জিএম ফসল
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৩ভারতের সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত টেকনিক্যাল বিশেষজ্ঞ কমিটি তার চূড়ান্ত রিপোর্টে ভারতে জেনেটিক্যালি মডিফায়েড বীজ বা ফসলের ক্ষেত্রীয় গবেষণা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে বিশেষ করে বিটি খাদ্য শস্যের ক্ষেত্রে৷ এজন্য আরো গবেষণার দরকার আছে৷ এ বিষয়ে আগেকার রিপোর্টে অনেক অসঙ্গতি রয়ে গেছে৷ কারচুপিও আছে অনেক৷ ভারতের মতো দেশের দীর্ঘ মেয়াদি আর্থ-সামাজিক দিকটি খুঁটিয়ে দেখা হয়নি৷ দেখা হয়নি, জিএম খাদ্য স্বাস্থের পক্ষে কতটা নিরাপদ, জিএম চাষের খরচ বেশি কিনা, খাদ্যাভাব পূরণ করতে পারবে কিনা ইত্যাদি৷
বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্টে এই অভিযোগও করা হয়, এর পেছনে স্বার্থান্বেষী লবি কাজ করছে৷ আঙুল তোলা হয়েছে পশ্চিমা দেশগুলির বায়ো-টেকনলজি শিল্পের দিকে৷ তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে সরকারের কিছু কৃষি গবেষণা সংস্থা এবং কৃষি মন্ত্রণালয়৷ মার্কিন বহুজাতিক সংস্থা মনসান্টোকে সরকারি কৃষি-গবেষণা প্রতিষ্ঠানে জায়গা দেয়া হয়েছে৷ ফলে ভারতের কৃষি নীতিতে তাদের প্রভাব পড়েছে৷ বহুজাতিক বায়োটেক কোম্পানিগুলির লক্ষ্য মুনাফা, কৃষকদের কল্যাণ নয় বলা হয় চূড়ান্ত রিপোর্টে৷
জিএম চাষে উৎপাদন বাড়ার দাবিও ঠিক নয়৷ ২০ বছর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাণিজ্যিকভাবে জিএম ফসলের চাষ শুরু হয়৷ বিটি তুলোর উৎপাদন বাড়েনি৷ যেটা বেড়েছে, সেটা হলো স্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর তার ক্ষতিকারক প্রভাব৷
ভারতের কৃষিমন্ত্রী জিএম ফসলের পক্ষে মত ব্যক্ত করে বলেছেন, খাদ্য সুরক্ষা আইন কার্যকর হলে সরকারকে ভরতুকি দিতে হবে এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা৷ অথচ ন্যূনতম সমর্থন দাম বাড়াতে চাইবে না সরকার৷ তাতে মার খাবে চাষিরা৷ তাঁরা চাষ বদল করবে৷ ধানের বদলে গম কিংবা গমের বদলে ধান বা অন্যকিছু৷ খাদ্য সুরক্ষা রূপায়নে দেখা দেবে অসুবিধা৷ সেক্ষেত্রে আমদানি ছাড়া পথ নেই৷ আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা বাড়লে দামও বাড়বে৷ কাজেই দেশেই বাড়াতে হবে উৎপাদন৷ তারজন্য জিএম ফসলই উপযুক্ত বিকল্প৷ উদাহরণস্বরূপ বিটি তুলো চাষে রোগপোকা দমন কোরে হেক্টর প্রতি উৎপাদন বেড়েছে ১৩৭ লাখ গাঁট থেকে ৩৫২ লাখ গাঁট৷ কৃষকদের আয় বেড়েছে দ্বিগুণ৷
বামপন্থি দলগুলি মনে করে, ভারতে ৭২ থেকে ৮২ শতাংশ যেখানে ছোট বা প্রান্তিক কৃষক এবং যেখানে জৈববৈচিত্র্য এত ব্যাপক, সেখানে জিএম খাদ্যশস্য উৎপাদনে যাওয়া ভুল হবে৷ এই চায খরচ সাপেক্ষ৷ ছোটো চাষিরা সহজেই পড়বে ঋণের ফাঁদে৷ জিএম চাষ না করেই ভারতে খাদ্য উৎপাদন যখন ৬ কোটি ৬০ লাখ টন থেকে বাড়িয়ে ২৫ কোটি ৪০ লাখ টন করা সম্ভব হয়েছে, তখন ২০২০ বা ২০৫০ সালে বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য খাদ্যের অভাব হবে না৷
জেনেটিক্যালি মডিফায়েড বীজ বলতে কী বোঝায়? গবেষণাগারে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সাহায্যে বীজের জিনঘটিত পরিবর্তন করা হয়৷ সুফল হলো, এই বীজ তাড়াতাড়ি বাড়ে এবং ফলন দেয়৷ ফসলের কীটপতঙ্গ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি, পুষ্টিগুণও বেশি৷ তবে ক্ষতি হয় পরিবেশের, জীববৈচিত্র্যের, স্বাস্থ্যের৷ দীর্ঘমেয়াদে মাটির উর্বরাশক্তি কমে যায়৷