২০ বছরের দীর্ঘতম যুদ্ধ শেষ
৯/১১-র ঠিক পরেই আফগানিস্তানে সৈন্য পাঠিয়েছিল অ্যামেরিকা। ২০ বছর পর কাবুল ছাড়ল মার্কিন সেনা। শেষ হলো ২০ বছরের যুদ্ধ।
ঘটনাবহুল ২০ বছর
গত ২০ বছরে নানা ঘটনা ঘটেছে আফগানিস্তান এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে। তালেবান, আইএস-এর সঙ্গে লাগাতার যুদ্ধ চলেছে মার্কিন এবং ন্যাটো বাহিনীর। আফগান সেনাও সেই বাহিনীতে যোগ দিয়েছে। শেষপর্যন্ত আফগান বাহিনীর হাত থেকে ক্ষমতা দখল করে তালেবান ফৌজ।
৯/১১ এবং যুদ্ধ
২০০১ সালে অ্যামেরিকার টুইন টাওয়ারে বিধ্বংসী আক্রমণ চালায় আল কায়দা। গোটা বিশ্ব হতবাক হয়ে যায় বিমান দিয়ে টুইন টাওয়ার গুঁড়িয়ে দেওয়ার সেই দৃশ্য দেখে।
জর্জ বুশের যুদ্ধ ঘোষণা
ওই ঘটনার পরেই যুদ্ধ ঘোষণা করেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ জুনিয়র। তিনি বলেন, বিশ্ব হয় তাদের দিকে, অথবা সন্ত্রাসবাদের দিকে। ৮ অক্টোবর আফগানিস্তানে প্রথম হামলা চালায় মার্কিন সেনা।
প্রথম তালেবান শাসন
আফগানিস্তানে তখন তালেবানের শাসন। ১৯৯৬ সালে তালেবান আফগানিস্তানে প্রথমবার ক্ষমতা দখল করে। মার্কিন প্রশাসন অভিযোগ করে, তালেবান সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিচ্ছে। ওসামা বিন লাদেন আফগানিস্তানে আছে, এবং তালেবান তাকে আশ্রয় দিচ্ছে বলে জানায় বুশ প্রশাসন।
আফগানিস্তানে মার্কিন সেনা
৯/১১-র পরেই আফগানিস্তানে ঢুকে পড়ে মার্কিন সেনা। তালেবান এবং আই এস-এর সঙ্গে মার্কিন এবং ন্যাটো বাহিনীর তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়।
তালেবানের পতন এবং নতুন সরকার
অ্যামেরিকার নেতৃত্বে যৌথ বাহিনীর আক্রমণের সামনে আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের পতন হয়। অ্যামেরিকার তত্ত্বাবধানে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় আফগানিস্তানে।
হামিদ কারজাই প্রধানমন্ত্রী
২০০৪ সালে নির্বাচনের আয়োজন হয়। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন হামিদ কারজাই। পরবর্তী নির্বাচনেও তিনিই নির্বাচিত হন। তৈরি হয় নতুন আফগান সেনাবাহিনী। অ্যামেরিকা সহ পশ্চিমা শক্তির সাহায্যে আফগানিস্তান শাসন করতে শুরু করেন নতুন প্রধানমন্ত্রী। যদিও কোনো কোনো মহলের অভিযোগ, কারজাই কার্যত অ্যামেরিকার পুতুল হিসেবেই কাজ করেছেন।
ওসামা বিন লাদেনের হত্যা
২০১১ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন বাহিনী হত্যা করে ওসামা বিন লাদেনকে। ২ মে অভিযান চালিয়ে লাদেনকে হত্যা করা হয়।
আশরাফ গনি প্রধানমন্ত্রী
২০১৪ সালে আফগানিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন আশরাফ গনি। সমস্ত জনগোষ্ঠীর মানুষকে প্রশাসনে রেখে নতুন আফগানিস্তান তৈরির অঙ্গীকার করেন গনি।
ডনাল্ড ট্রাম্প এবং ঐতিহাসিক চুক্তি
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দোহায় তালেবানের সঙ্গে চুক্তি করে ট্রাম্প প্রশাসন। স্থির হয়, এক বছরের মধ্যে মার্কিন সেনা সরিয়ে নেওয়া হবে আফগানিস্তানের মাটি থেকে।
ন্যাটোর আপত্তি
দ্রুত সেনা সরানোয় আপত্তি জানিয়েছিল ন্যাটো এবং ইউরোপের একাধিক দেশ। কিন্তু সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সেই আপত্তি শুনতে চায়নি। বাইডেন ৩১ অগাস্ট ডেডলাইন স্থির করেন।
আট দিনে দখল
অগাস্টের গোড়ায় মাত্র আটদিনের মধ্যে কার্যত পুরো আফগানিস্তানের দখল নিয়ে নেয় তালেবান যোদ্ধারা। মার্কিন সেনার হাতে থাকে কেবলমাত্র কাবুল বিমানবন্দর।
উদ্ধারকাজ এবং লড়াই
গত দুই সপ্তাহে আফগানিস্তান থেকে ১ লাখ ৭২ হাজার মানুষকে উদ্ধার করেছে অ্যামেরিকা সহ একাধিক দেশের সেনা। বহু আফগানকেও দেশ ছাড়তে সাহায্য করা হয়েছে। ৩০ অগাস্ট মধ্যরাতে শেষ মার্কিন বিমান আফগানিস্তানের জমি ছাড়ে। মাঝের দুই দিন কাবুল বিমানবন্দরে একাধিক হামলা করেছে ইসলামিক স্টেট খোরাসান। ১৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে। মার্কিন সেনাও পাল্টা ড্রোন আক্রমণ করেছে।
পালানোর অপেক্ষায় বহু আফগান
অ্যামেরিকা চলে গেছে। কিন্তু এখনো দেশ ছেড়ে পালাতে চাইছেন বহু আফগান। সমস্ত বিদেশিকেও উদ্ধার করা যায়নি।
২০ বছরের যুদ্ধের ফল
২০ বছর ধরে চলা অ্যামেরিকার আফগান যুদ্ধে সব মিলিয়ে প্রাণ গেছে এক লাখ ৭২ জন মানুষ। এর মধ্যে মার্কিন সেনার সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। প্রায় চার হাজার মার্কিন কন্ট্রাক্টরের মৃত্যু হয়েছে। অন্যান্য দেশের সেনা মারা গেছে প্রায় এগারোশ।
আফগানের মৃত্যু
যুদ্ধে বহু আফগান সেনার মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৬৬ হাজার। ৪৭ হাজার সাধারণ আফগানের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে নারী এবং শিশুও আছে। তালেবান এবং আইএস যোদ্ধার মৃত্যু হয়েছে ৫১ হাজারের কিছু বেশি।