1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হানোফারে বাংলাদেশ ফোরামের সম্মেলন

দেবারতি গুহ২৯ অক্টোবর ২০০৮

জার্মানির অন্যতম বাণিজ্যিক শহর হানোফার৷ প্রতি দুবছর অন্তর সেখানে একটি সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ ফোরাম৷ বছর দুয়েক আগে প্রথমবারের মতো সেখানে অংশ নেই আমি৷ সাংবাদিক হিসেবে নয়, একজন নৃত্যশিল্পী হিসেবে৷

https://p.dw.com/p/Fhqu
জার্মানির অন্যতম বাণিজ্যিক শহর হানোফারছবি: picture-alliance/ dpa

কিন্তু, এখন তো আর আমি একজন শিক্ষানবিস সাংবাদিক নই৷ তাই এবার গিয়েছিলাম বাংলা বিভাগের কর্মী হিসেবে৷ তিনদিনব্যাপী এই নবম বাংলাদেশ সম্মেলনটির বিষয়বস্তু ছিল - সংলাপ ও মতবিনিময় : ইউরোপ এবং বাংলাদেশ৷ অর্থাত্, আগামী ১৮-ই ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনের আগে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশ এবং জার্মানি তথা ইউরোপের সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলি নির্দিষ্ট করাই ছিল এই সম্মেলনের মূলে৷

Bangladesch Tagung 2008 Hannover
অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল এর সঙ্গে আমিছবি: DW/Guha

আর সেই কাজটি করার একমাত্র মাধ্যম ছিল সংলাপ৷ বিশ্বের দুই প্রান্তের উদার প্রগতিমুখী কিছু মানুষ ঐ সংলাপে অংশগ্রহণ করেছিলেন৷ আলাপে-আলাপে সম্মেলনটি যেন পেয়েছিল একটি ভিন্ন মাত্রা৷ একটি ভিন্ন স্বাদ৷

দুদিনব্যাপী ঐ সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন ইউরোপবাসী বেশ কিছু প্রবাসী বাঙ্গালী৷ ইউরোপের বিভিন্ন সংগঠন এবং বাংলাদেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা৷ ছিলেন জার্মানির লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের সবুজ দলের মুখপাত্র থিলো হপে, মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধি বের্নহার্ড হ্যার্টলাইন, যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডস থেকে আসা লর্ড অ্যাভেবেরি, আইনজ্ঞ ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ আরো কতো কে৷

আলাপ হয়েছিল সম্মেলনের সংগঠক সরাফ উদ্দীন আহমেদ, বাংলাদেশ ফোরামের কর্মকর্তা ক্লাউস স্ট্রেম্পেল, চলচ্চিত্রকার শাহীন দিল-রিয়াজ, চিত্রকার ওয়াকিল আহমেদ, অর্থনীতিবিদ সুজিত চৌধুরী এবং আরো বহু মানুষের সঙ্গে৷

কিন্তু, ব্যক্তিগতভাবে যাদের দেখার জন্য, যাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছিলাম তারা হলেন - বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের আব্দুল্লাহ আবু সাইদ এবং বাংলাদেশের বিশিষ্ট আইনজীবী, ঢাকার আইন ও সালিশ কেন্দ্রর নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল৷

Bangladesch Tagung 2008 Hannover
বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের আব্দুল্লাহ আবু সাইদ এর সঙ্গে আমিছবি: DW/Guha

সারাদিন সংলাপ আর তত্ত্বের কচকচানির পর ১৮ তারিখ সন্ধ্যায় ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান৷ তার ঠিক আগেই ডয়চে ভেলের বাংলা ওয়েব সাইট-এর একটা ছোট্ট প্রেজেন্টেশন করি আমি৷ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগের প্রধান আব্দুল্লাহ আল-ফারুক, মারুফ আহমেদ এবং সঞ্জীব বর্মন৷ তার মধ্যে হয় কি, প্রেজেন্টেশন করতে করতে হঠাত্ দেখি দর্শকের মুখে কিকরম যেন একটা হাসি৷ ভাবলাম, কি হলো ? পিছনে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখি, একটা বেড়াল স্টেজের উপর থেকে হেঁটে যাচ্ছে৷ এতো হ য ব র ল-র মতো অবস্থা৷

ভয় পেলাম না৷ বললাম, ''তা বেড়ালও যদি ওয়েব সাইটে ক্লিক করতে এসে থাকে, তাহলে তাকে আমি স্বাগতই জানাই৷'' দর্শকরা এই কৌতুকে মজাই পান৷ তাই শেষ পর্যন্ত প্রেজেন্টেশনটা খারাপ হয় না৷ আর এরপর থাকে দর্শকদের জন্য একটা ধাঁধা-প্রতিযোগিতা৷ প্রশ্নটা ছিল - ডয়চে ভেলের বাংলা ওয়েবসাইটের ঠিকানা কি ? প্রশ্নটা খুব সহজ হলেও মাত্র তিনজন পুরস্কার পান৷

সে যাই হোক৷ সেই প্রেসেন্টেশনের পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান৷ যাতে দর্শকদের মধ্যে থেকে উঠে এসে আব্দুল্লাহ আবু সাইদ কৌতুক করেন, সুলতানা কামাল মজা করে বলেন সিলেটি একটা চুটকি৷ স্বরচিত কবিতা শোনান অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত, তাঁর ছোট ভাই দীপঙ্কর দাশগুপ্ত, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ-র কবিতা পড়ে শোনান আব্দুল্লাহ আল-ফারুক আর চীনে ভাষায় রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে শোনান সঞ্জীব বর্মন৷ এমনকি আমাকেও রুশ ভাষার একটা গান গাইতে হয়৷ গাই তার বাংলা অনুবাদটিও৷ অনুবাদক, আমার ছোটমামা ড. বিনায়ক সেনের কথা বলাতে আব্দুল্লাহ আবু সাইদ আর সুলতানা কামালের সঙ্গে আমার আলাপচারিতা আরো ব্যক্তিগত হয়ে ওঠে৷

যাদের কথা এতো শুনেছি তাদের সঙ্গে এতো কাছ থেকে, এতো সাবলিলভাবে কথা বলতে পেরে, একসময় ভুলেই যাই যে আর একটা দিন আগেও আমি এদের অপরিচিতই ছিলাম৷ তাদের কাজ সম্পর্কে, লেখা সম্পর্কে জানলেও, তাদেরকে তো আমি চিন্তাম না৷ হঠাত্ করেই যেন বুঝতে পারি সংলাপের আসল রহস্য৷ এ তো শুধু তত্ত্বকথা, শুধু মতবিনিময় নয়৷ সংলাপ যে মানুষের ভিতরটা খুলে দেয়, সহজ করে, আপন করে৷