লাশ হয়ে ফিরলেন নিখোঁজ আইনজীবী
৪ এপ্রিল ২০১৮নিখোঁজ হওয়ার পাঁচ দিন পর মঙ্গলবার মধ্যরাতে র্যাব রংপুর শহরে রথীশের বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে তাজহাট মোল্লাপাড়া এলাকার নির্মাণাধীন একটি বাড়ি থেকে লাশটি উদ্ধার করে৷ এর আগে রথীশচন্দ্র ভৌমিক বাবুসোনার স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার দীপা ভৌমিক এবং দীপার সহকর্মীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ সোমবার তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কামরুল ইসলাম ও মতিয়ার রহমানকে আটকের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্ত ভিন্ন দিকে মোড় নেয়৷
ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডি নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম জানিয়েছে, রথীশের ভাই সাংবাদিক সুশান্ত ভৌমিক সুবল লাশটি তার ভাইয়ের বলে শনাক্ত করেছেন৷ রথীশের স্ত্রী দীপাকেও সেখানে নিয়ে গিয়েছিল র্যাব৷
র্যাব কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দীপার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাঁরা লাশ উদ্ধার করেছেন৷ দীপার বরাত দিয়ে র্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুই মাস ধরে রথীশকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়৷ গত ২৯ মার্চ রাতে খাবারের সঙ্গে ঘুমের বড়ি খাইয়ে গলায় ওড়না পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে তাঁকে হত্যা করা হয়৷ পরে আলমারিতে ভরে আধা কিলোমিটার দূরে তাজহাট মোল্লাপাড়া এলাকায় কামরুলের ভাইয়ের নির্মাণাধীন বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বালির নিচে পুঁতে ফেলা হয় রথীশের লাশ৷
বুধবার দুপুরে রংপুরের র্যাব-১৩ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বাহিনীর মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘‘৩০ মার্চ সকাল থেকে রথীশচন্দ্রের নিখোঁজ থাকার বিষয়টি ছিল ‘তার স্ত্রীর সাজানো নাটক'৷ হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে ওই কৌশলে সবার নজর তিনি ভিন্ন দিকে সরানোর চেষ্টা করেছেন৷'' তিনি আরও জানান, ‘‘দীপা ভৌমিকের সঙ্গে তার স্কুলের সহকর্মী কামরুল ইসলামে পরকীয়া প্রেম চলছিলো৷ এ নিয়ে রথীশের সঙ্গে দীপার কলহ লেগেই থাকতো৷'' র্যাব জানিয়েছে, কামরুল তার দুই ছাত্রকে ৩০০ টাকা করে দিয়ে ওই গর্ত খোঁড়ার কাজটি করিয়েছিলেন৷ তাদেরও র্যাব আটক করেছে৷ জিজ্ঞাসাবাদে তারা বলেছে, শিক্ষকের নির্দেশে তারা ওই কাজ করেছে৷
২০১৫ সালে রংপুরের এক মাজারের খাদেম ইসলামি জঙ্গিদের হামলায় নিহত হন৷ মাত্র সপ্তাহ দুয়েক আগে নিষিদ্ধ ঘোষিত ইসলামী জঙ্গিদল জামায়েতুল মুজাহিদীনবাংলাদেশ (জেএমবি)-র ৭ সদস্যকে ওই মামলার রায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়৷ রথীশ চন্দ্র ভৌমিক সেই মামলার সরকারপক্ষীয় আইনজীবী ছিলেন৷ এছাড়া তিনি জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি হত্যামামলারও প্রধান সরকারি কৌসুলি ছিলেন৷ সেই মামলাতেও ২০১৫ সালে ৫ জেএমবি সদস্যের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়৷
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া একাত্তরের মানবতাবিরোধী র সাক্ষীও ছিলেন রথীশ৷ গত শুক্রবার থেকে তার সন্ধান ছিল না৷
আইনজীবী রথীশ রংপুরে নানা ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন৷ তিনি রংপুরে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক, আইনজীবী সমিতির সহ সভাপতি, জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্যপরিষদের ট্রাস্টি ছিলেন৷ নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে রথীশকে খুঁজে বের করার দাবিতে বিভিন্ন সংগঠন আন্দোলন করছিল৷
এপিবি/এসিবি (এএফপি, বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম)