1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘হৃদয়ের কথা টের পেতেন হুমায়ূন’

১৯ জুলাই ২০১৯

‘আজন্ম সলজ্জ সাধ, একদিন আকাশে কিছু ফানুস উড়াই'-মধ্যবিত্তের অনুভূতি নাড়িয়ে পাঠকের মাঝে আসেন গল্পের রাজপুত্র হুমায়ূন আহমেদ৷ ‘নন্দিত নরকে' দিয়ে চিনিয়েছিলেন নিজেকে৷ নন্দিত এই কথা সাহিত্যিকের মৃত্যুবার্ষিকী আজ৷

https://p.dw.com/p/3MJkl
ছবি: Mustafiz Mamun

কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন হুমায়ূন৷ নিজের গড়ে তোলা গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন তিনি৷

হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠতা ছিলো সময়ের আরেক জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের৷ হুমায়ূনের স্নেহধন্য মিলন বলেন, ‘‘ব্যক্তি হুমায়ূন খুব উদার ছিলেন, পাশাপাশি বদরাগীও ছিলেন৷ মানুষের প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা ছিলো৷ বন্ধুদের খুব ভালোবাসতেন, আড্ডা দিতে ভালোবাসতেন৷''

হুমায়ূনের মৃত্যুর সাত বছর পেরিয়ে গেলেও একজন বড় লেখকের মৃত্যু নেই বলে মনে করেন উপন্যাসিক ইমদাদুল হক মিলন৷ হুমায়ূন তাঁর লেখার মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকবেন বলেও বিশ্বাস করেন তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘শারীরিকভাবে তিনি নেই৷ তারপরেও তিনি আছেন খুব বড় ভাবে৷ এটাই একজন লেখকের সার্থকতা৷ হুমায়ূন আহমেদ একজন বড় লেখক, তিনি প্রমাণ করলেন মৃত্যুর পরেও তাঁর জনপ্রিয়তায় বিন্দুমাত্র ভাটা পড়েনি৷''

প্রজন্মের পর প্রজন্ম হুমায়ূনের লেখার খোঁজ খবর করবেন: ইমদাদুল হক মিলন

মিলন জানান, হুমায়ূনের সৃষ্ট মিসির আলি, হিমু এক শ্রেণির পাঠকের কাছে দারুণ জনপ্রিয়৷ কিন্তু এর বাইরেও তিনি কিছু অসাধারণ উপন্যাস লিখেছেন, যেগুলোর কথাও ঘুরে ফিরে আসে মানুষের মুখে৷

হুমায়ূন সম্পর্কে নিজের মূল্যায়ন প্রসঙ্গে মিলন বলেন, ‘‘তাঁর (হুমায়ূন আহমেদ) ‘মধ্যাহ্ন' উপন্যাসটি আমার কাছে অতুলনীয় মনে হয়৷ ‘জোছনা ও জননীর গল্প', ‘মাতাল হাওয়া', কিংবা ‘কে কথা কয়', অথবা তাঁর প্রথম দুটো উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে' আর ‘শঙ্খনীল কারাগার' এবং মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসগুলো, যেমন ‘আগুনের পরশমনি'-এসব লেখা মিলিয়ে হুমায়ূন আহমেদ আসলে বাংলা সাহিত্যে সারাজীবনই টিকে থাকবেন৷ তাঁর কোনো ক্ষয় নেই৷''

হুমায়ূনের লেখা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে মিলন বলেন, লেখার মধ্যে গভীর মমত্ববোধ ছিল৷ মানুষের জন্য মায়া ছিল৷ চোখে জল ছিল, আবেগ ছিল৷ হিউমার ছিল-বহু কিছু নিয়ে হুমায়ূন আহমেদ৷ এই কথাসাহিত্যিক মনে করেন, প্রজন্মের পর প্রজন্ম হুমায়ূনের লেখার খোঁজ খবর করবেন এবং তাঁর লেখা আগ্রহ নিয়েই পড়বেন৷

নির্মাতা পরিচয়টিও হুমায়ূন আহমেদকে এনে দিয়েছে দারুণ খ্যাতি৷ সেই জগতে হুমায়ূনের সঙ্গী ছিলেন, জনপ্রিয় অভিনেতা জাহিদ হাসান৷ বরেণ্য এই কথাসাহিত্যিককে নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা হয় জাহিদ হাসানের৷

হুমায়ূন ভাই রাইটার হিসেবে যত বড়, ডিরেক্টর হিসেবে তত বড় না: জাহিদ হাসান

জাহিদ হাসান বলেন, হুমায়ূনের সঙ্গে তাঁর ছিল বড়ভাই, বাবা কিংবা বন্ধুস্থানীয় একটা সম্পর্ক৷ তবে ভাই বলেই ডাকতেন হুমায়ূনকে৷ এই অভিনেতা মনে করেন, তাঁর ক্যারিয়ারের জন্য সবচেয়ে বড় অবদান হুমায়ূন আহমেদের৷ দিয়েছেন নানামুখী চরিত্রে কাজের সুযোগ৷ ‘‘এই ঋণ আমি কখনো শোধ করতে পারবো না, ব্যক্তি হুমায়ূন আহমেদের কাছে, কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের কাছে, ডিরেক্টর হুমায়ূন আহমেদের কাছে''-বললেন জাহিদ হাসান৷

এই অভিনেতা জানান, তিনি খুব আবেগপ্রবণ মানুষ ছিলেন, আবার চট করে রেগে যেতেন৷ তবে উপভোগ করতেন আড্ডা৷ কিন্তু কখনো নষ্টামি পছন্দ করতেন না, বলেও জানান জাহিদ৷

জাহিদ হাসান জানান, হৃদয় কী কথা বলে-সেটা টের পেতেন হুমায়ূন আহমেদ৷ উদাহরণ টেনে জাহিদ শোনালেন তাঁর জীবনের গল্প৷ আগ্রায় হবে ইয়ানির কনসার্ট৷ কয়েকজন যাবেন সেখানে৷ ইচ্ছে থাকলেও জাহিদ পারছেন না৷ কারণ, আর্থিক সঙ্গতি ছিলো না৷ কিন্তু বিষয়টি ঠিকই বুঝলেন হুমায়ূন৷ একদিন জাহিদকে ডেকে এনে, তাঁর হাতে ধরিয়ে দিলেন বিমানের টিকিট, অনুষ্ঠানের টিকিট৷ করে দিলেন থাকার ব্যবস্থা৷

আরেকদিন হোতাপাড়া থেকে অনেক দূরে শুটিংয়ের কাজে রাতে ছিলেন পুরো ইউনিট৷ রাত সাড়ে ১২টার দিকে হুমায়ূন জানতে চাইলেন, কী অবস্থা? জাহিদ হাসান বলে বসলেন, আম খেতে ইচ্ছে করছে৷ নানা কাহিনি করে গাজীপুর থেকে আম জোগাড় করে আনালেন হুমায়ূন৷ ততোক্ষণে ঘুমিয়ে গেছেন জাহিদ৷ রাত দুটার দিকে, ঘুম ভাঙিয়ে আম খেলেন তাঁরা৷ তাই হুমায়ূনের কাছে জাহিদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই৷

নির্মাতা হুমায়ূন আহমদকে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে, অভিনেতা ও নির্মাতা জাহিদ হাসান অকপটে বললেন, ‘‘হুমায়ূন ভাই রাইটার হিসেবে যত বড়, ডিরেক্টর হিসেবে তত বড় না৷ হুমায়ূন ভাই টেকনিক্যাল জিনিসটা বুঝতেন না৷'' তবে, এগিয়ে রাখলেন চরিত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে৷ জাহিদ জানান, অভিনয়ের স্বার্থে চরিত্রের বিশ্লেষণে দুর্দান্ত ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ৷

সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকীতে নুহাশপল্লী সূত্রে জানা গেছে, সকাল থেকে কোরানখানির আয়োজন করা হয়েছে৷ হুমায়ূনের আত্মার মাগফিরাত কামনায় হয়েছে দোয়া মাহফিল৷ দুপুরে এলাকার শিশুদের খাওয়ানো হয়েছে খাবার৷

বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় এই কথাশিল্পী এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের জন্ম হয় নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে৷ দিনটি ছিল ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর৷ তিনি ছিলেন একাধারে উপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, শিক্ষাবিদ, নাট্যকার ও গীতিকার৷ বাংলা সাহিত্যে সায়েন্স ফিকশনের পথিকৃৎ বলা হয় তাঁকে৷ পরিচালনায় হাত দিয়েও পেয়েছেন সাফল্য৷ তাঁর বেশ কিছু গ্রন্থ পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে শিক্ষকতাও করেছেন এই কথার জাদুকর৷ তবে লেখালেখির স্বার্থেই ছেড়েছেন শিক্ষকতার কাজ৷

সত্তর দশকের শেষভাগ থেকে শুরু করে আমৃত্যু তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী৷ এই কথাসাহিত্যিকের জনপ্রিয়তায় কখনোই আসেনি ভাটার টান৷ এখনও তাঁর গল্প-উপন্যাস পাঠকদের কাছে সমান জনপ্রিয়৷ তাঁর তৈরি হিমু, মিসির আলী ও শুভ্র চরিত্রগুলো তরুণদের কাছে বেশ প্রিয়৷