‘হাই রিস্ক' ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ
৬ জুন ২০১৭খরচ দিতে হবে বাংলাদেশকে৷ সোমবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর রাষ্ট্রদূতসহ একটি প্রতিনিধি দল সিভিল অ্যাভিয়েশনের চেয়ারম্যান এহসানুল গণি চৌধুরীসহ সিভিল অ্যাভিয়েশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন সিভিল অ্যাভিয়েশন কার্যালায়ে৷ বৈঠকে ইইউ'র প্রতিনিধিরা জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশকে ‘হাই রিস্ক' দেশ ঘোষণা করেছে৷ নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ থেকে যেসব পণ্য আকাশপথে কার্গোর মাধ্যমে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে যাবে, সেসব পণ্য দ্বিতীয় দফায় স্ক্যানিং (তল্লাশি) করতে হবে৷
দ্বিতীয় ধাপে স্ক্যানিং বলতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন মেথডের কথা ৷এটা ডগ স্কোয়াড, ডিটেকশন যন্ত্র এবং ম্যানুয়ালি– এই তিনভাবে হতে পারে৷ এছাড়া এই স্ক্যনিং তৃতীয় কোনো দেশেও হতে পারে৷ তৃতীয় কোনো দেশে এই স্ক্যানিং হলে তার খরচ বাংলাদেশ, মানে বাংলাদেশের সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটিকেই করতে হবে৷
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইতোমধ্যে বিস্ফোরক শনাক্তকরণ যন্ত্রসহ আধুনিক স্ক্যানিং যন্ত্র বসানোর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে৷ যাত্রীদের লাগেজ তল্লাশি, যানবাহন তল্লাশি, তরল বিস্ফোরক শনাক্তকরণে আলাদা আলাদা যন্ত্র বসানো হচ্ছে৷ ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান রেডলাইনের পরামর্শে এসব যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে৷ এর মধ্যে বেশ কিছু যন্ত্রপাতি সংযোজনের কাছে চলছে৷ এছাড়া বেশ কিছু যন্ত্রপাতি শাহজালালে সংযোজন হয়েছে, কিছু সংযোজনের কাজ চলমান রয়েছে৷ তবে বিস্ফোরক ডিটেকটশন স্ক্যানিং ছাড়া ইইউ বাংলাদেশের বিমান ও নৌ বন্দর থেকে কোনো ধরণের পন্য পরিবহণ করতে দেবে না৷ বাংদেশের বিমানবন্দর এবং সমুদ্রবন্দর না করলে তা অবশ্যই তৃতীয় কোনো দেশে করাতে হবে৷ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক কাজী ইকবাল করিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার বিমানবন্দরে কোনো সমস্যা হবে না, সেটা আমি বলতে পারি৷ ওরা একটা সেকেন্ড এক্সপ্লোসিভ চেক চায়৷ সেটাস্ক্যানিং করার ব্যবস্থা আমার এয়ারপোর্টে আছে৷ কিন্তু সার্বিকভাবে কী প্রভাব পড়বে তা আমি বলতে পারব না৷
কারণ, তারা আকাশ এবং জলপথে সব ধরণের কার্গোরই এক্সপ্লোসিভ সিকিউরিটি চেক চায়৷''
আর বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন ডগ এবং এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন যন্ত্রও আমাদের আছে৷ আমাদের এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (এলইডিএস) কেনা হয়েছে, এটি কার্যকর করতে কয়েকমাস সময় লাগবে৷ এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশনের তিনটি পদ্ধতির দু'টি এখনই আমাদের আছে৷ আমরা তাই আমাদের এখানেই তা করার প্রস্তাব করেছি৷ এটা নিয়ে কোনো জটিলতা হবে না৷''
তিনি জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে কুয়েতকেও ইইউ ‘হাইরিস্ক' ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত করেছে৷
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচয়ে বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ইইউ দেশগুলো ৪ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলারের গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ৷ নিরাপত্তার জন্য এই দ্বিতীয় স্ক্যানিংয়ের কারণে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের ওপর অর্থিক চাপ বাড়তে পারে৷
এদিকে ইইউ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘‘দ্বিতীয় দফা স্ক্যানিং ১ জুন থেকেই কার্যকর করা হয়েছে৷ আর দ্বিতীয় দফা স্ক্যানিং বলতে এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন স্ক্যানিংকে বোঝানো হয়েছ৷'' ইইউ বাংলাদেশ থেকে ইইরোপে পণ্য পরিবহনকারী সবাইকে এটা অনুসরণ করতে বলেছে৷ তারা বলেছে, এই স্ক্রিনিং বাংলাদেশ বা তৃতীয় কোনো দেশে হতে পারে৷ বাংলাদেশে না হলে তা আগেই জানাতে হবে৷
এর আগে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ২০১৬ সালের মার্চে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট পরিচালনার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে যুক্তরাজ্য৷ এরপর যুক্তরাজ্যের পরামর্শে শাহজালালের নিরাপত্তার দায়িত্ব পায় ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান রেড লাইন৷ প্রতিষ্ঠানটি সিভিল অ্যাভিয়েশনের নিরাপত্তা কর্মীদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি যাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশিসহ বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজনের পরামর্শ দেয়৷