1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

৫৫ শতাংশ ভারতীয় অনলাইনে মত প্রকাশে ‘ভয় পান’

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৩০ মার্চ ২০১৯

ইন্টারনেট ব্যবহারকারী অর্ধেকের বেশি ভারতীয় অনলাইনে তাঁদের রাজনৈতিক মতামত প্রকাশ করতে ভয় পান৷ পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রে আসন্ন নির্বাচনের আগে এক সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে৷ উঠে এসেছে অনলাইন খবরের প্রতি অনাস্থার কথাও৷

https://p.dw.com/p/3FtnC
ছবি: DW/P. Samanta

ভারতের লোকসভা নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা হয়ে গেছে৷ ১১ এপ্রিল প্রথম দফার ভোট গ্রহণ৷ এবার ৯০ কোটির বেশি ভারতবাসী এই নির্বাচনে অংশ নেবেন৷ এই সংখ্যাটা অনেক দেশ তো বটেই, মহাদেশের জনসংখ্যার থেকেও বেশি৷ গণতন্ত্রে ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের অধিকারকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়৷ কিন্তু, পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রে এই স্বাধীনতা অবাধ নয় বলেই দাবি করছে এক সমীক্ষা৷

রয়টার্স ইনস্টিটিউট ফর স্টাডি অফ জার্নালিজম সম্প্রতি এই সমীক্ষা চালিয়েছে৷ তাতে দেখা যাচ্ছে, ইন্টারনেট ব্যবহারকারী অর্ধেক ভারতবাসী অনলাইনে রাজনৈতিক মন্তব্য করতে ভয় পান৷ ৪৯ শতাংশ মানুষ মনে করেন, তাঁরা রাজনৈতিক মতামত প্রকাশ্যে আনলে তাঁদের প্রতি বন্ধু বা পরিজনদের দৃষ্টিভঙ্গি পালটে যেতে পারে৷ এর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ৫৫ শতাংশ ভারতীয়র বক্তব্য, অনলাইনে রাজনৈতিক মন্তব্য করলে তাঁরা শাসকের কোপে পড়তে পারেন৷ 

‘সোশ্যাল মিডিয়ায় মত প্রকাশের ক্ষেত্রে এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করে’

বাধা আছে

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী আতঙ্কের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়ায় মত প্রকাশের ক্ষেত্রে এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করে৷ এটা অস্বীকার করা যায় না৷ সেই অর্থে গণতন্ত্র অবাধ নয়৷ সংবিধানের স্বীকৃতি থাকলেও স্বাধীনভাবে মত জানানোর ক্ষেত্রে বাধা রয়েছে৷ এটা উদার গণতন্ত্রের পক্ষে শুভ নয়, বিপজ্জনক৷''

তবে তাঁর বক্তব্য, ‘‘এটা শুধু ভারত নয়, অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও সত্যি৷ এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও বিরোধিতার পরিসর ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে৷ এই অবস্থার পরিবর্তনে নাগরিক সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে৷ সংবাদমাধ্যমকেও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে৷''

‘হিন্দুত্ববাদীরা অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে'

অনলাইনে ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র৷ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই ধরনের ঘটনার নমুনা রয়েছে৷ পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পর ইন্টারনেটে মন্তব্য করায় একাধিক জন গ্রেপ্তার হয়েছেন৷ অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, নিজের দেশের বিরোধিতায় কি স্বাধীনতার ব্যবহার করা উচিত? যদিও দেখা যাচ্ছে, দেশের বিরুদ্ধে নয়, রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে মন্তব্য করলেও বিপাকে পড়তে হচ্ছে৷ পশ্চিমবঙ্গে মত প্রকাশের অধিকার সংকুচিত হয়েছে, এই অভিযোগ তুলে অধ্যাপকের দাবি, সারা দেশে এই ছবিটা আলাদা কিছু নয়৷

অম্বিকেশ মহাপাত্র ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘হিন্দুত্ববাদীরা দেশের সর্বত্র স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে৷ সরকারের সমালোচনা করলেই দেশদ্রোহী তকমা দিচ্ছে৷ ফলে দারিদ্র্য, কর্মহীনতার মতো প্রকৃত ইস্যুগুলি সামনে আসছে না৷ এমনকি সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতিরা অভিযোগ তুলছেন, সরকার তাঁদের কাজে হস্তক্ষেপ করছে৷ সব ধরনের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান শাসকের কোপে পড়ছে৷ সেখানে সাধারণ মানুষ স্বাধীনভাবে নিজের বক্তব্য তুলে ধরবে কী করে?''

অধ্যাপকের বক্তব্য, ‘‘রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার চায় না কোনো বিরোধী স্বর থাকুক৷ তৃণমূল কংগ্রেস আদতে বিজেপিরই মিত্রশক্তি৷ তারা একত্রে সরকারও গড়েছিল৷ তবে দুই দলের কিছুটা ভিন্নতা আছে৷''

সার্বিকভাবে অনলাইন সংবাদ উপস্থাপনা নিয়ে নৈরাশ্যের ছবি উঠে এসেছে এই সমীক্ষায়৷ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সিংহভাগ এখন মোবাইলে খবর পড়তে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন৷ পথচলতি মানুষ বিভিন্ন নিউজ পোর্টালের মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছেন টাটকা খবরে৷ ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম-এর মতো সোশ্যাল মিডিয়াও খবরের উৎস৷ এসব মাধ্যমের খবর কতটা বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠছে? 

‘রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার চায় না কোনো বিরোধী স্বর থাকুক’

অনলাইন খবরে অবিশ্বাস

রয়টার্স ইনস্টিটিউট ফর স্টাডি অফ জার্নালিজম-এর সমীক্ষা অনুযায়ী, অর্ধেক ভারতীয় আদৌ অনলাইনের খবরে বিশ্বাস করেন না৷ অনাস্থার তিনটি কারণ উঠে এসেছে, প্রথমত, নিম্নমানের সাংবাদিকতা, দ্বিতীয়ত, ভুয়া খবর এবং তৃতীয়ত, পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ৷ অনলাইনে খবর দেখলেও ৫৭ শতাংশ মানুষ ধন্দে থাকেন তার সত্যতা নিয়ে৷ খবর সত্যি হলেও তা কতটা একপেশে, সেই সংশয়ও থাকে৷ এর ফলে সোশ্যাল মিডিয়া তথা অনলাইনে পাওয়া খবর এখনো ততটা নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠতে পারেনি৷

আনন্দবাজার পত্রিকার প্রাক্তন সাংবাদিক, একটি নিউজ পোর্টালের পরিচালক শম্ভু সেন অবশ্য অনলাইন খবর মানেই ভুয়া, এটা বিশ্বাস করতে রাজি নন৷ তিনি বলেন, ‘‘অধিকাংশ ক্ষেত্রেই খবর সত্য থাকে৷ কিছু প্রতিষ্ঠান হয়তো এটা করে না৷ সাধারণভাবে খবরের হেডিংয়ে একটা চমক তৈরি করা হয় অনলাইন খবরের ক্ষেত্রে৷ যেটা প্রিন্ট মিডিয়ায় হয় না৷ তাই এটাকে মিথ্যে বলা যায় না৷''