‘মেঘারণ্য’
১৯ এপ্রিল ২০১৪হাবিয়ের রামিরেস যখন আগ্নেয়গিরির মাথায় বসে থাকেন, তখন তিনি কখনো-সখনো ভাবেন, মানুষজন এই তাকানা আগ্নেয়গিরি সম্পর্কে কত রকম কাহিনি শোনায়: তাকানা নাকি একটি সুপ্ত ড্র্যাগন৷ বাকিটা কিন্তু রূপকথা নয়৷ রোজই কুয়াশা এসে পাহাড়টিকে ঢেকে দেয়৷ সেই কুয়াশার জল আটকে থাকে গাছের ডালে-পাতায়৷ ফলে সৃষ্টি হয় এক অভিনব পরিবেশ, যার নাম ক্লাউড ফরেস্ট বা মেঘারণ্য৷
রামিরেস বলেন: ‘‘বিভিন্ন প্রজাতির সহাবস্থান হলো এখানকার জীববৈচিত্র্যের বৈশিষ্ট্য৷ জন্তু-জানোয়ার থেকে শুরু করে ছত্রাক, জীবাণু, উদ্ভিদ, পাখি – সব প্রজাতির এক অদ্ভূত সংমিশ্রণ৷'' উদ্ভিদ ও গাছগুলো পাহাড়ের ঢালে মাটি ধরে রাখে এবং বাতাসকেও আর্দ্র রাখে৷ ফরেস্ট ইঞ্জিনিয়ার রামিরেস বিশ্বের বৃহত্তম প্রকৃতি সুরক্ষা সংগঠন আইইউসিএন-এর হয়ে কাজ করেন৷ সেই কাজের সূত্রেই তাঁকে মাসে বেশ কয়েকবার তাকানা আগ্নেয়গিরির উপর চড়তে হয়৷ আজ তিনি একদল স্থানীয় কৃষিজীবীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য এসেছেন৷
চাষিদের পাহাড়ের উপর জমি আছে, যে জমি তাঁরা সরকারের কাছ থেকে পেয়েছেন৷ কী কাজের জন্য তাঁরা সে জমি ব্যবহার করবেন, সেটা তাঁরা নিজেরাই ঠিক করবেন৷ চাষি ফ্রান্সিস্কো অরটিস বলেন: ‘‘প্রকৃতিই আমাদের সব, কেননা আমরা তা থেকে বেঁচে থাকি৷ সেই কারণে তাকে রক্ষা করাটা আমাদের কাছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ৷'' অন্যান্য চাষিদের মতো ফ্রান্সিস্কো-ও ঠিক করেছেন যে, তিনি এই পাহাড়ে ভুট্টা কিংবা সীমের চাষ করবেন না৷ সেজন্য তিনি আইসিইউএন-এর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ পাবেন৷
সবাই মিলে তাঁরা নিজেদের জমির উপর পুরানো গাছের গুঁড়ি ও ডাল দিয়ে একটি ফায়ারওয়াল বা প্রতিবন্ধক সৃষ্টি করছেন৷ এভাবে তাঁরা পাহাড়ের বৃক্ষশূন্য ঢালগুলিকে ক্ষয় থেকে রক্ষা করতে চান৷ রামিরেস বলেন: ‘‘পানি যখন আসে, তখন তা পথে যা কিছু আছে, সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়: কাদা, মাটি, পাথর – সবই দুর্ধর্ষ গতিতে৷ এ সব কিছু প্রথমে কোনো বাধায় আটকা পড়ে, পরে জলের তোড়ে ভেসে যায়৷ ফলে উপত্যকার সব নদী কুল ছাপিয়ে যায়৷''
নদীর পানি আগে অনেক বেশি ঘোলাটে ছিল, কেননা আগ্নেয়গিরি থেকে পাতা, ডালপালা সবই জলে ভেসে নীচে আসতে৷ এখন যে নদীর পানি নির্মল, সেটা তাকানা-র চাষিদের ঐ ‘বাঁধের' কল্যাণে৷