‘বৈষম্য না কমলে পদদলিত হওয়ার ঘটনা কমবে না'
১০ জুলাই ২০১৫কিছুদিন আগে বাংলাদেশকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে ঘোষণা করে বিশ্বব্যাংক৷ প্রশ্ন হলো: বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে যখন এত এগিয়ে যাচ্ছে, তখন জাকাতের কাপড়ের জন্য কেন এই হুড়োহুড়ি? আর কাপড় নিতে গিয়ে কেনই বা জীবন দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে? তাহলে কি বাংলাদেশে ধনী-গরিবের বৈষম্য আদতে বেড়ে চলেছে?
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ধনী ও গরিবের বৈষম্য বাড়ছে না, কিন্তু কমছেও না৷ এই বৈষম্য না কমলে পদদলিত হওয়ার ঘটনাও কমবে না৷''
তাঁর মতে, ‘‘এগুলো নির্ধারণ হয় ‘অ্যাভারেজ' করে৷ একজন যদি খুব ধনী থাকে আর আরেকজন যদি খুব গরিবও হয়, তাহলে তার গড়পড়তা হিসেব করে নির্ধারণ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ৷''
এই অর্থনীতিবিদের মতে, বাংলাদেশে এখনো সাড়ে ২২ থেকে ২৩ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করেন৷ তার মানে এই সংখ্যা সাড়ে তিন কোটিরও বেশি৷ ফলে জাকাতের কাপড় নেয়ার মতো বহু মানুষ আছেন৷ বাংলাদেশে আয় বৈষম্য এমনিতেই অনেক৷ তবে আশার কথা, বৈষম্য বাড়ার মাত্র কিছুটা কমছে৷ ২০০৫ সাল থেকে ২০১০ সালের চিত্র ভালো৷ আবার ২০১৫ সালে এসে এই মাত্রা আরো ইতিবাচক হয়েছে৷
মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘‘শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বেই আয় বৈষম্য আছে৷ যুক্তরাষ্ট্রে গত ২০ বছরে আয় বৈষম্য বেড়েছে৷ কিন্তু পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় কী? জবাবে তিনি বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ট্যক্স শিথিল করতে হবে৷ ব্যবস্থা করতে হবে কর্মসংস্থানের৷ একমাত্র তবেই নিম্ন আয়ের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে উপরের দিকে উঠে আসবেন৷''
হঠাৎ করে বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উঠে আসায় ঋণের সুদসহ অন্য কোনো ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে কিনা – এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘‘আপাতত ৩-৪ বছর কোনো সমস্যা হবে না৷ কারণ বিশ্বব্যাংক বলে দিয়েছে যে, ঋনের শর্তে তাদের আপাতত কোনো পরিবর্তন আসছে না৷ পাশাপাশি জাতিসংঘের বিভিন্ন সূচকেও উন্নতি করতে হবে৷ এই সমস্ত সূচকে কিন্তু আমরা আগের মতোই আছি৷ সেখানে আমাদের কোনো উন্নতি হয়নি৷''
পদদলিত হয়ে ২৩ জনের মৃত্যু প্রসঙ্গে পুলিশের ঢাকা বিভাগের ডিআইজি মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে ময়মনসিংহ শহরের অতুল চক্রবর্তী রোডে ব্যবসায়ী শামীম তালুকদারের নূরানী জর্দা কারখানায় দুর্ঘটনাটি ঘটে৷ ইতিমধ্যে কারখানার মালিক শমীমসহ ৮ জনকে আটক করেছে পুলিশ৷ গঠন করা হয়েছে দু'টি তদন্ত কমিটি৷ কমিটিকে আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে৷
পুলিশের এই ডিআইজি জানান, ‘‘অতিরিক্ত মানুষের ভিড়ের কারণে সেহরির পর কারখানার গেট খোলার সঙ্গে সঙ্গে বহু নারী-পুরুষ একসঙ্গে ঢোকার চেষ্টা করে৷ এতে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয় এবং এক পর্যায়ে পদদলিত হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে৷ এ ঘটনায় আহত অর্ধশতাধিক নারীকে ময়মনসিংহ মেডিকেলে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে৷''
স্থানীয়রা জানায়, পৌরসভা কার্যালয়ের পাশে নূরানী জর্দা কারখানায় প্রতিবছরই জাকাতের কাপড় দেয়া হয়৷ এবারও শুক্রবার সকালে কাপড় দেয়ার কথা থাকায় পাশের বস্তি এলাকা, এমনকি ব্রহ্মপুত্রের চর থেকেও হাজারখানেক নারী-পুরুষ রাতেই সেখানে ভিড় করেছিল৷
জানা যায়, ঘটনার পরপরই রিকশা ও ভ্যানে করে হতাহতদের নিয়ে যাওয়া হয় মেডিকেলে৷ সকালে ঐ কারখানার সামনে বহু মানুষের স্যান্ডেল পড়ে থাকতে দেখা যায়৷