1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হামবড়া ভাব ঝেড়ে ফেলুন, অর্থমন্ত্রী

৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বুধবার সাংসদদের মনে করিয়ে দিয়েছেন, সম্প্রতি তিনি বিশ্বের সেরা অর্থমন্ত্রী হয়েছেন৷ অথচ মাননীয় অর্থমন্ত্রী, আপনার কেন্দ্রীয় ব্যাংকই বলছে, দেশের অর্থনীতির সূচকগুলো ভালো নেই৷

https://p.dw.com/p/3XLtw
ছবি: bdnews24.com,

লন্ডনভিত্তিক ‘দ্য ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস’ গ্রুপের সাময়িকী ‘দ্য ব্যাংকার’ সম্প্রতি বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীকে ‘ফাইন্যান্স মিনিস্টার অব দ্য ইয়ার ২০২০’ ঘোষণা করে৷ এই তথ্যটিই বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংসদদের মনে করিয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী৷ কারণ তাঁরা তাঁর সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছিলেন৷ তাঁরা অর্থমন্ত্রীর আনা একটি বিলের বিরোধিতা করতে গিয়ে এই সমালোচনা করেন৷ ঐ বিলের মাধ্যমে স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যানশিয়াল কর্পোরেশনসহ স্ব-শাসিত সংস্থাগুলোর তহবিলের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দিতে বাধ্য করার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী৷ কণ্ঠভোটে বিলটি পাস হয়৷

পাঠকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, কেন আইন করে এসব প্রতিষ্ঠানকে সরকারি কোষাগারে টাকা দিতে বাধ্য করা হচ্ছে? সরকারি তথ্যের উল্লেখ করে প্রথম আলো পত্রিকা জানাচ্ছে, ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত গত ছয় মাসে সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৪৯ হাজার ১০৯ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে - যা পুরো অর্থবছরের জন্য যে ঋণ নেওয়ার কথা ছিল, তার চেয়ে বেশি! ফলে বাকি সময়ের জন্য সরকারের যে অর্থ লাগবে, সেটা আসবে কোথা থেকে?

বিরোধী সাংসদদের সমালোচনার প্রতিক্রিয়ার এক পর্যায়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি সারা বিশ্বের এক নম্বর অর্থমন্ত্রী৷’’

মাননীয় অর্থমন্ত্রী, আপনি বিশ্বের সেরা অর্থমন্ত্রী হয়েছেন- বাংলাদেশি হিসেবে এটা খুব গর্বের কথা৷ সেই সঙ্গে আপনার কাছ থেকে আমরা ভালো অর্থনীতি পাবো, সেই আশা তো করতেই পারি৷ কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এখন পর্যন্ত তা দেখতে পাচ্ছি না৷

উলটো বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, একমাত্র প্রবাসী আয় ছাড়া অর্থনীতির বাকি সূচকগুলোর অবস্থা খারাপ৷ প্রবাসী আয় বাড়াতে আপনি গত বাজেটে দুই শতাংশ নগদ প্রণোদনা দিয়েছেন৷ এই সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল কিনা, তা নিয়ে অর্থনীতিবিদরা প্রশ্ন তুললেও ‘দ্য ব্যাংকার’ সাময়িকী আপনাকে সেরার খেতাব দেয়ার সময় এই বিষয়টির উল্লেখ করেছে৷

এছাড়া আপনাকে সেরা বলতে আরও দুটি বিষয়ের উল্লেখ করেছে দ্য ব্যাংকার৷ এর মধ্যে একটি বিদেশি বিনিয়োগ৷ এটি আকৃষ্ট করতে আপনি নাকি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, বলছে সাময়িকীটি৷ অথচ ২০ জানুয়ারি প্রকাশিত জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার (আঙ্কটাড) ‘ইনভেস্টমেন্ট ট্রেন্ড মনিটর’ শীর্ষক প্রতিবেদন বলছে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশে মোট বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ৩৪০ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ৬ শতাংশের মতো কম৷

এছাড়া গত নভেম্বরে বিশ্বে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশি ‘টাকা বন্ড’ চালুর বিষয়টি উল্লেখ করেছে ‘দ্য ব্যাংকার’৷ একে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালের উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপ বলছে তারা৷ তবে বাংলাদেশের গণমাধ্যম জানাচ্ছে, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আট বছর ধরে এমন বন্ড ছাড়ার পরিকল্পনার কথা বলে আসছিলেন৷ এরপর ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ এর বার্ষিক সভা শেষে এই বন্ড ছাড়া হবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি৷ মুহিতের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পাওয়ার পরই বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) বাংলাদেশ সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পেশ করেছিল৷ এরপর পুরো প্রক্রিয়া শেষে গত নভেম্বরে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়৷

DW Bengali Mohammad Zahidul Haque
জাহিদুল হক, ডয়চে ভেলেছবি: DW/Matthias Müller

আবারও ফিরে আসি অর্থনীতির সূচকের কথায়৷ অর্থমন্ত্রী সংসদকে বলেছেন, একমাত্র রপ্তানি ছাড়া অন্য কোনো খাতে দেশ পিছিয়ে নেই৷ রপ্তানিতে খারাপ অবস্থার কথা তিনি স্বীকার করেছেন, এজন্য তাঁকে ধন্যবাদ৷ কিন্তু রপ্তানি আয় কতটা খারাপ অবস্থায় আছে? বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গতবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি কমেছে ৫ দশমিক ২১ শতাংশ৷ প্রথম আলোর প্রতিবেদক শওকত হোসেন অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের উপর এক বিশ্লেষণে লিখেছেন, ‘‘এবার যদি শেষ পর্যন্ত রপ্তানি আয়ের এই ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি বজায় থাকে, তাহলে তা হবে গত দশকের রেকর্ড৷ কেননা, এ সময়ের মধ্যে রপ্তানি আয়ের এই দশা আর দেখা যায়নি৷’’

রপ্তানি ছাড়াও আমদানি, মূলধনি যন্ত্র আমদানি, শিল্পের কাঁচামাল, রাজস্ব আয় ঘাটতি, সরকারের ঋণ, বেসরকারি খাতে ঋণ ইত্যাদি সূচকও খারাপ অবস্থায় আছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যাচ্ছে৷

সুতরাং মাননীয় অর্থমন্ত্রী, কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া খেতাব বা পুরস্কার নিয়ে হামবড়া ভাব না দেখিয়ে দেশের অর্থনীতিকে কীভাবে ভালো অবস্থায় নেয়া যায়, তা নিয়ে ভাবুন৷ মনে রাখবেন, এসব পুরস্কার কোনো বিশেষ অর্থ বহন করে না৷ আপনার আগে ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ২০১৮ সালে একই খেতাব পেয়েছিলেন৷ কিন্তু আমরা জানি, সেই সময় বা তার পরবর্তী সময়ে ভারতের অর্থনীতির মন্দা নিয়ে আলোচনা কম হয়নি৷