সবাই অভিবাসী
১৬ অক্টোবর ২০১৩প্রদর্শনীতে ১৯১৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত নানা রকম কমিক বইয়ের নমুনা রাখা আছে৷ প্রপাদ্য হলো: অভিবাসীদের কাহিনি কিভাবে এই কমিক হিরোদের উপর ছাপ ফেলেছে৷ ফরাসি কমিক বইয়ের সিরিজ ‘‘অ্যাস্টেরিক্স''-এর স্রষ্টারা ছিলেন পোলিশ এবং ইটালিয়ান৷ মার্কিন ‘‘সুপারম্যান''-এর দুই স্রষ্টাও পূর্ব ইউরোপ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন৷
প্রায় ১১৭ জন শিল্পীর ৫০০টি স্কেচ ও নথিপত্র রাখা হয়েছে এই প্রদর্শনীতে৷ এগুলি থেকে বোঝা যায়, যেহেতু কমিক বইও সংস্কৃতির মহলে সীমানায় এক প্রান্তিক অস্তিত্ব যাপন করে, সেহেতু অভিবাসীরা যেন বিশেষভাবে এই ‘আর্ট ফর্মের' প্রতি আকৃষ্ট হন৷ কমিক বইয়ের ‘সাব-কালচারের' সঙ্গে অভিবাসনের সেখানেই নাড়ির সম্পর্ক৷
কমিক চরিত্ররা নিজেরাই তো অনেক সময় বিদেশি-বহিরাগতদের একটা প্রচ্ছন্ন প্রতীক: যেমন ‘গল' উপজাতির মানুষ হলদে-চুলো অ্যাস্টেরিক্স রোমক সাম্রাজ্যে এক বর্বর ছাড়া আর কিছু নয়৷ আজকের ‘এলিয়েন' কাল-এলের নানা আশ্চর্য ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তাকে পৃথিবীর মানুষদের মধ্যে বাস করতে বাধ্য হচ্ছে৷
অভিবাসনের ইতিহাস সংগ্রহশালার কিউরেটর এলেন বুইলঁ বলেছেন: ‘‘সুপারম্যান তো আসলে সুপার অভিবাসী৷ সে ক্রিপ্টন গ্রহ থেকে এসেছে পৃথিবীতে তার সব সুপার ক্ষমতা নিয়ে৷ কিন্তু নির্বাসনের অনুভূতি এখানেও তাকে ছাড়েনি৷'' এভাবেই বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে কমিক বইয়ের মিডিয়ামটাই যেন ধীরে ধীরে সিরিয়াস হয়ে ওঠে৷ কমিক বুক লেখক ও শিল্পীরা সমাজে সহিষ্ণুতার অভাব সম্পর্কে কিছু অপ্রিয় সত্য তুলে ধরতে শুরু করেন৷
যেমন জন্মসূত্রে ইরানি কার্টুনিস্ট মারজানে সাত্রাপি-র আত্মজীবনীমূলক কমিক বই ‘‘পার্সিপোলিস''-এর কিছু আদত অলঙ্করণ প্রদর্শনীতে রাখা হয়েছে৷ বইটির উপজীব্য ইরানি বিপ্লবের আমলে এক ইরানি কিশোরীর ইউরোপে পলায়নের বিষাদময় অভিজ্ঞতা৷ পরে সেই কমিক বইকে ভিত্তি করে তৈরি একটি কাহিনিচিত্র ২০০৭ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে জুরিদের পুরস্কার পেয়েছিল৷
সাত্রাপি-র মতো লেখকরাও উপন্যাস না লিখে কমিক বইয়ের দিকে ঝোঁকেন কেন, তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বুইলঁ বলেছেন: ‘‘ছবিতে গল্প বলাটা হয়ত বেশি সহজ, কিংবা চরিত্রগুলো ব্যঙ্গচিত্র হওয়ার ফলে লেখকরা এমন অনেক কিছু বলতে পারেন, যা উপন্যাস হিসেবে কিংবা আলোকচিত্রে বলতে গেলে অত্যন্ত বেদনাদায়ক হয়ে উঠবে৷''
সেটাই কি অভিবাসনের অভিজ্ঞতা নয়?
এসি/ডিজি (এপি, রয়টার্স)