1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হেলাফেলার প্রাকৃতিক সম্পদ

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১৬ নভেম্বর ২০২০

সারা শহর জুড়েই কৃত্রিম সৌন্দর্যায়নে চাপা পড়ছে স্বাভাবিক, প্রাকৃতিক পরিবেশ৷ পাশাপাশি বিধি ভেঙে নির্মাণকাজের কারণে নষ্ট হচ্ছে সবুজ, দূষিত হচ্ছে জল৷

https://p.dw.com/p/3lMNd
কলকাতার রবীন্দ্র সরোবর লেকছবি: Sirsho Bandopadhyay/DW

কলকাতার ইঁট–কাঠ–কংক্রিটের জঙ্গলে সবুজের ভাগ বরাবরই কম৷ তাও যেটুকু এখনও টিকে আছে, তার নাভিশ্বাস ওঠে উন্নয়নের ঠেলায়৷ কৃত্রিম সৌন্দর্যায়নের নামে প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হয়৷ কিন্তু প্রশাসনের কোনও হেলদোল নেই৷ কিছুদিন আগেই দক্ষিণ কলকাতার বিবেকানন্দ পার্কে এরকমই এক ‘উন্নয়ন–যজ্ঞ'শুরু করার প্রস্তুতি চলছিল, যে যজ্ঞে প্রথম বলি হতো পার্কের স্বাভাবিক পরিবেশ৷ প্রকৃতিপ্রেমীদের সমবেত আপত্তিতে সেই কাজ শেষ পর্যন্ত ঠেকানো গেছে৷ কিন্তু স্রোতের মুখে বালির বাঁধ বারে বারে ভেঙে যাওয়ার মতোই, এক জায়গায় প্রকৃতি–নিধন আটকানো হলেও শুরু হয়ে যায় আরেক জায়গায়৷ দক্ষিণ কলকাতারই ঢাকুরিয়া লেক, যার পোশাকি নাম রবীন্দ্র সরোবর, সেখানে সবুজ চাপা দিয়ে কংক্রিটের ভিত এবং লোহার কাঠামো তৈরি নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক৷ জাতীয় হ্রদের তালিকায় জায়গা পাওয়া রবীন্দ্র সরোবরের পাড়ের নির্দিষ্ট জায়গা উন্মুক্ত রাখাই যেখানে বিধি, সেখানে একটি ক্রিকেট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নামে সদ্য শুরু হয়েছে নির্মাণকাজ৷ এবং অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, সবুজ দখল করে স্থায়ী নির্মাণের দিকে এগোনোর এটাই প্রচলিত পথ৷ ক্রিকেট, বা ফুটবলের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করা৷
রবীন্দ্র সরোবরের প্রাকৃতিক পরিবেশের সুরক্ষায় যাঁরা উদ্যোগী, তাঁদের অন্যতম সোমেন্দ্রমোহন ঘোষ৷ তিনি জানাচ্ছেন, কীভাবে সেটা হয়৷ অবৈতনিক, বা ন্যূনতম বেতনে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা বলে এই জমিগুলো ইজারা নেওয়া হয়৷ কিন্তু কার্যত হয়ে যায় উল্টো৷ যেই ইজারা পাওয়া হয়ে যায়, তখন স্বচ্ছল পরিবারের থেকে বিরাট অঙ্কের সদস্য–চাঁদা নিয়ে চালু হয়ে যায় ক্লাব৷ এভাবেই পার্কের মধ্যে এক একটা ক্লাব জাঁকিয়ে বসে৷ সোমেন্দ্রবাবু বলছেন, ‘‘নিয়ম হচ্ছে, ওখানে খোলা জায়গায় তিন–চারজন চেয়ার নিয়ে বসতে পারে৷ কিন্তু জাতীয় গ্রিন ট্রাইবুনাল বলেছিল, কোনও স্থায়ী কাঠামো লেকের পাশে করা যাবে না৷ সেখানে (এরা), লেকের যে সবুজ এলাকা আছে, সেখানে (কংক্রিট)ঢালাই করেছে বসার জন্যে৷ সবুজের ওপর ঢালাই করলে কী হয়৷ মাটির গভীরে বৃষ্টির জল ঢুকতে পারে না, ভূগর্ভস্থ জলের সঞ্চয় পুষ্ট হয় না৷ গাছগুলো জল না পেয়ে পড়ে যায়৷ কিন্তু এরা কংক্রিট ঢালাই করেছে, তার ওপর লোহার কাঠামো বানিয়ে ফেলেছে!’’

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য চলে যাচ্ছে: সোমেন্দ্রমোহন ঘোষ, পরিবেশপ্রেমী

এর পাশাপাশি রবীন্দ্র সরোবরের নিত্যকার সমস্যা, জলাশয় লাগোয়া ক্লাবগুলির রান্নাঘরের বর্জ্য সরাসরি লেকের জলে গিয়ে পড়া৷ জলাশয়ের গঠনের জন্য, হয়তো হাওয়ার গতিপথের কারণেও এই তৈলাক্ত বর্জ্য জলে জমতে থাকে এবং মাছ, কচ্ছপের মতো জলচরদের প্রাণহানির কারণ হয়ে ওঠে৷ অথচ দেশে, বিদেশে যে সব হ্রদ জাতীয় প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবে ঘোষিত হয়, সেখানে এমন দূষণ করা যায় না৷ সোমেন্দ্রমোহন ঘোষ বললেন, ‘‘তিন বছর আগেই জাতীয় হ্রদের মর্যাদা পেয়েছে রবীন্দ্র সরোবর৷ এখন সেটাকে সাধারণ হ্রদের মতো দেখা হচ্ছে৷ অথচ কেন্দ্র সরকার থেকে প্রচুর টাকা আসে৷ ৬০% কেন্দ্রের দেওয়ার কথা, আর ৪০% রাজ্য সরকারের৷ এই টাকাটা বিভিন্নভাবে নয়ছয় হয়ে যাচ্ছে৷ জাতীয় হ্রদ সংরক্ষণের বিধি মেনে যা যা করা দরকার, হচ্ছে না৷ বরং হচ্ছে কৃত্রিম সৌন্দর্যায়ন৷ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য চলে যাচ্ছে৷’’

কথাপ্রসঙ্গে আরও এক বড় সমস্যার কথা বললেন সোমেন্দ্রমোহন ঘোষ, যা রবীন্দ্র সরোবর তো বটেই, এই শহরের যে কোনও সবুজ এলাকা, প্রাকৃতিক জলাশয়ের সমস্যা৷ সৌন্দর্যায়নের নামে এমন কাজ করা, যাতে পরিবেশের ক্ষতি হয় ব্যাপক হারে৷ যেমন জলাশয়ের পাড় বাঁধিয়ে দেওয়া, যা ব্যাপক ক্ষতি করে জলাশয়ের বাস্তুতন্ত্রের৷ অথবা জোরাল আলো লাগিয়ে দেওয়া, যা পাখ–পাখালির স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বাধা দেয়৷ পরিবেশপ্রেমী মানুষজন আপত্তি তুললে হয়ত এসব সমস্যার সাময়িক সুরাহা হয়, কিন্তু সরকার বা সমাজের সচেতনতা বৃদ্ধি হয় না৷ ফলে কিছুদিন পরেই আবার নতুন চেহারায় মাথা চাড়া দেয় পুরনো উপদ্রব৷