৫ কোটি ১০ লাখ শরণার্থীর কথা
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক মানবাধিকার সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, বিশ্বে এ মুহূর্তে অন্তত ৫ কোটি ১০ লক্ষ মানুষ কোনো-না-কোনো কারণে দেশছাড়া, অর্থাৎ শরণার্থী৷ তাঁদের নিয়েই আজকের ছবিঘর৷
শরণার্থী কারা?
ইউএনএইচসিআর-এর সংজ্ঞা অনুযায়ী, কেউ যদি জাতি, ধর্ম, গোষ্ঠী বা কোনো শ্রেণিগত বৈষম্য কিংবা কোনো মতপার্থক্যের কারণে ভীত হয়ে নিজের ঘর বা দেশ ছাড়তে বাধ্য হন, তাহলে তিনি শরণার্থী৷ প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট দুর্যোগের কারণে দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়া মানুষদেরও শরণার্থী হিসেবে গণ্য করে ইউএনএইচসিআর৷ ছবির এই শিশু তুরস্কে আশ্রয় নেয়া সিরীয় শরণার্থী৷
সহিংসতার কারণে গৃহহারা
ইউএনএইচসিআর-এর প্রতিবেদন বলছে, এ মুহূর্তে বিশ্বের কমপক্ষে ৫ কোটি ১০ লাখ মানুষ সহিংসতার কারণে শরণার্থী৷ সহিংসতা বা বিরোধের কারণে ঘর ছেড়ে নিজের দেশেরই অন্য কোথাও আশ্রয় নেয়া মানুষদেরও রাখা হয়েছে এই হিসেবে৷ ওপরের ছবির মানুষগুলো আফ্রিকার দেশ ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোর, সেনাবাহিনীর এবং বিদ্রোহীদের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর রুৎশুরু শহরের আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বাধ্য হন তাঁরা
রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী
অনেকেই অন্য দেশে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন৷ সব শর্ত পূরণ না হওয়ায় তাদের বেশির ভাগই হয়ে যান শরণার্থী৷
সংখ্যাধিক্যই বড় সমস্যা
শরণার্থী সমস্যা বিশ্বের অনেক দেশের জন্যই বড় সংকট হয়ে উঠছে৷ শরণার্থীদের সংখ্যা এত দ্রুত বাড়ছে যে সংকটের আশু নিরসন দুরূহ হয়ে পড়ছে৷ পরিসংখ্যান বলছে, এ মুহূর্তে মোট শরণার্থীর সংখ্যা স্পেন, ক্যানাডা বা দক্ষিণ কোরিয়ার মোট জনসংখ্যার চেয়েও বেশি!
আফগানিস্তান, সিরিয়া এবং সোমালিয়া
২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত বিশ্বের মোট শরণার্থীর শতকরা পঞ্চাশ ভাগেরও বেশি ছিল আফগান, সিরীয় এবং সোমালীয়৷ অর্থাৎ এই তিন দেশের মোট শরণার্থী বিশ্বের মোট শরণার্থীর অর্ধেকেরও বেশি৷ ছবিতে পাকিস্তানে আশ্রয় নেয়া এক আফগান পরিবার৷
স্বদেশেই শরণার্থী
আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, অন্য দেশে আশ্রয় নেয়া মানুষের চেয়ে নিজের দেশেই শরণার্থী হয়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি৷ ২০১৩ সালে অন্য দেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন ১ কোটি ৬৭ লাখ মানুষ, অন্যদিকে নিজের দেশে গৃহহারার সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৩৩ লাখ৷
আশ্রয় শিবিরের বাইরে...
সব শরণার্থী কিন্তু আশ্রয় শিবিরে থাকেন না৷ বরং বিশ্বের মোট শরণার্থীর তিন ভাগের দুইভাগই বাস করছেন আশ্রয় শিবিরের বাইরে৷ শহর বা গ্রামের কোনো ফাঁকা জায়গায়, কিংবা কোনো অ্যাপার্টমেন্টে গাদাগাদি করে থাকতে দেখা যায় তাঁদের৷
শিশুদের দুর্বিষহ জীবন
মোট শরণার্থীর শতকরা ৪৬ ভাগই শিশু৷ ঘরছাড়া এই শিশুদের জীবনে লেখাপড়া নেই, কোনো সাধ-আহ্লাদও নেই৷ ছবির এই মা, শিশু সিরিয়ার৷ গ্রিসের লেসবসে আশ্রয় নিয়েছে তারা৷
নির্যাতনের শিকার
৫ কোটি ১০ লাখ শরণার্থীর অন্তত ৩৫ ভাগই কোনো-না-কোনোভাবে নির্যাতনের শিকার৷ শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনের শিকারদের অনেকেই স্বাভাবিক হতে পারছেন না৷ যু্দ্ধ আর নির্যাতনের আতঙ্ক অনুক্ষণ তাড়া করে তাঁদের!
শেষ আশ্রয় যুক্তরাষ্ট্র!
সহিংসতা বা বিরোধের কারণে একবার দেশ ছাড়লে খুব কম মানুষই আবার নিজের দেশে ফিরতে চান৷ অথচ যে দেশে থাকতে চান বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সে দেশ তাঁদের দায়িত্ব নিতে চায় না৷ এমন পরিস্থিতিতে আশ্রয়প্রার্থীদের নতুন কোনো দেশে পাঠানোর চেষ্টা করে ইউএনএইচসিআর৷ তবে খুব কম শরণার্থীই সেই সুযোগ পায়৷ তবে এমন শরণার্থীদের সবচেয়ে বেশি আশ্রয় দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷ সংখ্যাটা অবশ্য নগন্য, বিশ্বের মোট শরণার্থীর মাত্র ১ শতাংশ!