‘আল্লাহর দল’ নিষিদ্ধ
৭ নভেম্বর ২০১৯আগস্টে রাজধানীর হাতিরঝিল এবং দক্ষিনখান এলাকা থেকে আল্লাহর দলের ভারপ্রাপ্ত আমির ইব্রাহিম আহমেদ হিরোসহ ৮ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৷ জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় বিস্তারিত তথ্য৷
জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে যুক্ত র্যাবের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার জানান, ‘‘সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করে ১৯৯৫ সালে৷ পরে তারা জেএমবির সঙ্গে একীভূত হয়ে যায়৷ ২০০৫ সালে দেশের ৬৩ জেলায় একসঙ্গে বোমা হামলায় জেএমবির সাথে তারাও অংশ নেয়৷ আল্লাহর দলের আমীর মতিন মেহেদি সিরিজ বোমা হামলায় গ্রেপ্তার হন ২০০৭ সালে৷ তিনি ওই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে এখন কারাগারে আছেন৷’’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক ওই কর্মকর্তা জানান, জেএমবি দুর্বল হয়ে পড়ায় আল্লাহর দল আবার নতুন করে নিজেরাই সংগঠিত করার চেষ্টা করে৷ মতিন মেহেদি গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত আমির ইব্রাহিম আহমেদ হিরো মূল দায়িত্বে ছিলেন৷ দলে অধিনায়ক হিসেবে পরিচিত ইব্রাহিম৷
বাংলাদেশের জনসাধারণের কাছে প্রায় অপরিচিত এই সংগঠন হঠাৎ করে কেনো নিষিদ্ধ করা হলো, তা জানতে গিয়ে জানা গেছে বেশ কিছু নতুন তথ্য৷
আইনশৃ্ঙ্খলা বাহিনীর কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে ধীরে ধীরে নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করছিল ‘আল্লাহর দল’৷ সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা কত তা র্যাব এখনও নিশ্চিত হতে না পারলেও অন্য জঙ্গি সংগঠনের চেয়ে এটি বেশ ভালো অবস্থানে আছে বলেই ধারণা তাদের৷ রিক্রুটমেন্টের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের টার্গেট করছিল ‘আল্লাহর দল’৷ ‘ট্রেইনড’ বাহিনী গড়ার লক্ষ্যে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবির অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের দলে ভেড়ানোর ছিল নতুন কৌশল৷
র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার-বিন- কাশেম গত সেপ্টেম্বরে এক প্রেস ব্রিফিং-এ বলেন, ‘‘আটকদের কাছ থেকে জানা গেছে, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চাকরিচ্যুতদেরও দলে ভেড়ানোর কাজ করছিল৷ তারা অস্ত্র সংগ্রহে ব্যর্থ হয়ে এই কৌশল অবলম্বন করে৷’’ তবে বৃহস্পতিবার তিনি বা ব়্যাবের অন্য কোনো কর্মকর্তা ডয়চে ভেলেকে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য জানাতে রাজি হননি৷
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক র্যাব কর্মকর্তা জানান, ‘‘দেশে তাদের অর্থের উৎস আমরা জানতে পেরেছি৷ তবে বিদেশ থেকে তারা অর্থ পায় কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷ তাদের কতগুলো ব্যাংক অ্যাকাউন্টের খোঁজ পাওয়া গেছে৷ তাদের ফান্ড বেশ বড়৷’’
৬৩ জেলায় বোমা হামলার পর আল্লাহর দলের সদস্যদের আর কোনো নাশকতায় অংশ নেয়ার তথ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে নেই বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা৷ তবে বড় ধরনের নাশকতার জন্য সংগঠনকে শক্তিশালী করা হচ্ছিলো বলে তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি৷ তবে দলটির সামরিক শাখা এখনও ততোটা শক্তিশালী নয় বলেও জানান তিনি৷
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ বলেন, ‘‘জঙ্গিরা তাদের পৃষ্ঠপোষকদের নির্দেশনা অনুযায়ী পক্ষ পরিবর্তন বা নতুন গ্রুপে যোগ দিয়ে কাজ করে৷ আল্লাহর দলের ব্যাপারে যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তাতে তাই প্রতীয়মান হয়৷ তারা প্রথমে স্বাধীনভাবে আত্মপ্রকাশ করলেও পরে জেএমবির সাথে কাজ করে৷ জেএমবি দুর্বল হওয়ার পর এখন তারা আবার আলাদাভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে৷ এটা তাদের আরেকটি কৌশল৷’’
তিনি বলেন, ‘‘জঙ্গিদের আরেকটি কৌশল হলো যখন কোনো একটি গ্রুপ পরিচিত হয়ে যায়, চাপের মুখে পড়ে, তখন তারা নতুন নামে অথবা নতুন কৌশলে কাজ করে৷ তাই নতুন নতুন জঙ্গি গ্রুপের নাম আমরা জানতে পারি৷ তাদের নিষিদ্ধ করলেই তো তারা আর শেষ হয়ে যায় না৷ তারা নানাভাবে তাদের তৎপরতা চালাতে চেষ্টা করে৷’’
র্যাব জানিয়েছে, ২০১০ সাল থেকে তারা এ পর্যন্ত আল্লাহর দলের মোট ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে৷ তবে এর বাইরে পুলিশও বিভিন্ন সময় আল্লাহর দলের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে৷ ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পুলিশ ঠাকুরগাঁও থেকে আল্লাহর দলের চার সদস্যকে আটক করে৷
বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি তালিকায় আল্লাহর দলসহ আটটি সংগঠন রয়েছে৷