1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হেলেনা রুবিনস্টাইন: বিয়ের আসর থেকে পালানো এক বিশ্বজয়ী

২৮ ডিসেম্বর ২০২০

বাবা-মায়ের ইচ্ছায় বিয়েটা করলে সাধারণ এক গৃহিনীর মতোই হয়ত শেষ হতো হেলেনা রুবিনস্টাইনের জীবন৷ তাহলে মৃত্যুর ৪৫ বছর পর হয়ত তাকে স্মরণ করতো না সারা বিশ্ব৷

https://p.dw.com/p/3nHVk
USA Kosmetikerin Helena Rubinstein
ছবি: IMAGNO/Sammlung Hubmann/picture alliance

হেলেনা রুবিনস্টাইনের জন্ম ১৮৭২ সালের ২৫ ডিসেম্বর, পোল্যান্ডের ক্রাকো শহরের এক ইহুদি পরিবারে৷ বাবা ছিলেন কেরোসিন বিক্রেতা৷ আট মেয়ের সবচেয়ে বড় মেয়েটির নাম রেখেছিলেন চায়া৷ সেই চায়াই প্রসাধনীরদুনিয়ার সফল ব্যবসায়ী হেলেনা রুবিনস্টাইন৷

চায়া থেকে হেলেনা হওয়ার গল্পটা খুব রোমাঞ্চকর৷

খুব কম বয়সেই চায়ার বিয়ে ঠিক করেছিলেন বাবা-মা৷ কিন্তু চায়ার চোখে তখন অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন৷ বিয়ে করে সব স্বপ্নের অবসান তিনি চান না৷ তাই পালিয়ে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার জন্য জাহাজে উঠলেন ৷ অস্ট্রেলিয়ায় চাচার বাড়ি পৌঁছানোর আাগে ধরা পড়ে গেলে বিয়েটা আর এড়ানো যাবে না৷ সুতরাং সবার চোখকে ফাঁকি দিতে ‘হেলেন অব ট্রয়'-এর কথা মনে করে জাহাজের যাত্রীদের তালিকায় নিজের নাম চায়া না লিখে লিখলেন হেলেনা৷ বয়সটাও কমিয়ে দিলেন চার বছর৷

সেদিন আরেকটা কাজ করেছিলেন ছোটখাট গড়নের সেই পোলিশ তরুণী৷ মা পরিবারের সবার জন্য ঘরে একটা ক্রিম বানাতেন৷ চমৎকার গন্ধের সেই ক্রিমটাও ব্যাগে করে নিয়ে এসেছিলেন৷ সেই ক্রিমের কারণেই হেলেনা রুবিনস্টাইন আজ জগদ্বিখ্যাত৷

সে আমলে মেয়েরা ত্বক পরিস্কার করতেন সাবান দিয়ে৷ কেউ সুগন্ধি ক্রিম ব্যবহার করলে তাকে খারাপ দৃষ্টিতে দেখা হতো, মনে করা হতো ‘চরিত্র খারাপ'৷

অস্ট্রেলিয়ায় পরিচিত সব নারী দেখা হলেই হেলেনার ত্বকের খুব প্রশংসা করতেন৷ হেলেনার মনে হলো, যেহেতু মায়ের তৈরি ক্রিমের কারণে তার ত্বক এত আকর্ষণীয়, তাই ক্রিমটা বিক্রি করা যেতে পারে৷ ব্যস, ওই একটা সিদ্ধান্তেই বদলে যায় জীবন৷

বাজারে ছাড়ার সময় মায়ের নিজস্ব ফর্মুলায় তৈরি ক্রিমটার নাম দিয়েছিলেন, ‘ভালাৎসে', হাঙ্গেরিয়ান ভাষায় যার অর্থ ‘বেহেশতের দান'৷

খুব অল্প বয়সে বাড়ি ছাড়া মেয়েটির জীবনে অনেকটা  ‘বেহেশতের দান' হয়েই আসে সেই ক্রিম৷ ব্যবসা এত জমে ওঠে যে মেলবোর্নে একটা দোকান খুলে চাচার বাড়ি ছেড়ে দেন হেলেনা৷

১৯০৮ সালে পোলিশ বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান সাংবাদিক এডওয়ার্ড টিটাসকে বিয়ে করে লন্ডনে পাড়ি জমান হেলেনা৷ লন্ডনেও খোলায় হয় ‘ভালাৎসে' বিক্রির শাখা৷ তারপর একে একে নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটন, ফ্রান্সের প্যারিস, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক হয়ে অনেক শহরে ছড়িয়ে পড়ে তার ক্রিমের সাম্রাজ্য৷

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাওয়ার পর বড় পরিসরে কারখানা তৈরির দিকেও মন দেন৷ যুক্তরা্ষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানিসহ অনেক দেশে গড়ে তোলেন কারখানা৷

বুদ্ধির জয়

পরে অবশ্য শুধু ক্রিমের মধ্যেই ব্যবসা সীমাবদ্ধ রাখেননি হেলেনা রুবিনস্টাইন৷ অন্যান্য প্রসাধন সামগ্রীও যোগ হয়েছে৷ ব্যবসা ফুলেফেঁপে বড় হয়েছে অনেক৷ ১৯২৮ সালে লেমান ব্রাদার্সের কাছে নিজের কোম্পানি বিক্রি করে দেন৷ তার ঠিক পরপরই শুরু হয় স্টক মার্কেটের দরপতন৷ শেয়ারের দাম কমতে কমতে যখন একেবারে তলানিতে, ঠিক তখন কোম্পানিটা আবার কিনে নেন হেলেনা৷

তারপর আরো ৩৭ বছর বেঁচে ছিলেন হেলেনা৷ ওই ৩৭ বছরে ব্যবসায় শুধু সাফল্যই এসেছে৷

১৯৬৫ সালের পহেলা এপ্রিল নিউইয়র্কে মারা যান হেলেনা রুবিনস্টাইন৷ ৯৪ বছরের জীবনাবসানের সময় বিশ্বের ১৪টি দেশে শতাধিক প্রতিষ্ঠান ছিল তার৷

আনটিয়ে আলরোগেন/ এসিবি