১৭০০ কিলোমিটার দূর থেকে টিকা এলো কাছে
জানির খুব ভয় ছিল৷ তার কিছু হয়ে গেলে সন্তানদের কী হবে! ১৭০০ কিলোমিটার দূর থেকে টিকা এসে নিশ্চিন্ত করেছে তাকে৷ রিনা জানির পুরো গল্প থাকছে ছবিঘরে...
জীবন বাঁচান জানি
ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের এক পাহাড়ি এলাকার ছোট্ট গ্রাম পেন্ডাজামের স্বাস্থ্যকর্মী রিনা জানি৷ বিশেষত প্রসূতি মায়েদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজ করলেও, মাত্র ৫০০ জনের গ্রামের সবাইকে সাধারণ জ্বর, ম্যালেরিয়া এবং ডায়রিয়ার প্রাথমিক চিকিৎসাও দেন তিনি৷
সেবার প্রতিদান
সম্প্রতি কোভিড-১৯-এর টিকা দিতে শুরু করেছে ১৪০ কোটি মানুষের বিশাল দেশ ভারত৷ প্রথম পর্বে দেয়া হচ্ছে করোনাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা স্বাস্থ্যখাতের কর্মীদের৷ সেই সুবাদের উড়িষ্যার কোরাপুট জেলার মাথালপুট কমিউনিটি হেল্থ সেন্টারে ডাক পড়ে তার৷ প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি সবার আগে টিকা দেয়ার জন্য যে একশ জনের তালিকা করেছে, রিনা জানি-ও যে আছেন সেখানে!
সুখবরেও দুশ্চিন্তা
গ্রামের সবার মতো রিনা জানিও বহুদিন ভেবেছেন একদিন টিকা আসবে, এলেই নিশ্চিত করবেন করোনার সংক্রমণমুক্ত থাকা৷ কিন্তু মাথালপুট কমিউনিটি হেল্থ সেন্টারে ডাক পড়তেই শুরু হয়ে গেল দুশ্চিন্তা৷ ৩৪ বছর বয়সি স্বাস্থ্যকর্মী জানালেন, টিকার মারাত্মক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে- এমন গুজব শুনে ভয় হয়েছিল তার, ‘‘তখন মনে হয়েছিল আমার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে সন্তানদের কী হবে!’’
পাহাড় আর মেঠোপথ পেরিয়ে...
কিন্তু স্বাস্থ্যকর্মীর ভয় পেলে চলে না৷ তাই সেদিন খুব ভোরে তিন সন্তানকে ঘরে রেখে রিনা জানি বেরিয়ে পড়েছিলেন৷ পেন্ডাজামের এক প্রতিবেশী পাহাড়ের ওপারের রাস্তায় অপেক্ষা করছিলেন মোটরসাইকেল নিয়ে৷ সেই মোটরসাইকেলের পেছনে বসেই শুরু হলো ৪০ কিলোমিটার দূরের পথে যাত্রা৷ সবুজ ধানক্ষেতের মাঝ দিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ার সময়ও টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে চিন্তাগুলো ঘুরছিল রিনা জানি-র মাথায়৷
ভ্যাকসিনের আগমন
অবশ্য তাদের জন্য ভ্যাকসিনকে কত পথ পাড়ি দিয়ে আসতে হয় তা জানলে রিনা জানিসহ কোরপুট জেলার সবার মনই হয়ত ভালো হয়ে যেতো৷ প্রথমে বিমানে, তারপর ট্রাকে এবং সবশেষে ভ্যানে চড়ে ১৭০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে তবেই উড়িষ্যার কোরাপুট জেলার মাথালপুট কমিউনিটি হেল্থ সেন্টারে পৌঁছাতে পারে ভ্যাকসিন৷
চিন্তা বিনা রিনা
রিনা জানির মনে এখন অবশ্য কোনো দুশ্চিন্তা নেই৷ টিকা দেয়া হয়ে গেছে আর সেই সঙ্গে জানা হয়ে গেছে লোকে যেসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা বলেছিল, সব ভুল৷
আসল ধাক্কা বাকি
আপাতত তিন ধাপে ভ্যাকসিন দেয়ার পরিকল্পনা করেছে ভারত৷ কোরাপুটের ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর মধুসুদন মিশ্র মনে করেন প্রথম এবং দ্বিতীয় ধাপ মোটামুটি নির্বিঘ্নেই পার করা গেলেও তৃতীয় ধাপে সমস্যা হতে পারে, কারণ, ‘‘তখন টিকা দেয়া হবে আম জনতাকে৷’’