২০০৮-এর বেটোফেন উত্সবে যা থাকছে
৮ সেপ্টেম্বর ২০০৮শহরের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য সংগীতানুষ্ঠানের সুরলহরী বেজে ওঠে৷ সংগীতপ্রেমীরা কখন কোন অনুষ্ঠানে যাবেন সেটা ঠিক করতেই যেন একটা সমস্যায় পড়েন৷
এবছরের আন্তর্জাতিক বেটোফেন উত্সবের মটোঃ শক্তি সংগীত৷ সংগীত যেমন একদিকে আশা আকাংখা জাগিয়ে তুলতে পারে তেমনি একনায়কতান্ত্রিক শক্তির প্রয়োজনেও ব্যবহৃত হতে পারে৷ বেটোফেনের সংগীতকেও নিজেদের প্রয়োজনে কাজে লাগিয়েছে একনায়ক শাসকেরা৷ তাই এবছরের বেটোফেন সংগীত উত্সবে বিশেষ করে বেটোফেনের তেজোদীপ্ত, উচ্চকিত সুর ঝংকারে বিশিষ্টতার দাবিদার নবম সিম্ফনিকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে৷ উত্সবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেটোফেনের নবম সিম্ফনি বাজিয়ে শোনান ব্রেমেনের কামার অর্কেস্ট্রা (চেম্বার অর্কেস্ট্রা)৷
এর সপ্তাহ দুয়েক পরেই আবারও নবম সিম্ফনিসহ বেটোফেনের সবকটি সিম্ফনি পরিবেশন করবেন বিশ্বখ্যাত জার্মান সংগীত নির্দেশক কুর্ট মাসুরের পরিচালনায় ফ্রান্সের জাতীয় অর্কেস্ট্রা৷ এবছর বনের বেটোফেন উত্সবের প্রধান আকর্ষণ কুর্ট মাসুরের নির্দেশনায় অর্কেস্ট্রার সুর ঝংকার৷ এছাড়া আরো কয়েকটি উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠানও রয়েছে এই উত্সবে৷ গর্বভরে বলেন উত্সবের পরিচালক ইলোনা শ্মিল৷
'আমি খুবই আনন্দিত যে লোরিন মাজেলের পরিচালনায় নিউ ইয়র্ক ফিলহারমোনিকের সর্ব শেষ কনসার্টটি বনেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে৷ এছাড়া খুশীর বিষয় হল লন্ডনের সিম্ফনি অর্কেস্ট্রাও আমাদের অতিথি হবেন'৷
বন উত্সবের ডাকে সাড়া দিয়ে খ্যাতনামা বেশ কিছু সংগীতকার অংশ গ্রহণ করছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে৷ যেমন সংগীত পরিচালক রিকার্ডো চ্যাইলি, পিয়ানোবাদক লিলিয়া সিলবারস্টাইন এবং আলফ্রেডো পার্ল, ব্যতিক্রমধর্মী সেলোবাদক সল গাবেতা প্রমুখ৷ তবে নাত্সী শাসনামলে জার্মানির রাজনৈতিক অঙ্গনের কালো অধ্যায় নিয়ে ব্রিটিশ তরুণ বেহালাবাদক ডানিয়েল হপের একটি কনসার্ট দর্শকদের মনে শিহরন জাগাবে৷
হিটলারের দখলদারির সময় চেক শহর থেরেসিয়েনশ্টাটের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে বন্দী ইহুদী সংগীতকার বিশেষ করে গিডেওন ক্লাইন এবং ভিকটর উলমানের স্মরণে এই কনসার্টটি বনের প্রাক্তন সংসদ ভবনে পরিবেশিত হওয়ার কথা৷ অসাধারণ প্রতিভাবান এই সংগীতকারদ্বয়ের রচনা নতুন করে আবিষ্কার করেছেন ডানিয়েল হপ, সাজিয়েছেন নিজস্ব আঙ্গিকে ৷ দেখিয়েছেন সংগীত কি করে আঁধারের মাঝেও আলোর ছটা ছড়িয়ে দিতে পারে৷ চরম দুঃসময়েও মানুষের আশা আকাংখা জাগিয়ে তুলতে পারে৷
বেটোফেন সংগীত উত্সবে ৬০টিরও বেশি কনসার্টে বেটোফেন ও তাঁর সমসাময়িককালের প্রখ্যাত সংগীতকারদের সৃষ্টি ছাড়াও থাকছে নানা যুগের নানা ধরনের সংগীতানুষ্ঠান৷ বারোক সংগীত থেকে শুরু করে জ্যাজ এবং অপেক্ষাকৃত চটুল শ্লাগার পর্যন্ত৷ এসব ছাড়াও থাকছে বিভিন্ন মেজাজের বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান৷ আছে প্রবন্ধ পাঠ, আলোচনা অনুষ্ঠান, চিত্রপ্রদর্শনী ইত্যাদি৷ বেটোফেনের জীবন ও তাঁর সংগীত নিয়ে নির্মিত ছায়াছবিও দেখানো হচ্ছে এই উত্সবে৷ এই প্রসংগে বেটোফেন সংগীত উত্সবের পরিচালক ইলোনা শ্মিল বলেনঃ 'ডয়েচে ভেলে ও অন্যান্য কয়েকটি প্রচার মাধ্যম এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগে মিলে আমরা বেটোফেনের ওপর তরুণ পরিচালকদের নির্মিত কিছু ছবি প্রদর্শন করার উদ্যোগ নিয়েছি'৷
বেটোফেন সংগীত উত্সবে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রাচুর্যে দর্শক শ্রোতারা যাতে দিশাহারা হয়ে না পড়েন এটাই এখন কাম্য৷