1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হাসিনাকে খালেদার উকিলের নোটিশ, পাল্টা হুমকি

সমীর কুমার দে
২০ ডিসেম্বর ২০১৭

বিদেশে সম্পদ নিয়ে বক্তব্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উকিলের নোটিশ পাঠিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া৷ তাতে বলা হয়েছে, ঐ বক্তব্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ‘নিঃশর্ত ক্ষমা' চাইতে হবে ৷

https://p.dw.com/p/2pi1R
Kombobild Khaleda Zia und Sheikh Hasina
ছবি: Getty Images/AFP/FARJANA K. GODHULY

নোটিশে আরো বলা হয়, ৩০ দিনের মধ্যে এমনটা করা না হলে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ নোটিশটি শেখ হাসিনার হাতে পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই বুধবার সকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, খালেদা জিয়ার পক্ষে তাঁর আইনজীবী মাহবুবউদ্দিন খোকন মঙ্গলবার ডাক যোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ের ঠিকানায় ওই নোটিশ পাঠিয়েছেন৷ প্রসঙ্গত, সম্প্রতি দেশের কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে বিদেশি একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে একটি খবর প্রকাশিত হয়৷ সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশে দুর্নীতি মামলায় বিচারের মুখে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে সৌদি আরবে৷

Bodiul Alam Mojumdar - MP3-Stereo

এর কিছুক্ষণ পর বিকেলে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনকরেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী৷ তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে ৩০ দিনের মধ্যে ক্ষমা চাইতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার পাঠানো উকিলের নোটিশ প্রত্যাহার না করা হলে এর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ তিনি বলেন, ‘‘খালেদা জিয়া আইনি নোটিশ দিয়েছে৷ আমরা আইনিভাবেই এর মোকাবিলা করব৷''

রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুজন-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ক্যানসার হলে সেটার ঠিকমতো চিকিৎসা করানো না হলে শরীরে পচন ধরে৷ আমাদের রাজনীতিতেও পচন ধরেছে৷ সে কারণেই আমরা এ সব দেখছি৷ আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রী যে অভিযোগ করেছেন সেটা তিনি প্রমাণ করুন, তাহলে আমরা খালেদা জিয়ার সর্বোচ্চ শাস্তি চাইব৷ আর যদি প্রমাণ করতে না পারেন তাহলে বলব, রাজনীতিবিদদের দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কথা বলা উচিত৷ হুট করে আরেকজন রাজনীতিবিদের চরিত্র হরণ না করাই ভালো৷''

Mahahub Uddin Khakon - MP3-Stereo

গত ৭ ডিসেম্বর গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সৌদি আরকে খালেদা জিয়ার কত কী রয়েছে সেটা কেন শুধু দু'টি সংবাদপত্র ও দু'টি টেলিভিশনে প্রকাশ করা হলো? কেন অন্য সংবাদমাধ্যমগুলো তা প্রকাশ ও প্রচার করল না – সেই প্রশ্ন তুলে উষ্মা প্রকাশ করেন তিনি৷ প্রধানমন্ত্রী অনেকটা ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘‘সৌদি আরবে যে বিশাল শপিং মল পাওয়া গেল, এটা তো আমরা বলিনি৷ এই খবর দেওয়ার কোনো আগ্রহ দেখলাম না৷'' সম্পাদকরা বিনা পয়সায় শপিং করার কার্ড পেয়েছেন কিনা, সেই কারণে খবরটি চেপে গেছেন কিনা – এমন প্রশ্নও তিনি সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সিনিয়র সাংবাদিকদের সামনে তোলেন৷ পরদিন এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘এই মানহানিকর তথ্য প্রচারের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন৷ অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আমরা বাধ্য হবো৷'' এর ১১ দিন পর খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে উকিল নোটিশ পাঠানো হলো৷

নোর্টিস প্রদানকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো নোটিশে বলা হয়েছে, আপনি বেগম খালেদা জিয়া এবং তাঁর পুত্রদের সম্পর্কে যে অভিযোগ এনেছেন তা সাজানো বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিদ্বেষমূলক৷ বাংলাদেশের নির্দোষ ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি সম্পন্ন সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা হিসেবে বেগম খালেদা জিয়ার সুনাম বিনষ্ট করার হীন উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে আপনি এ সব অভিযোগ এনেছেন৷ প্রধানমন্ত্রীর ঐ বক্তব্যের কারণে খালেদার জিয়ার ‘অপূরণীয় লোকসান ও ক্ষতি' হয়েছে দাবি করা হয়েছে৷ আমরা প্রধানমন্ত্রীকে বেগম খালেদা জিয়ার নিকট নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করার আহ্বান জানিয়েছি৷''

Hasan Mahamud MP - MP3-Stereo

প্রধানমন্ত্রী তো বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের উদ্ধৃতি দিয়ে কথাটি বলেছেন? তাহলে সেই সব সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন কি না – এমন প্রশ্নের জবাবে জনাব খোকন বলেন, ‘‘যার মুখ থেকে কথাটা এসেছে আমরা তাঁকে নোটিশ পাঠিয়েছি৷ তিনি যদি বলেন, সংবাদমাধ্যমের কারণে তিনি এ কথা বলেছেন – তাহলে আমরা ঐ সব সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দিকে যাব৷ আগে তো প্রথম চিঠির জবাব আসুক তারপর দেখা যাবে৷''

আওয়ামী লীগের অন্যতম মুখপাত্র ও প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যে সময় খালেদা জিয়া ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতি দেশে-বিদেশে ফলাও করে প্রচার হচ্ছে, দুর্নীতির মামলায় তাঁদের শুনানি চলছে, ঠিক এই সময়ে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই খালেদা জিয়া আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন৷ তিনি শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছেন৷ খালেদা জিয়াকে আমরা বলতে চাই, অবিলম্বে এই আইনি নোটিশ প্রত্যাহার করতে হবে৷ তা না হলে, এর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷'' তিনি বলেন, ‘‘আমরা সরকারকে বলেছি, তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এসেছে সেটার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হোক৷''