1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হোম অফিসে নজরদারি কতটা ন্যায্য?

২ মার্চ ২০২১

করোনা সংকটের ফলে গোটা বিশ্বে হোম অফিসের চল বেড়ে গেছে৷ কিন্তু অনেক কোম্পানি কর্মীদের উপর আস্থার বদলে তাদের উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে আগ্রহী৷ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও সফ্টওয়্যার সেটা সম্ভব করছে৷

https://p.dw.com/p/3q5Gu
ছবি: DW

অনেকে মনে করতে পারে, যে হোম অফিস মানেই আনন্দ৷ বস আশেপাশে নেই৷ সকালে উঠে অবস্থা বুঝে নিলেই হলো৷ তারপর আরাম করে সংবাদপত্র পড়া যায়৷ শোয়া অবস্থায়ও তো ভালো কাজ করা যায়৷ তবে অনেক বস বিষয়টি মোটেই মজার বলে মনে করেন না৷ মহামারির আগে তাঁরা দফতরেই কর্মীদের কর্মক্ষমতার উপর নজর রাখতে পারতেন৷ কিন্তু বর্তমানে গোটা বিশ্বে প্রায় ৩০ শতাংশ কর্মীই হোম অফিস করছেন৷

কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার যুগে কর্মীদের কাজের মানের তুলনা কি কঠিন হতে পারে? বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে বোঝা সম্ভব, কে সেরা কাজ করছে, কে কতক্ষণ টেলিফোনে কথা বলছে৷ আর টেলিফোনে কীই বা বলছে৷ টেলিফোন কলের পাশাপাশি বোতামের সঞ্চালন ও ক্লিকও পরিমাপ করা যায়৷ কিছু কোম্পানি এমনকি হোম অফিসের সময় কম্পিউটার মনিটরের ছবি ও ভিডিও তুলতে পারে৷

তথ্য সংরক্ষণ সংক্রান্ত কড়া আইনের কারণে জার্মানিতে এমন সফ্টওয়্যার নিষিদ্ধ হলেও অন্য অনেক দেশে সেই সফ্টওয়্যার কাজে লাগানো হচ্ছে৷ এমন সফ্টওয়্যার সম্পর্কে শ্রমিক সংগঠনগুলির আন্তর্জাতিক সংঘের মনোভাব কী? ইউনি গ্লোবাল ইউনিয়নের মহাসচিব ক্রিস্টি হফমান বলেন, ‘‘কর্মীরা উৎপাদনশীলতা বা কমপক্ষে দৈনিক কাজের রিপোর্টের মতো কিছু নজরদারিতে অভ্যস্ত৷ কিন্তু কিছু নজরদারি ব্যবস্থা এতটাই নাক গলায় এবং ব্যক্তিস্বাধীনতা সম্পর্কে এতটাই অসম্মানজনক, যে মানুষ ক্ষুব্ধ হয়৷ কোম্পানি কীভাবে বাস্তবে এমন প্রণালী প্রয়োগ করছে, কর্মীদের বক্তব্য বিবেচনা করা হচ্ছে কিনা, তার উপর সবকিছু নির্ভর করে৷’’

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে হোম অফিস কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ

শ্রমিক সংগঠনের মতে, হোম অফিসের সময়ে কোম্পানি ঠিক কোন তথ্য সংগ্রহ করছে, আগে থেকে জেনেশুনে ও তা মেনে নিলে সমস্যা নেই৷

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রান্সপারেন্ট বিজনেস নামের কোম্পানির মতে, এমন তথ্য সম্পর্কে আরও সতর্ক থাকা উচিত৷ এই কোম্পানির কর্মীরা দিনের কাজের খতিয়ান নিজেরাই সফটওয়্যারে পুরে দেন৷ সেগুলির ভিত্তিতে ফোল্ডার ও প্রকল্প সম্পর্কে সার্বিক তথ্য সৃষ্টি হয়৷ এভাবে বস কাজের ব্যয় এবং কাজ শেষ করার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে ধারণা পান৷ এই সফটওয়্যারের উদ্ভাবক সিলভিনা মস্কিনি প্রথমে শুধু নিজের কোম্পানির জন্য এমনটা করেছিলেন৷ বর্তমানে তিনি সারা বিশ্বে সেই সফ্টওয়্যার বিক্রি করছেন৷ সিলভিনা বলেন, ‘‘কোনো রিমোট টিম চালাতে হলে তিনটি চ্যালেঞ্জ থাকে৷ অর্থাৎ আস্থা, এনগেজমেন্ট বা কর্মব্যস্ততা এবং জবাবদিহিতা৷ তাই আমরা আরও দক্ষতার সঙ্গে নিজেদের টিম সামলাতে একটি টুল তৈরি করলাম৷ তখন সিদ্ধান্ত নিলাম, যে অফিস রাখার কোনো অর্থই নেই৷ কারণ টিম সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকলে অথবা তারা দূরে থাকলে এমন প্রযুক্তি যাকে বলে ‘গেম চেঞ্জার’ হতে পারে৷ এ যেন অন্ধের মতো উড়ে বেড়ানোর বদলে যন্ত্রপাতিসহ বিমান ওড়ানোর মতো৷’’

সফ্টওয়্যার কোম্পানিগুলির সূত্র অনুযায়ী মহামারি শুরু হবার পর থেকে চাহিদা প্রায় পাঁচ গুণ বেড়ে গেছে৷ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে সেই সফ্টওয়্যার চলে৷ একমাত্র এভাবেই যে কোনো প্রকল্পের জন্য গোটা বিশ্বে উপযুক্ত বিশেষজ্ঞ খোঁজা সম্ভব৷ সিলভিনা মস্কিনি বলেন, ‘‘আজকাল প্রায় সবকিছুই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে যুক্ত৷ যেমন আমরা মেশিন লার্নিং ও ডেটা সেট ব্যবহার করে নির্দিষ্ট প্রয়োজন ও যোগ্যতা অনুযায়ী উপযুক্ত কর্মী নিয়োগ করতে পারি৷’’

অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে আবার অফিসে ফিরে গিয়ে কাজ করতে চান৷ আবার অনেকেই হোম অফিস করে সন্তুষ্ট৷ তাদের বসদের জন্য সফটওয়্যারের মাধ্যমে দূর থেকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে৷

ক্রিস্টিয়ান প্রিসেলিউস/এসবি