1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জঙ্গিবাদের শেকড় কোথায়?

তায়েব মিল্লাত হোসেন ঢাকা
২৩ আগস্ট ২০১৯

বাংলাদেশ জঙ্গিবাদের উর্বর ভূমি নয়। উৎসস্থলও নয়। ভিনদেশের জঙ্গিপনা থেকেই এই দেশের কিছু মানুষ উৎসাহ পেযেছে। সেখান থেকেই নিয়ে এসেছে প্রশিক্ষণ। পেয়েছে টাকাকড়িও।

https://p.dw.com/p/3OMyh
ছবি: picture-alliance/AP Photo

শুরুটা গত শতকের আশির দশকে। আফগানিস্তানের যুদ্ধে যায় প্রায় তিন হাজার বাংলাদেশি। তারা সেখানে প্রশিক্ষিত হয়। তাদের থেকে অন্তত আড়াই হাজার দেশে ফিরে আসে। এদের থেকেই করা হয় হরকাতুল জিহাদের মতো জঙ্গি সংগঠন। আরও নানা ব্যানারে নব্বই দশক থেকে শুরু করে গত দশকজুড়ে তারা নানা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে দেশজুড়ে। এদের সবাই মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছে।

গত কয়েক বছরে এই চেহারা পাল্টে গেছে। আইএসের দল ভারী করতে ইচ্ছুক যেসব বাংলাদেশি বিভিন্ন রুটে সিরিয়া গিয়েছে তাদের প্রায় সবাই আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত। তাদের কেউ চিকিৎসক, কেউবা প্রকৌশলী। বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্রগুলো বিভিন্ন সময় জানিয়েছে, আইএসে যোগ দিতে সিরিয়া যাওয়া বাংলাদেশির সংখ্যা অন্তত ৪০ জন।

এদের বিষয়ে ১৯ আগস্ট ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদ দমন ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলা বিষয়ক ব্যুরোর আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় বিষয়ক উপসমন্বয়কারী জন টি গডফ্রে। তার ভাষ্যমতে, আইএস জঙ্গিদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করা উচিত। এর বদলে তারা যদি ছড়িয়ে পড়ে তবে শুধু বাংলাদেশ নয়, অন্য দেশও ঝুঁকিতে পড়বে।

তবে আইএসে যারা গিয়েছে, তাদের স্থান বাংলাদেশে হওয়া উচিত নয় বলে মনে করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির। এ প্রসঙ্গে তিনি ডয়েচে ভেলেকে বলেন, ‘‘বলে দেওয়া হয়েছে, আইএসে যারা গিয়েছিল বাংলাদেশ তাদের স্থান দেবে না।’’

বাংলাদেশি আইএস সদস্যরা যদি দেশে ফিরতে চায়, তখন কী হবে- এমন প্রশ্নে এই কূটনীতিবিদ বলেন, ‘‘ইন্টারপোলের সঙ্গে সংযোগ রেখে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর অবশ্যই এদের বিচরণ সম্পর্কে তথ্য রাখতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের ইন্টেলিজেন্স যেমন সহায়তা প্রদান করবে, তেমনি সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ইন্টেলিজেন্সগুলোকেও সহায়তা প্রদান করতে হবে।’’

মোহাম্মদ জমির

তবে বাংলাদেশি আইএস জঙ্গিরা দেশে ফিরে পার পাবে না। তারা এলে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হবে- বিভিন্ন সময় এ কথা জানিয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনী। সতর্ক থাকতে দেশের সব বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে বাংলাদেশি আইএস জঙ্গিদের তথ্য দিয়ে রেখেছে তারা।

এদিকে ২০০৪ সালে একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনা বিশ্লেষণে জানা যায়, বাংলাদেশের জঙ্গিদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণের বিষয়ে পাকিস্তানেরও হাত আছে। আর এই দেশের অনেক জঙ্গি গ্রেপ্তার এড়াতে ভারতে পালিয়ে যায়। তাদের কেউ কেউ অবশ্য ভারতে কারাবন্দী হয়েছে। কেউবা বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে।

সম্প্রতি জঙ্গিদের নাশকতা নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ কী জঙ্গিবাদ মুক্ত হয়েছে? এমন প্রশ্নে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার ডয়েচে ভেলেকে বলেন, এটা ঠিক যে, জঙ্গিরা কোনঠাসা অবস্থায় আছে। সেটা আমরা দেখছি। কিন্তু জঙ্গিরা অনেক অপতৎপরতা চালাবার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্কতার জন্যে এবং আগাম প্রতিরোধের জন্য কিছু করতে পারছে না।

এ অবস্থায় ঝুঁকির মাত্রা কেমন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে জঙ্গি উৎপত্তির যে জায়গা, যে উপাদান- সেগুলো এখনও মজুদ রয়েছ। তাই বাংলাদেশ জঙ্গিমুক্ত হয়ে গেছে, সেটি ভাববার কোনো কারণ নেই। সেটা ভাবা হলে ভুল করা হবে।’’

টাকা  আসে  কোত্থেকে?

তৃণমূলের যারা জঙ্গিবাদে জড়িতে তাদের মগজ ধোলাই করে ধর্মের নামে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করা হয়। একটি অংশকে অবশ্য অর্থ বা কর্মসংস্থানের প্রলোভনে ফেলে বিপথগামী করা হয়। এর জন্য অর্থের প্রয়োজন হয়। আবার আগ্নেয়াস্ত্র, বোমার সংগ্রহেও তাদের টাকার দরকার পড়ে। এই টাকা আসলে দেয় কে?

মধ্যপ্রাচ্য বা অন্যান্য মুসলিম দেশ থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পথে এই দেশে জঙ্গিবাদের জন্য অর্থ এসেছে। বিশেষ করে বেসরকারি সাহায্য সংস্থার (এনজিও) ব্যানারে বিভিন্ন সময় জঙ্গি অর্থায়ন করা হয়েছে। নব্বইয়ের দশকে বা নতুন শতকের শুরুতে একাধিক এনজিও এই অপকর্মে যুক্ত ছিলো। এরমধ্যে ছিলো আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট এনজিও বেনোভেলেন্স ইন্টারন্যাশনাল, আল-হারাইমান; কুয়েতভিত্তিক এনজিও রিভাইভাল অব ইসলামিক হেরিটেজ সোসাইটি (আরআইএইচএস)। এতে দেখা যাচ্ছে ধনী আরব দেশগুলোর অর্থায়নেই এই অঞ্চলে জঙ্গিবাদী সংগঠন তৈরি হয়েছিলো।

এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার

এদিকে বছর কয়েক আগে তুরস্কের উগ্রপন্থীরা পর্যন্ত বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ বিস্তারে টাকা ঢেলেছে। এক্ষেত্রেও এনজিওর আড়ালে জঙ্গি কার্যক্রম চালানোর কৌশল হাতে নেয়া হয়। এটা করেছিলো জামায়াত সমর্থিত কৃষিবিদদের সমন্বয়ে গঠিত ‘কৃষিবিদ ব্লক'। এই বছরের গোড়ায আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেৎ জামায়াত সমর্থিত কৃষিবিদ মোস্তাক আহমেদ খাঁ এসব তথ্য জানান।

কমেছে  সামাজিক  উদ্যোগ

আইএসে যোগ দিতে সিরিয়ায় যাওয়া ব্যক্তি কিংবা দেশে থাকা তাদের অনুসারী- এমন অনেকেই অভিজাত পরিবারের সন্তান। তাদের পড়াশোনা ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যাপীঠে। অনলাইনভিত্তিক সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেই তারা জঙ্গিবাদে অনুরক্ত হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শুধু আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্য জঙ্গিবাদ নিপাত করা যাবে না। তার জন্য পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে প্রতিরোধমূলক শক্ত কর্মসূচি থাকা উচিত।

কিন্তু বাংলাদেশ ঘটনা ঘটার পর বিভিন্ন অঙ্গনের ব্যক্তিত্বরা যেভাবে সোচ্চার হন, পরে সেটা থাকে না। ফলে মানুষের সচেনতার জায়গায় ঘাটতি তৈরি হয়। এ বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার ডয়েচে ভেলেকে বলেন, ‘‘২-৩ বছর আগে যখন ঘটনাগুলো ঘটছিলো তখন সংগত কারণেই সবাই সরব হয়েছিলো। সচেতনতা বৃদ্ধিকল্পে বহুমুখী কর্মসূচি রাষ্ট্র, সমাজ ও মিডিয়ার পক্ষ থেকে করা হয়েছিলো। এখন যেহেতেু জঙ্গিদের তৎপরতা প্রকাশ্যে দেখছি না। এ কারণেই হয়তো সচেতনতামূলক কর্মসূচি কমে গেছে। তবে আমি মনে করি এটি কমে যাওয়া ঠিক নয়, এটিকে আরও বাড়ানো দরকার।’’

তায়েব মিল্লাত হোসেন
তায়েব মিল্লাত হোসেন সাংবাদিক
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান