হারে বিপর্যস্ত কংগ্রেস, ইস্তফার প্রস্তাব সোনিয়ার
পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর কংগ্রেসে আবার প্রবল ডামাডোল। ইস্তফা দিতে চাইলেন সোনিয়া, রাহুল, প্রিয়াংকা। তবে তা গৃহীত হয়নি। সোনিয়াকেই আবার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
কংগ্রেসের অবস্থা
পরপর দুইটি লোকসভা নির্বাচনে বিপর্যয় হয়েছে। তারপর একের পর এক বিধানসভা নির্বাচনে হারতে হয়েছে কংগ্রেসকে। গান্ধী পরিবার আর কংগ্রেসকে জেতাতে পারছে না। দলের মধ্যে প্রবীণ নেতারা একজোট হয়ে গান্ধী পরিবারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। আলাদা দল করার চিন্তাভাবনা চলছে। সবমিলিয়ে দেশের সবচেয়ে পুরনো দলের অবস্থা খুবই খারাপ।
ইস্তফা দিতে চাইলেন সোনিয়ারা
পাঁচ রাজ্যে হারের পর কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির দীর্ঘ বৈঠক হয়। রীতিমতো উত্তপ্ত আলোচনা হয়েছে সেখানে। বৈঠকে সোনিয়া গান্ধী বলেন, কংগ্রেসের জন্য তিনি, তার ছেলে রাহুল ও মেয়ে প্রিয়াঙ্কা আরো একবার ত্যাগস্বীকার করতে রাজি। তারা সকলে এই হারের দায় নিয়ে ইস্তফা দিতে চান। তারা কেউ আর কোনো পদে থাকবেন না। নতুন নেতা নির্বাচন করা হোক
সোনিয়াকেই দায়িত্ব
ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যরা সোনিয়ার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সোনিয়াই দলের কার্যকরি সভাপতি থাকবেন। তিনি দলের পুনর্গঠনের জন্য যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবেন। কংগ্রেসের হাল ফেরানোর জন্য যা করার দরকার তিনিই করবেন।
রাহুল গান্ধী: পদ নেই, নিয়ন্ত্রণ আছে
কংগ্রেসে রাহুল গান্ধীর কোনো পদ নেই। কংগ্রেস সূত্র জানাচ্ছে, এখনো দলে তার কথাই শেষ কথা। তিনিই প্রতিটি নির্বাচনে প্রধান প্রচারকারী। সোনিয়া স্বাস্থ্যের কারণে আর প্রচারে যান না। রাহুলই সেটা সামলান। এবার প্রিয়াঙ্কাকে উত্তরপ্রদেশ ছাড়াও অন্য রাজ্যে প্রচার করতে দেখা গেছে। প্রতিবার হারার পর রাহুল বলেন, তিনি ও দল এই হারের থেকে শিক্ষা নেবেন। কিন্তু তারপরেও প্রতিটি নির্বাচনে একই ছবি দেখা যাচ্ছে।
প্রিয়াঙ্কা পারলেন না
প্রিয়াঙ্কার উপর উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব ছিল। তিনি সেখানে মেয়েদের ভোট পেতে স্লোগান দিয়েছিলেন, লড়কি হুঁ, লড় সাকতি হুঁ। মেয়েদের ঢালাও প্রার্থী করেছিলেন। সবচেয়ে বেশি জনসভা তিনি করেছেন। তারপরেও দেখা গেল, ৯৭ শতাংশ আসনে কংগ্রেস প্রার্থীদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। যাকে একসময় কংগ্রেস নেতারা ব্রক্ষ্মাস্ত্র বলতেন, সেই প্রিয়াঙ্কা শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ।
কংগ্রেসের হাতে
কংগ্রেস এখন রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ে ক্ষমতায় আছে। আর মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডে তারা জোটের সঙ্গে ক্ষমতায় আছে। ভারতে আর কোনো রাজ্যে কংগ্রেস ক্ষমতায় নেই। কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি পাঞ্জাব এখন আপের দখলে। এবার গোয়া, উত্তরাখণ্ড, মণিপুর, উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস ব্যর্থ হয়েছে। উপরের ছবিটি রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের।
রাজ্যসভায় শক্তি কমবে
যত রাজ্য কংগ্রেসের হাতছাড়া হচ্ছে, ততই রাজ্যসভায় তাদের শক্তি কমছে। এখনো রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতার পদ কংগ্রেসের হাতে, কিন্তু তা অদূর ভবিষ্যতে হাতছাড়া হতে পারে। কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, হিমাচল, হরিয়ানা সহ বহু রাজ্যে তাদের হাতছাড়া হয়েছে। হারের এই মিছিল চলতে থাকলে তাদের অবস্থা ভবিষ্যতে আরো খারাপ হতে বাধ্য।
কংগ্রেসে বিদ্রোহ
বেশ কিছুদিন হলো, প্রবীণ নেতারা গান্ধী পরিবারের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ। মোট ২৩ জন নেতা এই বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীতে আছেন। তাদের বলা হয়, কংগ্রেসের জি২৩। এর মধ্যে গুলাম নবি আজাদ, কপিল সিবাল, আনন্দ শর্মারা আছেন। গত দুইদিনে তারা দুইবার মিলিত হয়েছেন। ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তারা আলাদা দল গঠন করতে পারেন বলেও কংগ্রেস নেতাদের একাংশ মনে করছেন। উপরের ছবিটি গুলাম নবি আজাদের।
চিদাম্বরমের বক্তব্য
সাবেক মন্ত্রী ও প্রবীণ কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরম বলেছেন, পাঞ্জাবে আপ ও পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে, সেই জোটে জুনিয়ার পার্টনার হয়ে চলতে হবে কংগ্রেসকে। তার এই স্বীকারোক্তি কংগ্রেস মহলে আলোড়ন ফেলেছে।
কী হবে?
সোনিয়া গান্ধী হেরে যাওয়া পাঁচ রাজ্যের সভাপতিকে বরখাস্ত করেছেন। এর মধ্যে পাঞ্জাবে নভজ্যোত সিং সিধুও আছেন। কিন্তু কংগ্রেসেই প্রশ্ন উঠেছে, এই সিদ্ধান্ত কি যথেষ্ট? কংগ্রেস ও তার নেতাদের চাল-চরিত্র-চেহারা বদল না হলে দল কি আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? গান্ধী পরিবার কি দলকে জয়ের পথে আনতে পারবে? নাকি, এভাবেই ক্রমশ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে কংগ্রেস?