১২ শিক্ষার্থী কোথায়?
৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮রবিবার ঢাকার সেগুনবাগিচায় ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের কার্যালয়ে ১২ শিক্ষার্থীর স্বজনরা সাংবাদিক সম্মেলন করেন৷ সেখানে স্বজনদের দ্রুত মুক্তি দাবি করেছেন তারা৷ অপরাধ করলে কোর্টে পাঠানোর কথাও বলেছেন৷
নিখোঁজ ১২ শিক্ষার্থীর একজন মুজাহিদুল ইসলাম৷ তিনি বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র৷ তাঁর বাবা মাহবুব আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘৫ সেপ্টেম্বর ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তেজগাঁও এলাকা থেকে ৫২ জন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়৷ এদের মধ্যে ৪০ জনকে ডিবি অফিস থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে৷ তাই আমাদের মনে হয় বাকি ১২ জনও ডিবি অফিসেই আছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘আমি নিজে ডিবি অফিসে গিয়ে একজন কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করেছি৷ ডিবি অফিসে একটি দরজার বাইরে আমি আমার ছেলের জুতো দেখেছি৷ আমার বিশ্বাস ছেলে ওখানেই আছে৷ কিন্তু কোন কর্মকর্তাই এ ব্যাপারে কোন তথ্য দিচ্ছেন না৷''
এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেবেন জহিরুল ইসলাম হাসিব৷ তাঁকেও আটক করে নিয়ে যায় ডিবি পরিচয়ধারীরা৷ তাঁর বাবা এনামুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কোটা আন্দোলন যখন চলে, তখন আমার ছেলে বাড়িতে ছিল৷ ও কোন রাজনীতি করে না৷ কেন তাঁকে ধরা হয়েছে আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না৷ আমি চাই ওকে দ্রুত আদালতে পাঠানো হোক৷''
ঢাকা পলিটেকনিকের ৮ম সেমিস্টারের ছাত্র ইফতেখার আলম৷ তাঁর ভাই রাশেদ আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার ভাইকে ছাত্রাবাস থেকে তুলে নেয়া হয়েছে৷ কী অপরাধে তাঁকে তুলে নেয়া হয়েছে আমরা কিছুই জানতে পারছি না৷ যাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে তাদের কাছ থেকে শুনেছি, ওদের উপর নাকি নির্যাতন করা হচ্ছে৷''
আরো যারা নিখোঁজ রয়েছেন তাদের মধ্যে আছেন আল আমিন, জাহাঙ্গীর আলম, সাইফুল্লাহ বিন মনসুর, গাজী এম বোরহান উদ্দিন, তারেক আজিজ, মাহফুজ, রায়হানুল আবেদীন, তারেক আজিজ ও মেহেদী হাসান রাজীব৷ এরা সবাই শিক্ষার্থী৷ এসব শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, গত ৭ সেপ্টেম্বর এই শিক্ষার্থীদের আদালতে তোলার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তাদের বেআইনিভাবে আটকে রেখেছে পুলিশ৷
সাইফুল্লাহ বিন মনসুর নামের এক শিক্ষার্থীর বাবা মনসুর রহমান সাংবাদ সম্মেলনে জানান, গত ৫ সেপ্টেম্বর মহাখালী ও তেজগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর পাশাপাশি এই ১২ জনকেও ধরে নিয়ে যায় পুলিশ৷ এর মধ্যে সিফাত নামের এক শিক্ষার্থীসহ আরও কয়েকজনকে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) কার্যালয় থেকে ছেড়ে দেওয়া হলেও মুক্তি মেলেনি তাঁর ছেলেসহ ১২ জনের৷
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই ১২ জনের বিষয়ে আমি বলতে পারব না৷ তবে ছাত্র আন্দোলনের সময় অনেকে পরিচয় গোপন করে সহিংসতায় অংশ নিয়েছে৷ তাদের ব্যাপারে তদন্ত করে আটক করা হচ্ছে৷ কেউ অপরাধ করলে তাঁর বিরুদ্ধে তো ব্যবস্থা নিতে হবে৷''
এই ১২ শিক্ষার্থী অপরাধী হলে কেন তাদের আদালতে পাঠানো হচ্ছে না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ যাদের গ্রেফতার করে তাদের আইন অনুযায়ী আদালতে হাজির করে৷ আমরা কাউকে গ্রেফতার করলে অবশ্যই কোর্টে হাজির করব৷''
উল্লেখ্য, কাউকে গ্রেফতারের পর ২৪ ঘন্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার আইনি বাধ্যবাধ্যকতা রয়েছে৷ বাংলাদেশে এই সংস্কৃতি কেন চালু হচ্ছে না জানতে চাইলে মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আইন তো সবাইকে মানতে হবে৷ পাকিস্তান আমলে যখন বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তখনও কিন্তু তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়েছে৷ এখন যদি এটা না করা হয় তা দেশের আইনের শাসনের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য এমনকি মানবাধিকারের জন্যও বড় হুমকি৷ আসলে আইন সবার মেনে চলা উচিত৷ যারা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করছেন তাদের বিশেষ করে এটা মনে রাখতে হবে৷''