1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘হিংসাত্মক মনোভাব ছিল, আছে, বাড়ছে’

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৮ আগস্ট ২০২০

সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ করলে অবশ্যই লাভ হয়৷ এমনটাই মনে করেন আমরাই বাংলাদেশের সহ-প্রতিষ্ঠাতা আরিফ আর হোসেন৷ 

https://p.dw.com/p/3hcSG
ছবি: Privat

ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, করোনার কারণে মানুষ ডিপ্রেশনে আছেন৷ এখন হুট করেই রেগে যাচ্ছেন৷ মানুষের মধ্যে যে হিংসাত্মক মনোভাব সেটা আগেও ছিল, এখন দিন দিন সেটা বাড়ছে৷

ডয়চে ভেলে : সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা কিছু বিষয়ে প্রতিবাদ করেন, কিছু বিষয়ে করেন না৷ কারণ কী?

আরিফ আর হোসেন : আমার কাছে মনে হয় এটা মানসিক ব্যাপার৷ অনেকে মনে করেন, কেউ এগিয়ে আসলে আমি এগিয়ে আসব৷ এই কেউটা যে কাউকে হতে হবে৷ কেউ মনে করে না যে আমি এগিয়ে আসলে আরেকজন এগিয়ে আসবে৷ অনেকেই মনে করে এটা নিয়ে প্রতিবাদ করা উচিৎ, কিন্তু মনে করে না আমারই প্রতিবাদ করা উচিত৷ দ্বিতীয়ত, প্রতিবাদের রেজাল্ট যে খুব ভালো হচ্ছে, সেটাও না৷ আমি নিজেও প্রতিবাদ করছি না, যে আমরা নিজের দুইটা মেয়ে আছে৷ আমরাও এটাও দেখি না যে, প্রতিবাদের কারণে কেউ তাকে অ্যাপ্রিশিয়েট করেছে৷ আবার কেউ প্রতিবাদ করলে সেখানে বিতর্ক শুরু হয়ে যায়৷ আমাদের কাছে কিন্তু এমন কোন সাকসেস স্টোরি নেই যে, প্রতিবাদের কারণে সফল হয়েছে এবং মানুষের বাহবাও পেয়েছে৷

মানুষ আসলে কী দেখে প্রতিবাদের সিদ্ধান্ত নেয়? প্রতিবাদ করলে কি কোনো লাভ হয়?

প্রতিবাদ করলে নিঃসন্দেহে লাভ হয়৷ সামাজিক মাধ্যমে যেটা দেখা যায়, আপনি একটা প্রতিবাদ করলে এর কাউন্টার প্রতিবাদও দেখা যায়৷ এই কারণে অনেকে তর্কে জড়াতে চান না৷ আজই একটা জিনিস ভাইরাল হয়েছে, সেটা হলো যশোরের একজন ভদ্রমহিলা মটরসাইকেলে করে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন৷ আমি শিওর যাদের মেয়ে আছে তারা, বিশেষ করে আমার দুইটি মেয়ে আছে আমিও এই কনসেপ্টটা লাইক করেছি৷ আমি এটা নিয়ে লিখতে ভয় পাচ্ছি বা ভয় না পেলেও ভাবছি এটা নিয়ে লিখলে যারা গোড়া মুসলিম তারা এটা নিয়ে কথা বলবে৷ এই যে দ্বিধা, এটার কারণেই আমরা পিছিয়ে পড়ছি৷ কিন্তু প্রতিবাদ করলে লাভ হয় কি-হয় না সেটা বলার অপেক্ষাই রাখে না৷ অবশ্যই লাভ হয়৷ আরেকটা হল কি দেখে প্রতিবাদ করে? এটা শিক্ষাগত যোগ্যতা, সোশ্যাল ভিউ অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে৷ আমি একটা ঘটনা যেভাবে দেখবো, গ্রামের একটা ছেলে সেভাবে দেখবে না৷ ইংলিশ মিডিয়ামের একটা ছেলে যেভাবে দেখবে, মাদ্রাসার একটা ছেলে সেভাবে দেখবে না৷

‘শিশির প্রথম যে স্ট্যাটাস দিয়েছেন আমি তা অ্যাপ্রিশিয়েট করি’

যারা সাকিবের মেয়ের ছবিতে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছে তারা তো খারাপ কাজ করেছে৷ কিন্তু যারা এটার প্রতিবাদ করছিলেন তাদেরকে নিবৃত্ত করেছেন সাকিবের স্ত্রী৷ তিনি কি ঠিক করেছেন? 

বিষয়টা আসলে ডিবেটেবল৷ শিশির প্রথম যে স্ট্যাটাস দিয়েছেন আমি তা অ্যাপ্রিশিয়েট করি৷ তিন বলেছেন, অনেক মানুষের মধ্যে দুই-চার জন কি বলল সেদিকে মনোযোগ দেওয়ার দরকার নেই৷ কিন্তু পরে তিনি যেটা বলেছেন, আমার পরিবারের সঙ্গে যেটা হচ্ছে সেটা নিয়ে কারো মাথা ঘামানো লাগবে না৷ আমার মনে হয়, এটা সে একটু বেশিই বলে ফেলেছে৷ আমার কাছে ভালো লাগেনি৷

সোশ্যাল মিডিয়া কী মানুষের মনে হিংসাত্মক মনোভাব জাগাচ্ছে?

আমাদের এখানে দেখবেন সোশ্যাল মিডিয়ায় যে জিনিসটা থাকে ম্যানার সেটা আমরা শিখিনি৷ স্কুল-কলেজে আমরা এটা শিখিনি৷ এমনকি আমাদের কোন আইডল নেই, যাকে দেখে শিখব৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় কি করতে হবে না হবে সেটা আমরা কোথাও শিখিনি৷ করোনার কারণে মানুষ যে পরিমান ডিপ্রেশনে আছে, তাতে দেখা যাচ্ছে সে হুট করে রেগে যাচ্ছে, রিঅ্যাক্ট করছে৷ হিংসাত্মক মনোভাব আগেও ছিল, এখন কেন জানি মনে হচ্ছে দিন দিন বাড়ছে৷

সার্বিকভাবে মানুষের মনে সোশ্যাল মিডিয়া কেমন পরিবর্তন আনছে?

যদি খোলামেলা বলি, সার্বিকভাবে ভাল পরিবর্তন আনছে৷ একটা উদাহরণ না দিলেই নয়, দুই দিন আগে আমরা একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম গত মে মাসে আম্ফানে ৪০ লাখ গাছ পড়ে গেছে৷ এ বছর যেহেতু স্বাধীনতার ৪৯ বছর তাই আমরা উপকূলে ৪৯ হাজার গাছ লাগাবো তাও ৪৯ মিনিটে৷ এই স্ট্যাটাসের আধা ঘন্টায় প্রায় ২২ লাখ টাকা উঠেছে৷ এটা একটা উদাহরণ৷ এমন হাজারো উদাহরণ আছে৷ মানুষ আসলে বসে আছে, ভালো কাজে সহযোগিতা করার জন্য৷ আবার সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে খারাপ কাজও হচ্ছে৷ রামুর ঘটনা ঘটেছে৷ আসলে পজেটিভ-নেগেটিভ দুই দিকই আছে৷ আমার মনে হয়, পজেটিভ দিকই বেশি৷ 

সোশ্যাল মিডিয়ার বিষয় দিয়ে কী বাস্তব চিত্র বোঝা যায়?

না৷ সোশ্যাল মিডিয়া দিয়ে মোটেই বাস্তব চিত্র বোঝা যাচ্ছে না৷ আপনি কারো ওয়াল পর্যবেক্ষণ করে বলতে পারবেন না সে লোকটা ভালো না খারাপ৷ সে শিক্ষিত না অশিক্ষিত৷ এখানে আসলে একটা আর্টিফিশিয়াল বিষয় থেকে যায়৷

এখন করোনার বিভিন্ন বিষয়ে ফেসবুকে সমালোচনা হচ্ছে৷ আপনার কী মনে হয় এগুলো ইচ্ছা করলেই দূর করা সম্ভব?

আসলে সমালোচনা দূর করার কোন উপায় নেই৷ আমার মনে হয়, সমালোচনা হওয়া দরকার৷ আমার দৃষ্টিতে সমালোচনা বৃষ্টির পানির মতো৷ এটা একটা গাছকে বেড়ে উঠতে সহায়তা করবে, উপড়ে ফেলতে না৷ আমরা যে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে নিয়ে সমালোচনা করছি, বা অন্য কাউকে নিয়ে সমালোচনা করছি, পজেটিভ সমালোচনা সবসময়ই গ্রহণযোগ্য৷ আমি বিশ্বাস করি, সরকার পজেটিভ সমালোচনাকে অ্যাপ্রিশিয়েট করে বা করা উচিত৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রথমদিন পিপিপি বলেছেন৷ এরপর কিন্তু উনি আর পিপিপি বলেননি৷ এর কারণ একটা হতে পারে সোশ্যাল মিডিয়ায় এটা নিয়ে সমালোচনা হওয়ার পর উনি পজেটিভলি নিয়েছেন৷ এমন অনেক ঘটনা আছে, যেগুলো একটা ইমপ্যাক্ট ফেলতে সহযোগিতা করছে৷

বিতর্কিত বিষয়গুলো কী সোশ্যাল মিডিয়া কর্তৃপক্ষ আগেই মুছে দিতে পারে? আর মুছে দিলে কী ভাল না খারাপ হবে?

মুছে দিতে পারে৷ কিছু কিওয়ার্ড আছে সেগুলো ব্যবহার করে মুছে দিতে পারে৷ কিন্তু এটা মুছে দিলে ভালো হবে না, খারাপ হবে সেটা নিয়ে বিতর্ক আছে৷ আসলে আমরা যারা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করি, তারা ম্যানারগুলো জানি না৷ আমরা যেটাকে ফ্রিডম অব স্পিচ বলি, অনেক সময় সেটা হেট স্পিস হয়ে যাচ্ছে৷ তাই আমার মনে হয়, রেগুলেটরি বডির সম্পৃক্ততা দরকার৷ কোন সংস্থা যদি কিছু কিওয়ার্ড মুছে দেয়, সেটা নিয়ে যদি তর্ক বিতর্ক এগুতে না দেয় সেটা আমার মনে হয় বৃহত্তর স্বার্থেই করা হয়ে থাকে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য