1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হারিয়ে যাচ্ছে গৌরিকাজল, সোনামুখী, জাদুর ফলা

২৪ ডিসেম্বর ২০১০

বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ধানিজমি৷ সেই সঙ্গে নানা প্রজাতির ধান৷ মূলত হাইব্রিড ধানে অধিক উৎপাদন, অধিক লাভ - এই ধারণা থেকেই পুরানো সেই ধানগুলোর দেখা মিলছে না৷

https://p.dw.com/p/zp8p
হারিয়ে যাচ্ছে ধানছবি: picture-alliance/dpa

একটা ধাঁধাঁ দেয়া যাক আপনাকে৷ আচ্ছা, দশ রকমের ধানের নাম বলুন তো? পারবেন কি সেই ধাঁধাঁর উত্তর দিতে৷ হয়ত কেউ কেউ পারবেন৷ আবার অনেকে এক দুই তিন করে গোটা চারেক নাম বলার পর যাবেন থেমে৷ আর চালিয়ে যাওয়ার তো কোন কারণ নেই৷ কারণ, যে বাংলাদেশে এক সময় ছিল ১৫ হাজার জাতের ধান, সেই দেশে এখন টিকে আছে কেবল কয়েকটি প্রজাতি৷ যা আঙুলের দাগ গুণেই বলে দিতে পারেন আপনি৷

স্থান ও অঞ্চল ভেদে এসব দেশীয় জাতের ধানের রয়েছে বিভিন্ন নাম, গুণ ও বৈশিষ্ট্য৷ দেশের সব অঞ্চলেই একসময় দেশীয় ধানের চাষ হতো৷ নবান্নের উৎসবের সঙ্গে সঙ্গে গ্রামের ঘরে ঘরে চিড়া-মুড়ি ও পিঠা-পায়েস তৈরির উৎসবও চলতো ধুমধামের সঙ্গে৷ তবে আশার কথা হচ্ছে. গ্রামের অনেক এলাকায় প্রবীণ কৃষকরা এখনো এসব প্রাচীন জাতের ধান চাষ ধরে রেখেছেন৷

Ein Handvoll Reis
কমে যাচ্ছে দেশীয় ধানের চাষছবি: AP

কিছু ধানের নাম

চলুন এবার কিছু ধানের নাম শুনি৷ গৌরিকাজল, ধলাকান্দি, মহিষকান্দি, লক্ষিণতা, নোড়ই, সাটো, পরাঙ্গি, দীঘা, হাসবুয়ালে, ভোড়োনটা, মানিকদীঘা, খৈয়ামটর, হাসিকলমি, দলকচু, পঙ্খিরাজ, গড়েশ্বর, বাশিরাজ, ঝিঙেঝাল, ঝিঙেশাল, দেবমণি, দুধমণি, কালাবয়রা, ধলাবয়রা, গন্দকোস্তের, আশ্বিনা-দীঘা, আশ্বিনা মালভোগ, দুধকলম, কাজলাদীঘি, কালোজিরা, নাজিরশাইল, বালামকাপো, সোনারগাঁ, গাজিরভোগ, টেপা, হরিণমুদা, রাজাশাল, কাটারিভোগ, বাদশাভোগ, সোনামুখী, জাদুর ফলা৷ যে নামগুলো এতক্ষণ বললাম সেগুলো এখন বিলুপ্ত প্রায়৷

কিন্তু কেন এমন হচ্ছে? কৃষি বিজ্ঞানীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেলো, ক্রমান্বয়ে জনসংখ্যার ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটলেও বাড়ছে না কৃষিজমি৷ফলে আবাদী ধানের ক্ষেতসহ বিভিন্ন কৃষিজমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে৷এতে করে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অল্প জমিতে বেশি পরিমাণ ধান উৎপাদনের জন্য দেশের মানুষ উচ্চ ফলনশীল ধান চাষের দিকে ঝুঁকছেন৷ ফলে দেশীয় ধানের চাষ এখন আর খুব একটা দেখা যায় না৷ তাহলে কি এ নিয়ে কোন উদ্যোগ নেই? কথা বলছিলাম বাংলাদেশের কৃষি বিষযক জনপ্রিয় অনুষ্ঠান হৃদয়ে মাটি ও মানুষের উপস্থাপক এবং চ্যানেল আই এর বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজের সঙ্গে৷ তিনি জানালেন, ‘‘সরকারি পর্যায়ে এই বিষয়ে খুব বেশি উদ্যোগ নেই৷ বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের কাছে কিছু ধান সংরক্ষিত আছে৷ এছাড়া ফিলিপাইন্সের আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের কাছেও কিছু জাত সংরক্ষিত রয়েছে৷ কিন্তু সেখানে কতগুলো রাখা আছে, সে সম্পর্কে স্বচ্ছ কোন ধারণা নেই৷ তবে ব্যক্তি পর্যায়ে কৃষকের কাছে কিছু কিছু সংরক্ষিত আছে বলেই আমরা জানতে পারছি৷ তবে দুই একটি বেসরকারি সংগঠনও এই ধরণের উদ্যোগ নিয়ে বীজ ব্যাংক গড়ে তুলছে৷''

শাইখ সিরাজ প্রসঙ্গত বলছিলেন বেসরকারি সংগঠনের কথা৷ এমনি একটি সংগঠনের নাম ‘নয়াকৃষি' আন্দোলন৷ তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সহায়তায় সেই ঐতিহ্যবাহী ধানের বীজ সংরক্ষণ করছেন৷ সেই সংগঠনের কর্মকর্তা সিমা দাস সিমু জানালেন, ‘‘বাংলাদেশে এক সময় পনের হাজার প্রজাতির ধান ছিল এখন তার অস্তিত্ব প্রায় নেই বললেই চলে৷ কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে আমরা আড়াই হাজার প্রজাতির ধানের বীজ সংগ্রহ করেছি, সেগুলো সংরক্ষণ এবং উৎপাদন করা হচ্ছে৷''

‘নয়াকৃষি'র উদ্যোগে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে টাঙ্গাইলে হয়ে গেলো ধান মেলা৷ বাংলাদেশে এটাই এই ধরণের প্রথম মেলা৷

প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক