‘পুবে-তাকাও’ নীতির পথে ভারত
১৩ আগস্ট ২০১৩মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের যৌথ উদ্যোগে ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে মিয়ানমারের দক্ষিণে দাউই গভীর সমুদ্র বন্দরের নির্মাণকার্য শেষ হবে আর কয়েক বছরের মধ্যে৷ তৈরি হয়ে যাবে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল৷ খুলে যাবে যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের বিপুল সম্ভাবনা৷ ভারত সেই সুযোগ হাতছাড়া করতে চায়না৷ ‘পুবে-তাকাও‘ নীতির অঙ্গ হিসেবে ভারত তাই সামিল হয়েছে যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণে৷ দাউই গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরি হয়ে গেলে ভারত পাবে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় যাবার এক বিকল্প সমুদ্রপথ৷ ফলে ভীড়-ব্যস্ত মালাক্কা প্রণালীর ওপর নির্ভরতা কমে যাবে এবং যাতায়াতের সময় ও খরচ দুই-ই বাঁচবে৷
দাউই বন্দর ভারত-মেকং অর্থনৈতিক করিডরের এক অংশ৷ ভারতের কাছে এই অর্থনৈতিক করিডরের গুরুত্ব এই কারণে যে, এখান দিয়ে ভারতের যোগাযোগ বিস্তৃত হবে ভিয়েতনামের হো চিন মিন সিটি, কাম্বোডিয়ার নমপেন এবং থাইল্যান্ডের ব্যাংকক পর্যন্ত৷ দাউই সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে দক্ষিণ ভারতের চেন্নাইকে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে ভারতের৷ তাহলে মালাক্কা প্রণালী দিয়ে যাবার দরকার পড়বে না – জানান এক ভারতীয় কর্মকর্তা৷
গত বছর মে মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং-এর থাইল্যান্ড সফরকালে দাউই অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভারতীয় কোম্পানিগুলির লগ্নির প্রস্তাব দেন থাই সরকার বিশেষ করে সেইসব ক্ষেত্রে, যেখানে ভারতের বিশেষজ্ঞ জ্ঞান রয়েছে৷ যেমন ইস্পাত, বিদ্যুৎ, পেট্রো-কেমিক্যালস, পরিষেবা ইত্যাদি৷ দাউই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন কর্পোরেশন থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের যৌথ মালিকানাধীন৷
ভারত, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের মধ্যে সংযোগকারী ১,৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ত্রিদেশীয় হাইওয়ে নির্মাণে ভারত সক্রিয়ভাবে যুক্ত৷ এর কাজ শেষ হবে ২০১৬ সালে৷ এই হাইওয়ে যাবে ভারতের মণিপুর রাজ্যের মোরে শহর থেকে মিয়ানমার হয়ে থাইল্যান্ডের সোট পর্যন্ত৷ এই হাইওয়ে দিয়ে যাবে পণ্যবাহী ভারতীয় ট্রাক ও কন্টেনার৷ ঐসব দেশে ভারতে বিনিয়োগ এবং ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে এই হাইওয়ের গুরুত্ব অনস্বীকার্য৷ এই প্রকল্পে আর্থিক ঋণ দেবে এশিয়ান ডেভেলাপমেন্ট ব্যাংক৷
ত্রিদেশীয় হাইওয়ের বেশিরভাগ কাজ প্রায় শেষ, তবে দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের কিছু অংশে সমস্যা দেখা দিয়েছে৷ নির্মীয়মাণ হাইওয়েতে ৭১টি জীর্ণ সেতু রয়েছে৷ সেগুলি সংস্কার এবং উন্নত করার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ড. সিং ২০১২ সালে৷ এছাড়া কালাদান মাল্টি-নোডাল ট্রানজিট ট্রানসপোর্ট প্রোজেক্ট শেষ হবার কথা ২০১৪ সালে৷ কাজ শেষ হলে তা কলকাতা বন্দরকে যুক্ত করবে মিয়ানমারের সিটউই বন্দরের সঙ্গে এবং সিটউই বন্দর যুক্ত হবে নদী ও সড়কপথে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মিজোরামের সঙ্গে৷
আসিয়ানের ১০টি দেশ ব্রুনেই, কাম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, ফিলিপিনস, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম, যার মিলিত জনসংখ্যা ১৮০ কোটি৷ মোট জিডিপি তিন ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ এই অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারে চীনও পিছিয়ে নেই৷ অর্থনৈতিক স্বার্থ ছাড়াও স্ট্র্যাটিজিক ও ভূ-রাজনৈতিক কারণে ঐ অঞ্চলে ভারত ও চীনের ভূমিকা হবে সেয়ানে সেয়ানে কোলাকুলি৷