1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মাল্টিফ্যাবসে বিস্ফোরণ

সমীর কুমার দে ঢাকা
৮ জুলাই ২০১৭

একটার পর একটা দুর্ঘটনা, তাতেও যেন আমাদের হুঁশ ফিরছে না৷ সর্বশেষ গাজীপুরে মাল্টিফ্যাবস নামে একটি পোশাক কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে ১৩ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/2gCCX
বাংলাদেশ গার্মেন্টস কারখানায় বিস্ফোরণ
ছবি: picture alliance / NurPhoto

মাল্টিফ্যাবসে বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় জয়দেবপুর থানার চক্রবর্তী পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আব্দুর রশীদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন৷ মামলায় নিহত তিন শ্রমিক আব্দুস সালাম, মনসুরুল হক ও এরশাদ হোসেনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১০ জনকে আসামি করা হয়৷

নিহত শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা প্রসঙ্গে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তারা সেখানে দায়িত্বে ছিলেন তাই তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে৷ পুলিশের তদন্তে হয়ত তাদের নাম বাদ যাবে৷ আর বয়লারটি তো মেয়াদ উত্তীর্ণ না, এটা প্রতি বছর নবায়ন করতে হয়৷ মালিকপক্ষ সেটা জমাও দিয়েছিল৷ কিন্তু অধিদপ্তর থেকে লোক আসতে না পারায় কয়েকদিন পার হয়ে গেছে৷ ওই দিন বয়লার সংস্কারের কাজ চলছিল৷ কারখানাটি তো বন্ধ ছিল৷''

বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান

তবে গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ওই দিন কারখানা খোলা ছিল, যারা কাজ করছিলেন তারা দুই বার কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে বয়লার থেকে খারাপ সিগন্যাল দিচ্ছে, দুর্ঘটনা ঘটতে পারে৷ কর্তৃপক্ষ সেটা কানে না তুলে তাদের কাজ চালিয়ে যেতে নির্দেশ দেয়৷ এটা তো সরাসরি হত্যাকাণ্ডের শামিল৷ তাই বলেছি মালিকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হতে হবে৷ তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে৷''

এই কারখানায় যে বয়লারটি ছিল সেটি পুরনো মডেলের৷ অধিকাংশ ফ্যাক্টরি এটা বদলে নতুন মডেলের বয়লার আনলেও মাল্টিফ্যাবসে ছিল পুরনোটাই৷ আরো কিছু কারখানায় এই ধরনের বয়লার আছে বলে স্বীকার করলেন বিজিএমইএ-র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান৷ তিনি বলেন, ‘‘অধিকাংশই বদলে ফেলা হয়েছে৷ পর্যায়ক্রমে সব কারখানায় নতুন বয়লার বসবে৷'' পুরনো বয়লারগুলো ঝুঁকিপূর্ণ বলেও স্বীকার করেন তিনি৷

গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু

সর্বশেষ গত ৩ জুন গাজীপুরে মাল্টিফ্যাবস পোশাক কারখানায় ভয়াবহ বয়লার বিস্ফোরণে ১৩ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন৷ এতে কারখানার একটি চারতলা ভবনের নীচতলা ও দ্বিতীয় তলার দুই পাশের দেয়াল, দরজা-জানালা ও মেশিনপত্র উড়ে যায় এবং দুমড়ে মুচড়ে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়৷ কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও ভেঙে পড়া কাঠামোর নিচে চাপা পড়ে এবং বিস্ফোরিত বয়লারের টুকরোর আঘাতে প্রায় অর্ধশত আহত হয়েছেন৷ স্থানীয়রা ও উদ্ধারকর্মীরা জানায়, এ ঘটনায় হতাহতদের প্রায় সবাই শ্রমিক৷ তবে কারখানার সামনের রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারী কয়েক সাধারণ পথচারীও আহত হয়৷

পোশাক কারখানায় এত দুর্ঘটনার পরও মালিকরা থেকে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে৷ মালিকদের অবহেলার কারণেই তো ঘটছে এসব দুর্ঘটনা৷ শ্রমিক নেতারা বলছেন, মালিকদের আইনের আওতায় এনে বিচার করা গেলে দুর্ঘটনা কমে যাবে৷

মাল্টিফ্যাবস কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত প্রত্যেকের পরিবার ৮ লাখ টাকা করে পাবেন৷ ৪ জুলাই দুপুরে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন৷ এ ঘটনায় নিহত প্রত্যেকের পরিবার বিমার খাত থেকে ২ লাখ এবং শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে অনুদান বাবদ আরও ৩ লাখ অর্থাৎ মোট ৫ লাখ টাকা করে দেয়া হবে৷ আর মালিক দেবে ৩ লাখ করে৷

শ্রমিক নেত্রী মোশরেফা মিশু বলেন, ‘‘মালিক ৩ লাখ টাকা দেবে নিহত শ্রমিকদের, বলেন এটা কতটা হাস্যকর! আমরা বলেছি, নিহত শ্রমিকদের এক জীবনের টাকা দিতে হবে৷ যেটার পরিমাণ ৪৮ লাখ করে৷'' তিনি দাবি করে, ‘‘এই ঘটনায় মালিকের বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় হত্যা মামলা হতে হবে৷ মালিককে সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে পারলে শ্রমিকদের মৃত্যু কমবে৷'' এ পর্যন্ত ৩ হাজার শ্রমিক মারা গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘ইউরোপ-আমেরিকার ক্রেতারা বলে, বাংলাদেশের শ্রমিকদের রক্তে ভেজা এই পোশাক আমরা কিনব না৷ এটা শুনতে কার ভালো লাগে বলুন৷ আসলে এখানে শ্রমিকরা শোষিত হচ্ছে৷''