ভারতের দৃষ্টিতে পরমাণু চুক্তি
২৬ নভেম্বর ২০১৩দীর্ঘ টালবাহানার পর অবশেষে ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখবে, এই মর্মে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে ইরানের জেনিভা চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে দিল্লি৷ মাত্র ছয় মাসের জন্য এই অন্তর্বর্তী চুক্তির শেষকথা বলার সময় না এলেও, আপাতদৃষ্টিতে ভারতের লাভ হবার সম্ভাবনাই বেশি৷ প্রস্তাবিত চুক্তির ফলে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যে উদ্বেগ ছিল তার সমাধানের এটা হলো প্রথম ধাপ৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ফলে ভারত-ইরান সহযোগিতামূলক যেসব প্রকল্প আটকে ছিল, তা পর্যালোচনা করতে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং বৈঠকে বসবেন ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইব্রাহিম রহিমপরের সঙ্গে৷
ইরান তার অশোধিত তেল বিক্রির লাভের পাওনা ৬০০ কোটিরও বেশি মার্কিন ডলার তুলে নেবার দিকে জোর দেবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ফলে ব্যাংক ট্রান্সফার করা সম্ভব হয়নি৷ এছাড়া বিশ্লেষক ও সরকারি মহলের ধারণা দীর্ঘমেয়াদে এনার্জি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের পথ আবার খুলে যাবে৷ শুধু কী তাই? পরিবর্তিত ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভারত এনার্জি ও বাণিজ্যিক পরিবহনে লাভবান হতে পারে৷ ভারতীয় তেল শোধনাগারগুলির ওপর চাপ কম হবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দরুণ৷ কাঁচা তেলের দাম কমতে পারে, কমতে পারে মুদ্রাস্ফীতির হার, এই আশায় ভারতের শেয়ার বাজারের সূচক আকাশ ছুঁয়েছে৷
পাকিস্তান হয়ে ভারত-ইরান গ্যাস পাইপ লাইন নিয়েও নতুন উদ্যোগ শুরু হবার সম্ভাবনা আছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বেসামরিক পরমাণু সহযোগিতা চুক্তি হবার এক বছর পর, ভারত ইরানের সঙ্গে গ্যাস পাইপ লাইন প্রকল্প থেকে সরে আসে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে৷ এখন তা পুনরুজ্জীবিত হতে পারে৷
ইরানের জেনিভা চুক্তি ভারতের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ? আর সে সম্পর্কে কী বলছে ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলি? টাইমস অফ ইন্ডিয়ার মতে, এই অন্তর্বর্তী জেনিভা চুক্তি ভারতের পক্ষে স্বস্তিদায়ক৷ চুক্তি অনুযায়ী, ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে পারবে না৷ তারা এ শর্ত আদৌ মানছে কিনা – সেটা দেখার জন্য আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি সংস্থাকে তা পরীক্ষা করার সুযোগ দিতে হবে৷ অর্থাৎ, পরমাণু শক্তিকে শান্তিপূর্ণ কাজে লাগানো হচ্ছে বিশ্বের কাছে তা প্রমাণ করতে হবে ইরানকে৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখতে হবে৷
ভারতের দিক থেকে এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের কৌশলগত সহযোগিতা মজবুত হতে পারে৷ সুগম হতে পারে আফগানিস্তানের আর্থ-সামাজিক বিনিয়োগের পথ৷ স্বাভাবিক হতে পারে ইরানের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য৷ জোরদার হতে পারে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের সঙ্গে ভারতের চিরাচরিত কূটনৈতিক বন্ধন৷ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটা সাময়িক রফা হওয়ায় মধ্য প্রাচ্যের পরিস্থিতি আর আগের মতো থাকবে না৷ ভারতকে সেটা কাজে লাগাতে হবে৷