মোদী সরকারের রোষে ই-বাণিজ্য
২০ জানুয়ারি ২০২০ভারতের মন পাওয়ার জন্য এখনও চেষ্টার কসুর করছেন না আন্তর্জাতিক ই-বাণিজ্য সংস্থা অ্যামাজন-এর সিইও জেফ বেজোস৷ সোমবারই তিনি ভারতে অ্যামাজনের পণ্য ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য এক ঝাঁক বিদ্যুৎচালিত ই-রিকশা চালু করার ভিডিও টুইট করেছেন৷ তার আগে, শুক্রবার, তিন দিনের সফর শেষে ভারত ছাড়ার সময় বেজোস ঘোষণা করে গেছেন, অ্যামাজন আরও ১০ লক্ষ নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি করবে ভারতে৷ কিন্তু এত প্রতিশ্রুতির আড়ালে ভারত সরকারের সঙ্গে অ্যামাজনের সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার সত্যিটা চাপা থাকছে না৷ অ্যামাজনের সিইও ভারতে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন৷ কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নাকি এত ব্যস্ত, যে সময়ই বের করতে পারেনি তাঁর দপ্তর৷ অ্যামাজন ভারতে আরও ১০০ কোটি মার্কিন ডলার, মানে প্রায় ৭১ হাজার কোটি টাকা নতুন লগ্নি করবে৷ এসেই ঘোষণা করেছিলেন বেজোস৷ তাতে বিচিত্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল৷ প্রকাশ্যে মন্তব্য করেছেন, লগ্নি করে ভারতকে উদ্ধার করছে না অ্যামাজন৷ ওরা বরং ভারতে ব্যবসা করার নিয়মকানুন মেনে চলতে শিখুক!ভারতীয় ব্যবস্থার ফাঁকফোকর খোঁজা বন্ধ করুক!
অ্যামাজন, বা সামগ্রিকভাবে ই-বাণিজ্য সংস্থাগুলির প্রতি ভারত সরকারের এই বিরাগ এক বাড়তি মাত্রা পেল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের শাখা ‘স্বদেশী জাগরণ মঞ্চ'-র সাম্প্রতিক প্রস্তাবে, যে সরকার তার রাজস্ব ঘাটতি মেটাতে এই সব বহুজাতিক বাণিজ্য সংস্থার কেনাকাটার ওপর অতিরিক্ত ‘স্বদেশী কর'বসাক৷
এই প্রস্তাব কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রককে দিয়েছে জাগরণ মঞ্চ এবং সেটা নিয়ে নাকি যথেষ্ট গুরুত্ব নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছে মন্ত্রক৷ কারণ বাজার মন্দা হওয়ায় খুচরো ব্যবসা ভারতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, শুল্ক বাবদ আয় কমেছে সরকারের৷ জিএসটি আদায়ও লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম হয়েছে৷ ফলে চলতি আর্থিক বছরে প্রায় ১.৫ লক্ষ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি থাকার সম্ভাবনা৷ এই পরিস্থিতিতে ভারতে অ্যামাজন, ফ্লিপকার্টের ফলাও ব্যবসা স্থানীয় ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদেরও ক্ষোভের কারণ হয়েছে৷ কাজেও তাদের বিকিকিনির ওপর কর বসলে আপত্তি করার কেউ থাকবে না বলেই সরকারের ধারণা৷
কিন্তু ই-বাণিজ্যের ওপর সরকার এত ক্ষুব্ধ কেন? ইন্টারনেটে লেনদেন হলেও সরকার তো নিয়মিত জিএসটি পেয়ে যাচ্ছে প্রতিটি লেনদেনের থেকে৷বিষয়টা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করলেন বাজার বিশেষজ্ঞ ব্রীজেশ দে৷ তাঁর বক্তব্য, যে দেশ একটা পণ্য তৈরি করছে এবং যে দেশের লোক শেষ পর্যন্ত জিনিসটা কিনছে, লাভের টাকার ওপর কোনও দেশেই কর না দেওয়ার একটা বিজনেস মডেল আধুনিক বাণিজ্যে চালু হয়েছে৷ সেখানে তৃতীয় একটি দেশকে মাধ্যম হিসেবে বেছে নেওয়া হচ্ছে, যেখানে কর ছাড় পাওয়া যায়৷ অনলাইন বাণিজ্য এরই একটা আধুনিক চেহারা, যেখানে ফ্লিপকার্ট বা অ্যামাজন একটা বাণিজ্যিক মঞ্চ, বা একটা বাজার হিসেবে কাজ করছে৷ সেখানে প্রতিটি কেনাবেচার ওপর তারা একটা কমিশন নিচ্ছে, কিন্তু যে সংস্থার পণ্য বিক্রি হচ্ছে, তারা সরকারকে জিএসটি ছাড়া কিছুই দিচ্ছে না৷ তাদের লাভের টাকার ওপর সরকারের কর বসানোর কোনও হাত নেই৷ ঠিক সেখানেই এদের ওপর ক্ষিপ্ত সরকার৷