সুযোগ সুবিধা সত্ত্বেও এসব বাক্সে মাঝেমাঝেই পাওয়া যায় শিশু৷

কোলনের ক্যাথলিক নারী কল্যাণ সেবার (এসকেএফ) ম্যানেজার মোনিকা ক্লাইনে এই বিষয়ে বলেন, ‘‘এই নারীরা নিজেদের পরিস্থিতিকে অসহনীয় মনে করেন এবং সন্তান জন্ম দেওয়ার আগে তারা কোনো সমাধান খুঁজে পাননা৷''

একশোটি শিশু রেখে যাওয়ার বাক্স

মোনিকা ক্লাইনে বলেন, ‘‘এসব শিশু অধিকাংশ ক্ষেত্রে গোপনে জন্ম নেয়৷ হয়তো মাটির তলার ঘরে, বাথরুমে অথবা বাগানবাড়িতে জন্ম নিয়েছে তারা৷ আতঙ্কিত মায়েরা হয়ত কাউকে কিছু না জানিয়ে, কোন ধরনের চিকিৎসা সহায়তা ছাড়াই একাকী এসব শিশু জন্ম দিয়েছেন৷''

Babyklappe des Helios St. Johannes Klinikums
অপ্রত্যাশিত সন্তান রেখে যাওয়ার বাক্সছবি: picture-alliance/dpa

জার্মানিতে শিশু রেখে যাওয়ার বাক্সের সংখ্যা একশোটি৷ মা যাতে তার অনাকাঙ্ক্ষিত নবজাতককে কোথাও ফেলে না দেন কিংবা মেরে না ফেলেন, সেজন্য এসব বাক্স রাখা হয়েছে৷ ২০০০ সাল থেকে এখন অবধি পরিচয় গোপন রেখে বেশ কয়েকশত শিশুকে এসব বাক্সে রেখে গেছেন মায়েরা৷

কোলন শহরের কাছে ‘হাউস আডেলহাইড' নামক একটি মা এবং শিশু কেন্দ্র পরিচালনা করছে এসকেএফ৷ এই কেন্দ্রের বাইরে রাখা বাক্সে মায়েরা চাইলে নবজাতক শিশু রেখে যেতে পারেন৷ বাক্সটি এমনভাবে রাখা হয়েছে, যাতে হঠাৎ করে কারো নজরে না পড়ে৷ মায়ের গোপনীয়তা রক্ষায় এমনটা করা হয়েছে৷ কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সেখানে বাচ্চা রাখার পর কর্তৃপক্ষ টের পান কীভাবে?

এসকেএফ এর কর্মকর্তা কার্টিন লামব্রেশট বলেন, ‘‘বাক্সে কোন শিশু রাখার সঙ্গে সঙ্গে আমার মুঠোফোনে সংকেত বেজে ওঠে৷'' সংকেত পাওয়ার পর দ্রুত তারা ফেলে যাওয়া নবজাতকের কাছে পৌঁছান৷

নৈতিক পরিষদের সমালোচনা

গত বারো বছরের পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখে যাচ্ছে, এই সময়ের মধ্যে উনিশটি শিশুকে কোলনের এই বাক্সে রেখে গেছেন মায়েরা৷ কোন কোন মা পরবর্তীতে আবার যোগাযোগ করেছেন, কিন্তু অনেকেই আর কখনো সন্তানের খোঁজ নিতে আসেননি৷ ক্লাইনে জানান, যেসব শিশুর মায়েরা আর ফিরে আসেন না, সেসব শিশুর প্রোফাইলে বাবামায়ের ঘরটি ফাঁকা থাকে৷ আর নিজের পরিবার সম্পর্কে না জেনে বেড়ে ওঠা যেকোন সন্তানের জন্যই কষ্টের৷

Monika Bradna
মনিকা ব্রাডনা মনে করেন, শিশু রেখে যাওয়ার বাক্স ভালো কোন সমাধান নয়ছবি: DJI

১৯৮৯ সালে সাংবিধানিক আদালত এক রায়ে জানান, নিজের পিতামাতা সম্পর্কে জানার অধিকার সকলের রয়েছে৷ আর তিন বছর আগে জার্মানির নৈতিক পরিষদ পরিচয় গোপন রেখে সন্তান রেখে যাওয়ার এই সুযোগের সমালোচনা করেছেন৷ তারা বরং জরুরি পরিস্থিতিতে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদেরকে আরো সুযোগ-সুবিধা প্রদানের একটি আইনি সমাধান বিবেচনা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷ এখানে বলা প্রয়োজন, বৈধভাবে পরিচালিত জার্মানির ১৩০টি ক্লিনিকে পরিচয় গোপন রেখে সন্তান জন্ম দেওয়ার কিংবা সন্তান রেখে যাওয়ার মতো কোন শিশু বাক্স নেই৷

আইন প্রণয়নে ঘাটতি

মিউনিখে অবস্থিত জার্মান ইয়ুথ ইন্সটিটিউটের কর্মকর্তা মনিকা ব্রাডনা মনে করেন, শিশু রেখে যাওয়ার বাক্স ভালো কোন সমাধান নয়৷ এটা হচ্ছে মা এবং শিশুকে প্রদান করা সবচেয়ে নিম্নমানের একটি সুযোগ৷ তিনি এসব শিশু বাক্স নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করেছেন এবং দেখেছেন, এ ধরনের বাক্স স্থাপনের সুনির্দিষ্ট কোন নিয়মনীতি নেই৷ বিশেষ করে শিশু রেখে যাওয়ার পর কখন কর্তৃপক্ষ জানতে পারবে বা শিশুটিকে কখন দত্তক দেওয়া হবে – সেসব বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই৷ এমনকি ঠিক কি পরিমাণ শিশু গত কয়েক বছরে বিভিন্ন শিশু বাক্সে পাওয়া গেছে তারও কোন সঠিক হিসেব নেই৷

তা সত্ত্বেও জার্মানির পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ক্রিস্টিনা শ্র্যোডার এখনই শিশু রাখার বাক্স তুলে দেওয়ার পক্ষে নন৷ বরং তিনি গোপনে সন্তান জন্ম দেওয়া সংক্রান্ত একটি খসড়া আইন সংসদে উপস্থাপন করবেন বুধবার, যা এই শিশু রাখার বাক্সকে অনাবশ্যক করে তুলবে বলেই মনে করেন শ্র্যোডার৷ তাঁর প্রস্তাবিত আইনের আওতায় একজন মা কার্যত তার পরিচয় গোপন রেখে হাসপাতালেই সন্তান জন্ম দিতে পারবেন৷ তবে কর্তৃপক্ষ ১৬ বছর তার ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ করবে৷ এই সময়ের পর সন্তান চাইলে তার মায়ের পরিচয় সম্পর্কে জানতে পারবে৷

Monika Kleine Sozialdienst katholischer Frauen
মোনিকা ক্লাইনে বলেন, নারীরা নিজেদের পরিস্থিতিকে অসহনীয় মনে করেন এবং সন্তান জন্ম দেওয়ার আগে তারা কোনো সমাধান খুঁজে পাননাছবি: SkF

তবে নিন্দুকরা বলছেন, সন্তানকে মায়ের তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে আগে মায়ের অনুমতি নিতে হবে৷ আর যদি তিনি সম্মত হন, তবেই সন্তানকে মা সম্পর্কে জানানো উচিত হবে৷ কিন্তু মনিকা ক্লাইনে এমন ব্যবস্থায় সম্মত নন৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা সন্তোষজনক সমাধান হবে না৷ কেননা এভাবে শুধুমাত্র মাকে আইনি সুরক্ষা দেওয়া হবে, সন্তানকে নয়৷''

শিশুহত্যা সম্পর্কে তথ্য নেই

ক্লাইনে এবং ব্রাডনা দু'জনই শিশু রাখার বাক্সের সুবিধার দিকে সরকারের আরো নিবিড় দৃষ্টি প্রত্যাশা করেন৷ ব্রাডনা এই বিষয়ে বলেন, ‘‘পরিচয় গোপন রেখে সন্তান জন্ম দেওয়ার সব ধরনের সুযোগ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রয়োজন৷ আর তাতে মানসম্মত পরামর্শ প্রদানের বিষয়টিও উল্লেখ করতে হবে৷''

অবশ্য শিশু রাখার বাক্সকে সমর্থন করা কিংবা পরিচয় গোপন রেখে সন্তান জন্ম দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া শিশুহত্যা রোধে যথেষ্ট উদ্যোগ নয় বলে মনে করেন ব্রাডনা৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা সত্যিকার অর্থেই জানিনা, এসব সেবা আদৌ জীবন রক্ষায় ভূমিকা রাখছে কিনা৷''

সত্যি কথা বলতে গেলে, এরকম কোন পরিসংখ্যান কর্তৃপক্ষের কাছে নেই৷ কেউই জানে না, শিশু রাখার বাক্স চালুর পর শিশুহত্যা বা সন্তান ফেলে দেওয়ার হার কমেছে কিনা৷ কেউ কেউ এমনটাও ভাবেন, এই বাক্স চালুর ফলে অনেক মা সন্তানকে নিজের কাছে রাখছে না কিংবা অন্য কাউকে দত্তক দেওয়ার চেষ্টা করছে না৷ তার চেয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তানটি বাক্সে রেখে যাওয়াই নিরাপদ মনে করছেন তারা৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য