আসিয়ান-ভারত সম্পর্ক
১০ অক্টোবর ২০১৩ভারতের পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম সফল উদ্যোগ হলো ‘পুবে তাকাও' নীতি৷ ‘পুবে-তাকাও' নীতির তিন দফা সাফল্যের মধ্যে আছে এশিয়ার সঙ্গে ভারতের অর্থনৈতিক সংহতি সুদৃঢ় করা, যার অন্যতম সোপান এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন৷ আসিয়ানভুক্ত দেশগুলির সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য বাড়াবার এটা এক সুবর্ণ সুযোগ৷ বর্তমানে ভারত-আসিয়ান বাণিজ্যের পরিমাণ ৭৬ বিলিয়ন ডলার৷ ২০১৫ সালের লক্ষ্যমাত্রা ১০০ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২২ সালে সেটা হবে ২০০ বিলিয়ন৷ দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় রাষ্ট্রগুলির অ্যাসোসিয়েশন – সংক্ষেপে আসিয়ানের সঙ্গে ব্যাপক আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা গড়ে তুলতে ভারত অঙ্গীকারবদ্ধ৷
দ্বিতীয় সহযোগিতা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে৷ দিল্লি এখন শুধুমাত্র আসিয়ান নয়, পূর্ব-এশিয়ার সব প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলির অবিভাজ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে৷ পূর্ব-এশিয়ার নিরাপত্তা এবং সুস্থিতি রক্ষায় ভারত এক কৌশলগত সহযোগী দেশে পরিণত হয়েছে৷ ভারত-আসিয়ান সহযোগিতার অন্যান্য ক্ষেত্রগুলি হলো, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, কৃষি, পরিবেশ, মানব সম্পদ, জ্বালানি, পরিকাঠামো, পর্যটন, স্বাস্থ্য ও সংস্কৃতি৷
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রায় ৩০০ কোটি জনসংখ্যার এশীয় দেশগুলির শীর্ষ সম্মেলনের প্রধান বিষয় হবে সড়ক, রেল ও বিমানপথে আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়ানো৷ দিল্লির দিক থেকে মিয়ানমারের বড় ভূমিকা আছে, কারণ আসিয়ানের দশটি দেশের মধ্যে মিয়ানমার একমাত্র দেশ, যার সঙ্গে ভারতের অভিন্ন সীমান্ত৷ যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে সব থেকে লাভবান হবে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলি৷ ব্রুনাই থেকে গ্যাস ও অন্যান্য এনার্জি কাঁচামাল আমদানিতে ভারত আগ্রহী৷
এছাড়া ভারতের বিহার রাজ্যে অবস্থিত অন্যতম প্রাচীন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় যাতে ২০১৪ সালের মধ্যে চালু হয়, তার জন্য আন্তঃসরকার চুক্তি সই করা৷ এতে সামিল হবে অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপান, কোরিয়া, রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ শীর্ষ সম্মেলনের পার্শ্ববৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মিলিত হবেন বিশ্বনেতাদের সঙ্গে৷ ব্রুনাই থেকে তিনি যাবেন ইন্দোনেশিয়ায়৷ সে দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে ড.সিং-এর আলোচনা হবে নিরাপত্তা, বাণিজ্য, যোগাযোগ ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা নিয়ে৷ এই অঞ্চলের রাজনৈতিক ‘থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক' মনে করেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ধাঁচে আসিয়ান দেশগুলির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে না ওঠার আপাত কোনো কারণ নেই৷ কারণ যদি থেকে থাকে, তা হলো কিছু রাজনৈতিক ইস্যু, যা বিশেষ করে ভারত-পাকিস্তান কেন্দ্রিক৷
আসিয়ানভুক্ত দেশগুলিকে চীনের সামরিক ও আর্থিক পেশিশক্তির ভূত তাড়া করে ফিরছে দক্ষিণ চীন সমুদ্রে চীনের বিতর্কিত সার্বভৌম অধিকারের দাবিতে৷ ২০০৯ সাল থেকে দক্ষিণ চীন সমুদ্রের আন্তর্জাতিক জলসীমার ওপর ফিলিপাইন্স ও ভিয়েৎনামের অধিকার চীন নস্যাৎ কোরে দিতে চাইছে স্রেফ গায়ের জোরে৷