যুদ্ধাপরাধীদের খোঁজে ভাটা
৬ আগস্ট ২০১৫পলাতক যুদ্ধাপরাধীদের খুঁজে বের করার উদ্যোগে কেমন যেন ভাটা পড়েছে৷ বিশেষ করে বিদেশে পালিয়ে থাকা সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের ফেরানোর কোনো উদ্যোগই আজকাল চোখে পড়ে না৷ রায় ঘোষণার পর কিছু তৎপরতা দেখা গেলেও কিছু দিন যেতে না যেতেই সব তৎপরতা থেমে যায়৷ আর সরকারের দায়িত্বশীলরাও এ সব ব্যাপারে চুপ হয়ে যান৷ যাঁরা যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলন করছেন তাঁরাও যেন অদৃশ্য কারণে এদের ব্যাপারে চুপ৷ অথচ বিদেশে পালিয়ে থাকা এ সব যুদ্ধাপরাধীরা কিন্তু যে যেখানে আছেন, সেখানেই বেশ সক্রিয়৷ এমনকি তাদের প্রতিষ্ঠা করা সংগঠনের প্ররোচনায় মেয়েরাও উগ্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এ যোগ দিচ্ছে৷
জানা গেছে, যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের রায় ঘোষণা হয়েছে তাদের মধ্যে চারজন বর্তমানে বিদেশে পলাতক অবস্থায় আছেন৷ এদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চৌধুরী মইনুদ্দীন আছেন লন্ডনে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খন্দকার আশরাফুজ্জামান আছেন অ্যামেরিকা, আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পিরোজপুরের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল জব্বার আছেন অ্যামেরিকা আর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার পাকিস্তানে আছেন বলেই সর্বমহলে আলোচনা৷ বাচ্চু রাজাকারের সঠিক কোনো অবস্থান বাংলাদেশ সরকার বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে নেই৷ তবে তিনি পাকিস্তানে আছেন, পুলিশের ধারণা এমনই৷
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান খান কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকার বসে আছে এমন ভাবার কোনো কারণ নেই৷ তাদের অবস্থান ও অপরাধের ব্যাপারে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখা হচ্ছে৷ বিশেষ করে পলাতক যুদ্ধাপরাধীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকার একটি ‘টাস্কফোর্স' গঠন করেছে৷ আইনমন্ত্রী সেই কমিটির প্রধান৷ কমিটি ইতিমধ্যে একাধিক বৈঠক করেছে৷ পলাতক যুদ্ধাপরাধীদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করে নানাবিধ উদ্যোগও নেয়া হয়েছে৷'' তবে শিগগিরই কাউকে দেশে ফিরিয়ে আনা যাবে কিনা, সে ব্যাপারে নিশ্চিত নন তিনি৷
সম্প্রতি লন্ডনের জনপ্রিয় দৈনিক ‘ডেইলি মেল'-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চৌধুরী মইনুদ্দিন পূর্ব লন্ডন মসজিদ ভিত্তিক মহিলা শাখা ইসলামিক ফোরাম অফ ইউরোপ (আইএফই) প্রতিষ্ঠা করেন৷ এই সংগঠনের প্ররোচনায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিশোরী শারমিনা বেগম (১৫) আইএস-এ যোগ দেয়৷ রিপোর্টে বলা হয়, ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মায়ের মৃত্যুর পর শারমিনা নিজের জীবনধারা বদল করে পূর্ব লন্ডন মসজিদে যাতায়াত শুরু করে৷ সেখানেই তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে আইএস-এর মহিলা শাখা ‘সিস্টার্স ফোরাম'-এর৷ এটি সংগঠনের সদস্যদের কাছে ‘মুসলিমাত' হিসেবেও পরিচিত৷ ‘ডেইলি মেল'-এর রিপোর্টার তার তথ্যের সপক্ষে প্রমাণ হিসেবে শারমিনার আত্মীয়স্বজনের কিছু মন্তব্য উপস্থাপন করেন৷ এ নিয়ে সারা বিশ্বে তোলপাড় শুরু হয়েছে৷
সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে গণজাগরণ মঞ্চ চুপ কেন? ডয়চে ভেলের এমন প্রশ্নের জবাবে মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন, ‘‘হ্যাঁ, ওদের ফিরিয়ে আনতে আমাদের কোনো কর্মসূচি নেই, সত্য৷ কিন্তু আমাদের লন্ডন মঞ্চ কর্মসূচি অব্যহত রেখেছে৷ আমরা কোনো কর্মসূচি দেই আর না দেই, সরকার তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে না৷ আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি যে, পলাতক যুদ্ধাপরাধীদের ফিরিয়ে আনতে একটি সেল করা হোক৷ এমন একটা সেল, যেটা তাদের বিদেশে অপরাধের ব্যাপারে তথ্য রাখবে৷ কিন্তু সরকার একটি কমিটি করেই দায়িত্ব শেষ করেছে৷ ওই কমিটি সম্প্রতি কোনো মিটিং করেছে – এমন তথ্যও আমাদের জানা নেই৷''
ডা. সরকার বলেন, ‘‘আমার তো মনে হয়, বিদেশে যারা পালিয়ে আছেন, তারা অনেক ক্ষমতাধর৷ তাই সরকার ওদের ঘাটতে ভয় পায়৷ তাই তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয় না৷''
পলাতক যুদ্ধাপরাধীরা কী ধরনের অপারাধে জড়াচ্ছে, তার খোঁজ-খবর রাখছে না পুলিশ? এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পলাতক যুদ্ধাপরাধীদের ব্যাপারে পুলিশের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য আছে৷ কিন্তু তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারটি কূটনৈতিক তৎপরতার অংশ৷ পুলিশের পক্ষ থেকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ‘রেড নোটিশ' জারি করা আছে৷ এ দিক দিয়ে যতটা তৎপরতা চালানো যায়, আমরা সেটা করছি৷ তাই বিষয়টি নিয়ে পুলিশ চুপ করে বসে আছে, এমন ভাবার কোনো কারণ নেই৷''