পলাতক এমপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন স্পিকার
২২ জুন ২০১৬একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, সোমবার সংসদের ৪ নম্বর লবির হাজিরা খাতায় সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার স্বাক্ষর রয়েছে৷ তবে হাজিরা খাতায় সই করার পর তিনি সংসদের অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেছেন কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷
আমানুর রহমান খান রানা টাঙ্গাইলের আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি৷ টাঙ্গাইল-৩ আসনের সংসদ সদস্য রানাকে গ্রেপ্তারের জন্য গত ৬ এপ্রিল টাঙ্গাইলের আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন৷ এরপরও তিন ধরা না পড়ায় ১৬ মে তার বাড়ির মালামাল বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেয় আদালত৷ পুলিশ গতমাসে বাড়ির কিছু মালামাল বাজেয়াপ্ত করলেও তাকে আটক করতে পারেনি৷ আর বাড়িতে তেমন কোনো মালামালও পায়নি৷ এরইমধ্যে সোমবার সংসদ ভবনে গিয়ে তিনি সংসদ সদস্যদের হাজিরা খাতায় সই করায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে৷ সমালোচনার মুখে পড়েছে পুলিশ এবং শাসক দল আওয়ামী লীগ৷
সংসদ ভবনে সদস্যদের প্রবেশের জন্যে ৫টি পথ (লবি) রয়েছে৷ এরমধ্যে এক নম্বর লবি দিয়ে সংসদ অধিবেশনে প্রবেশ করেন বিরোধী দলীয় নেতা, ২ ও ৪ নম্বর লবি দিয়ে প্রবেশ করেন সাধারণ সংসদ সদস্যরা, ৩ নম্বর লবি দিয়ে প্রবেশ করেন নারী সংসদ সদস্যরা এবং ৫ নম্বর লবি দিয়ে অধিবেশনে প্রবেশ করেন সংসদ নেতা ও প্রথানমন্ত্রী৷
জানা গেছে, সংসদ ভবনের মূল ফটক দিয়ে সোমবার বেলা ১১টার দিকে প্রবেশ করেন আমানুর রহমান খান রানা৷ সংসদ ভবনের দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত থাকলেও পলাতক আমানুর রহমান খান রানাকে কেউ বাধা দেননি৷ এরপর তিনি ৪ নম্বর লবিতে গিয়ে হাজিরা খাতায় সই করে দ্রুত একই পথে সংসদ ভবন ত্যাগ করেন৷
জনা গেছে, চলতি বাজেট অধিবেশনে হাজিরা দিতে না পারলে রানার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হয়ে যেত৷ নিয়ম অনুযায়ী কোনো সংসদ সদস্য যৌক্তিক কারণ ছাড়া সংসদে টানা ৯০ কার্যদিবস অনুপস্থিত থাকলে তার সদস্যপদ বাতিল হয়ে যায়৷ রানা আত্মগোপনে থেকেই হাজিরা খাতায় সই করায় এখন তিনি পরবর্তী ৯০ কার্য দিবসের জন্য ‘ঝুঁকিমুক্ত' হলেন৷
এনিয়ে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান নিজেকেই নিজে ছোট করেছেন৷ তিনি একটি মামলার আসামি৷ আইনসভার সদস্য হিসেবে তাঁর উচিত্ ছিল আদালতে হাজিরা দিয়ে জামিন নিয়ে সংসদে আসা৷''
আমানুর রহমান খান রানার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে চিফ হুইপ বলেন, ‘‘এটা জাতীয় সংসদের স্পিকারের এখতিয়ার৷ তিনিই বিষয়টি দেখবেন৷ তিনি সংসদের অভিভাবক৷ চিফ হুইপ হিসেবে আমার তেমন কিছু করনীয় নেই৷ আর তিনি তো হঠাত্ এসে হাজিরা খাতায় সই করে চলে গেছেন৷ আমরা জানতাম না, দেখিও নাই৷ স্পিকারও জানতেন না৷''
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে চিফ হুইপ বলেন, ‘‘সংসদের ভেতরে তাকে গ্রেপ্তার করতে হলে স্পিকারের অনুমতি লাগত৷ গেটে বা গেটের বাইরে আটক করা যেত৷ কিন্তু তার বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সংসদে পাঠানো হয়নি৷ যারা গেটে ছিলেন, তারা জানতেন না যে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে৷''
চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ আরো বলেন, ‘‘সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার এই কাজে দলের ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে পড়বে বলে আমি মনে করিনা৷ এটা সংসদের ব্যাপার৷ তিনি একজন সংসদ সদস্য৷''
প্রিয় পাঠক, স্পিকার কি আওয়ামী লীগের এই এমপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন বলে মনে করেন? নীচে আপনার মতামত জানান৷