1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
উদ্ভাবনকেনিয়া

হাত বুলিয়ে যে ছবির মর্ম বুঝতে হয়

১ ডিসেম্বর ২০২২

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের পক্ষে চোখে দেখে শিল্পকর্মের কদর করা কার্যত অসম্ভব৷ কেনিয়ার এক শিল্পী ছবির উপর ব্রেইল লিপিতে বার্তা লিখে সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলছেন৷ ছবি বিক্রির অর্থও তাদের কল্যাণে দান করছেন৷

https://p.dw.com/p/4KMJt
Afrimaxx, Tina Benawra, Braille, visually impaired, blind, Nairobi, Kenya, painting, art
ছবি: DW

নাইরোবি-ভিত্তিক টিনা বেনাভ্রা নামের শিল্পীর আঁকা ছবি দেখলে প্রথমে বেশ রঙিন ও উজ্জ্বল মনে হবে৷ কিন্তু সেগুলির মধ্যে এক গোপন রহস্য রয়েছে৷ টিনা বলেন, ‘‘আমার ছবির মধ্যেই বার্তা রয়েছে৷ ভালো করে খুঁটিয়ে দেখলে সারা ছবি জুড়ে ব্রেইল হরফে লেখা বার্তা খুঁজে পাবেন৷ তখন সম্পূর্ণ অন্ধ অথবা আংশিক অন্ধ মানুষ ছবির মাধ্যমে আমার লেখা বার্তা পড়ার চেষ্টা করতে পারেন৷''

উইনি ওংগোজি ২০১০ সালে নিজের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন৷ তাঁর কাছে টিনা বেনাভ্রার সৃষ্টিকর্মের মূল্যই আলাদা৷ উইনি বলেন, ‘‘সেখানে ভবন ও জানালা রয়েছে৷ ভবনটি ব্রেইল লিপিতে লেখা রয়েছে৷ মহাসাগরও ব্রেইল লিপিতে বর্ণনা করা হয়েছে৷ একই ভাবে মাছ, গাছ ও মানুষেরও উল্লেখ রয়েছে৷ ফলে আমি এ ভাবে ছবির বার্তা বোঝার সুযোগ পাচ্ছি৷''

ডটের মতো বিন্দুর উপর আঙুল বুলিয়ে ব্রেইল লিপি পড়া যায়৷ ঊনবিংশ শতাব্দীতে ফ্রান্সে লুই ব্রেইল এই লিপি সৃষ্টি করেন৷ তখন থেকেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য এই লিপি যোগাযোগের কার্যকর মাধ্যম এবং স্বাক্ষরতার অপরিহার্য হাতিয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে৷

ব্রেইল কোনো ভাষা নয়৷ বরং এটি এমন এক কোড যা দিয়ে অনেক ভাষা লেখা বা পড়া যায়৷ টিনা একমাত্র নিজের শিল্পকর্মে অন্তর্ভূক্ত করার লক্ষ্যে স্কুলে ব্রেইল শিখেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি ভিন্ন পন্থা গ্রহণ করার এবং ব্রেইল শেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম৷ কারণ মনে হয়েছিল, আমি এভাবে আরও মানুষের সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবো৷ তাদের জন্য স্পর্শ অপরিহার্য৷''

যে ছবি চোখে না দেখলেও উপভোগ করা যায়

গ্যালারি ও মিউজিয়ামে শিল্পকর্ম স্পর্শ করা দর্শকদের জন্য পুরোপুরি নিষিদ্ধ৷ কিন্তু বেনাভ্রার ছবি দর্শকদের ঠিক সেটাই করতে আহ্বান জানায়৷ এটা তাদের সম্পৃক্ত করার আর একটি ধাপ৷ উইনি ওংগোজি বলেন, ‘‘শিল্প হিসেবে টিনার ছবি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য আরও সহায়ক৷ কারণ সে নিজের ছবিতে ব্রেইল লিপি ব্যবহার করে৷ ফলে আমরা জগত সম্পর্কে ধারণা পাই, অনুভব করতে পারি৷ ব্রেইলের মাধ্যমে এই ছবি পড়ে জগত ভালো করে বুঝতে পারি৷''

বেনাভ্রাই সম্ভবত বিশ্বের একমাত্র শিল্পী, যেনি ব্রেইল পেইন্টিং পদ্ধতি ব্যবহার করেন৷ টিনা বেনাভ্রা বলেন, ‘‘সূচনার পেছনে আসলে কেনিয়ার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সম্প্রদায়কে আলাদা বা নিষ্ক্রিয় না করার ভাবনা কাজ করেছিল৷ আমরা খ্রিস্টান ব্লাইন্ড মিশন বা সিবিএম-এর সঙ্গে এক প্রকল্পের কথা ভেবেছিলাম৷ দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা, যাতায়াত বা সচেতনার ক্ষেত্রে শিল্পকে আনাই ছিল লক্ষ্য৷''

খ্রিস্টান ব্লাইন্ড মিশন ১৯৭০ সাল থেকে কেনিয়ায় অন্ধত্ব প্রতিরোধ, স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতি এবং প্রতিবন্ধী মানুষকে স্কুলে পাঠানোর উদ্যোগ চালিয়ে যাচ্ছে৷ ছবি বিক্রি করে বেনাভ্রা তাদের কাজে সহায়তা করতে চান৷ টিনা বেনাভ্রা বলেন, ‘‘আমি ডোনেশনের ভিত্তিতে ব্রেইল পেইন্টিং করি৷ আমি সেই অর্থ নেবার কথা ভাবতে পারি না বলে দান করি৷ নীতিগতভাবে আমি শিশুদের অপারেশন, ছানি সংশোধন বা চশমার জন্য দান করতে চাই৷ আমি সেটাই করি, বিক্রির অর্থ দান করি৷ ছবির সত্যি কোনো নির্দিষ্ট মূল্য থাকে না৷''

ডানিয়েলা শুলৎস/এসবি