আবদুল লতিফ সিদ্দিকী
১ জুলাই ২০১৫গত বছরের ২৯শে সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে হজরত মুহাম্মদ (সা.) ও তাবলিগ জামাত নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়েন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী৷ তখন তাঁকে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন ইসলামি সংগঠন আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা কর৷ তাঁকে মন্ত্রিসভা এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম ও প্রাথমিক সদস্য পদ থেকেও বহিষ্কার করা হয়৷ শুধু তাই নয়, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও কটূক্তির অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৭টি মামলা হয়৷ দেশের বাইরে থাকা অবস্থায় প্রতিটি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত৷
এই পরিস্থিতিতে গত বছরের ২৩শে নভেম্বর কলকাতা থেকে বিমানে দেশে ফেরেন লতিফ সিদ্দিকী৷ এরপর বিমানবন্দর থেকে অজ্ঞাত স্থানে চলে যাওয়ার পর ২৫শে নভেম্বর ধানমন্ডি থানায় তিনি আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠায়৷
গত ২৬শে মে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগের সাত মামলায় সাবেক এই মন্ত্রীকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তী জামিন দেয় আদালত৷ এছাড়া আদালত এ সব মামলার কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে৷ গত ২৩শে জুন একই অভিযোগে করা আরো ১০ মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন পান আবদুল লতিফ সিদ্দিকী৷
গ্রেপ্তারের পর অসুস্থ হয়ে পড়লে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেলের কেবিনে এতদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন লতিফ সিদ্দিকী৷ আর সেখান থেকেই তিনি সোমবার বিকেলে জামিনে মুক্তি পান৷
জামিনে মুক্তির সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘‘আমার কাছে আপনাদের জন্য কোনো সংবাদ নেই৷ তাই এখানে ছবি তুলবেন না৷'' ‘আপনি তো এখন মুক্ত' সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমি এখনও মুক্ত না৷ আমি মুক্ত হবো নেত্রী যখন সিদ্ধান্ত নেবেন৷ নেত্রীর সিদ্ধান্তের বাইরে আমি মুক্তও না, অমুক্তও না৷''
ইসলাম ভিত্তিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া
লতিফ সিদ্দিকী জামিনে মুক্ত হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইসলামপন্থি কয়েকটি সংগঠন এবং রাজনৈতিক দল৷ তারা লতিফ সিদ্দিকীকে আবারো গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে কঠোর কর্মসূচি দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে৷
‘নাস্তিকতার' অভিযোগ এনে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে ‘কতল' বা মাথা কেটে হত্যার হুমকি দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম৷ আল্লামা আহমদ শফীর নেতৃত্বাধীন সংগঠনটির ঢাকা মহানগর শাখার সদস্য সচিব মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবিব সোমবার এ হুমকি দেন৷ তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে কোনো নাস্তিককে ছেড়ে দেওয়া হয়নি৷ এখনও ছেড়ে দেওয়া হবে না৷ লতিফ সিদ্দিকীকে বাংলাদেশের মাটিতে মুক্ত অবস্থায় থাকতে দেওয়া হবে না৷ যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই কতল করা হবে৷''
লতিফ সিদ্দিকীকে পুনরায় গ্রেপ্তার করে ফাঁসির দাবি জানিয়েছে ঢাকা মহানগর হেফাজতে ইসলাম৷ তাঁকে আবার গ্রেপ্তার না করা হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন হেফাজতের ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক মাওলানা নূর হোছাইন কাসেমী৷
ইসলামি ঐক্যজোট সোমবার মাগরিবের নামাজের পর লালবাগ থেকে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল করে৷ সেখানে ইসলামি ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘‘লতিফকে মুক্তি দিয়ে উগ্রবাদী মুরতাদ, নাস্তিক্যবাদী জঙ্গিদের জামাই আদর করা হচ্ছে৷ মুরতাদ, নাস্তিক্যবাদী, জঙ্গি লতিফদের ঠাঁই বাংলাদেশে হবে না৷'' আগামী শুক্রবার বাংলাদেশের প্রতিটি মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণাও দেয় ইসলামি ঐক্যজোট৷
খেলাফতে ইসলামীর আমির মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী বলেছেন, ‘‘ইমানদার রোজাদারদের তীব্র আন্দোলনে নাস্তিক-মুরতাদরা খড়কুটোর মতো ভেসে যাবে৷ লতিফকে জামিন দিয়ে সরকার নিজের জামিন কেটে দিয়েছে৷ তাই এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো নৈতিক অধিকার নেই৷ তারা ইসলাম ও মুসলমানদের চরম দুশমন৷''
সোমবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুছ আহমাদ বলেন, ‘‘স্বঘোষিত মুরতাদ আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে জামিনে বের হওয়ার সুযোগ দিয়ে সরকার ইসলামবিদ্বেষীদের উসকে দিয়েছে৷''
লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্যপদ বহাল
দল থেকে বহিষ্কার হলেও লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্যপদ এখনো বহাল আছে৷ আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে কেউ দলত্যাগ করলে বা দল থেকে বহিস্কার করা হলে তাঁর সংসদ সদস্যপদ বাতিল হয়ে যায়৷ এ ব্যাপারে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘‘আমার কাছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বহিষ্কারের কোনো চিঠি আসেনি৷ চিঠি পেলে বিধি অনুযায়ী আমি তা নির্বাচন কমিশনে (ইসি) পাঠাবো৷ কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়ে সংসদ সচিবালয়ে জানানোর পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে৷''
তিনি বলেন, ‘‘উনি আগেও যে অবস্থায় ছিলেন, এখনও সেই অবস্থানে রয়েছেন৷ ওনার সংসদের আসনটি এখনও একই অবস্থায় রয়েছে৷'' সংসদে ট্রেজারি বেঞ্চের ১৪ নম্বর আসনটি লতিফ সিদ্দিকীর বলেও জানান তিনি৷
নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলামও এ ধরনের চিঠি না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এ ধরনের কোনো চিঠি তারা দল বা সংসদ সচিবালয় থেকে পাননি৷''